অথবা, রুশাের সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে বৈসাদৃশ্য কী?
ভূমিকাঃ ফরাসি দার্শনিক রুশাের রাজনৈতিক দর্শনে তার সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। রুশাে তার ‘Social Contract’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, চুক্তির মাধ্যমে সমাজ সৃষ্টির অব্যবহিত পরে মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অর্থহীন হয়ে পড়ে। তখন মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা সমগ্র সম্প্রদায়ের ইচ্ছায় পরিণত হয় এবং এ থেকেই জন্ম নেয় সাধারণ ইচ্ছা।
সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার পার্থক্যঃ নিম্নে রুশাের সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যগুলাে আলােচনা করা হলােঃ
(১) লক্ষ্যগত পার্থক্যঃ রুশাের সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে লক্ষ্যগত পার্থক্য বিদ্যমান। সাধারণ ইচ্ছার লক্ষ্য সাধারণ বা সমষ্টিগত স্বার্থ। অন্যদিকে সকলের ইচ্ছা ব্যক্তিগত স্বার্থের পক্ষপাতি। এটি বিশেষ বিশেষ কিছু স্বার্থের যােগফল।
(২) বিষয়বস্তুগত পার্থক্যঃ রুশাের সাধারণ ইচ্ছা জনগণের মঙ্গল ও কল্যাণমুখী হয়। এটি ব্যক্তিবিশেষ বা ব্যক্তির ইচ্ছা হতে পারে। অন্যদিকে সকলের ইচ্ছা হলাে বিশেষ কোনাে জনসমষ্টির ইচ্ছার সমন্বিতরূপ। এই ইচ্ছায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটে।
(৩) বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যঃ রুশাের সাধারণ ইচ্ছার বৈশিষ্ট্যসমূহ হলাে স্থায়ী, অবিভাজ্য, অভ্রান্ততা, ত্রুটিহীনতা, সর্বজনীনতা, অধ্বংসনীয়, হস্তান্তরবিহীন, নিয়ন্ত্রণবিহীন, কল্যাণময় ইচ্ছা ইত্যাদি। অন্যদিকে সকলের ইচ্ছার বৈশিষ্ট্য হলাে এটি অভ্রান্ত বা সর্বজনীন নয়। ব্যক্তির বিশেষ স্বার্থ এতে সংরক্ষিত হয়।
(৪) আদর্শগত পার্থক্যঃ রুশাের সাধারণ ইচ্ছার আদর্শগত দিক হচ্ছে এটি অভ্যস্ত ও সঠিক বিবেক যুক্ত ইচ্ছা, সমাজসেবার আদর্শে উজ্জীবিত। অন্যদিকে সকলের ইচ্ছা বিশেষ গােষ্ঠী বা ব্যক্তিবর্গের নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় নিমগ্ন বলে সাধারণ ইচ্ছার ন্যায় উন্নততর আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে পারে না।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রুশাের সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছা আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পরিচিত। রুশাের সাধারণ ইচ্ছার মধ্যে শুধু সাধারণ ও অভিন্ন স্বার্থের কথাই বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সকলের ইচ্ছার মধ্যে ব্যক্তিদের বিশেষ বিশেষ স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হয়।
Leave a comment