প্রশ্নঃ রিভিশন এখতিয়ার বলতে কি বুঝ? বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আপীল এখতিয়ার ও রিভিশন এখতিয়ারের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

[What is meant by Revisional juridisction? Distinguish between Appellate jurisdiction and Revisional jurisdiction of the High Court Division of the Supreme Court of Bangladesh.]

রিভিশনঃ রিভিশন বলতে ভুল ত্রুটি সংশোধনের জন্য পুনরায় দেখা বুঝায়। নিম্ন আদালতের ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য উচ্চ আদালতের যে এখতিয়ার রয়েছে তাকে রিভিশনের এখতিয়ার বলে । বিচার কার্যক্রমে নানাবিধ ভুল-ত্রুটি হতে পারে। আইন সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যার অভাব, পদ্ধতিগত অনিয়ম, যথাযথ সাবধানতার অভাব এবং রূঢ়ভাবে মামলা পরিচালনার ফলে এরূপ ভুল- ত্রুটি হয়ে যেতে পারে। এগুলি সংশোধনের ব্যবস্থা না থাকলে ন্যায়বিচারের পরিবর্তে অবিচার হয়ে দাঁড়াবে। তাই উচ্চতর আদালতকে নিম্ন আদালতের নথিপত্র তলব করে এগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সংশোধনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৫ ধারা মতে নিম্নলিখিত আদালতগুলি তাদের অধীনস্থ আদালতের বিচার কার্যক্রমের উপর রিভিশনের এখতিয়ার রয়েছেঃ

১. সুপ্রীম কোর্টের হাইকোট বিভাগ, ২. দায়রা জজ, ৩. জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, ৪. সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রদত্ত যে কোন ম্যাজিষ্ট্রেট, ৫. প্রধান মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট।

হাইকোর্ট বিভাগের আপীল এখতিয়ার এবং রিভিশনের এখতিয়ারের মধ্যে পার্থক্যঃ দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আইনে সমর্থনীয় হলে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা যায়। আবার ৪৩৫ ও ৪৩৯ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ রিভিশনের এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারেন। এই দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ

১. আপীল একটি অধিকার হিসেবে আপীল আদালতে দায়ের করা হয়। কিন্তু রিভিশনের বিষয়টি একটি সুযোগ মাত্র, আইনগত অধিকার নয়।

২. হাইকোর্ট বিভাগে আপীলের ক্ষেত্রে আইনের প্রশ্ন ও ঘটনার প্রশ্ন উভয় বিষয়ের উপরই শুনানী হয়ে থাকে। রিভিশনের ক্ষেত্রে শুধু আইনের প্রশ্নই উত্থাপিত হয় এবং এর শুনানী হয়ে থাকে।

৩. আপীল এখতিয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালতের প্রদত্ত দণ্ডাজ্ঞা বৃদ্ধি করতে পারেন না। কিন্তু রিভিশনের এখতিয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ডাজ্ঞা বৃদ্ধি করতে পারেন।

৪. আপীলের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ দায়রা আদালত কর্তৃক আসামীর খালাসের সিদ্ধান্তকে দণ্ডের সিদ্ধান্তে রূপান্তরিত করতে পারেন৷

অপরপক্ষে, রিভিশনের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ এরূপ খালাসের সিদ্ধান্তকে দণ্ডের সিদ্ধান্তে রূপান্তরিত করতে পারেন না।

৫. আপীলের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে ব্যাপক নয়, কিছুটা সীমিত; কিন্তু রিভিশনের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা বেশ ব্যাপক।

৬. আপীলের ক্ষেত্রে আপীলকারীর বক্তব্য না শুনে হাইকোর্ট বিভাগ কোন আপীল খারিজ করতে পারেন না।

কিন্তু রিভিশনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শাস্তি বদ্ধি করতে হলে দরখাস্তকারীর বক্তব্য শুনতে হয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে দরখাস্তকারীর বক্তব্য শোনার প্রয়োজন হয় না।

৭. মামলায় কোন অনিয়ম, অবৈধতা বা ভুল-ত্রুটি থাকলে আপীল আদালতে তা সংশোধন করা যায় না। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগ যখন রিভিশন এখতিয়ার প্রয়োগ করেন তখন সেগুলি সংশোধন করে থাকেন।

৮. আপীলে হাইকোর্ট বিভাগ আসামীকে ক্ষমা করতে পারেন না ৷

অপনদিকে, রিভিশনে হাইকোর্ট বিভাগ আসামীকে ক্ষমা করতে পারেন।

৯. আপীলের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ যদি আপীলকারীর আবেদন সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হন তাহলে আপীলে হস্তক্ষেপ করেন।

কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগ সংশ্লিষ্ট মামলায় হস্তক্ষেপ না করলে আসামীর প্রতি গুরুত্র অনিয়ম হবে এটা বুঝতে পারলে হাইকোর্ট বিভাগ রিভিশনের এখতিয়ার প্রয়োগ করেন।

আপীল ও রিভিশন উভয় ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র উদ্দেশ্য থাকলেও হস্তক্ষেপের পন্থা এবং মাত্রা এক নয়।