সূচনা: প্রাচীন রোমান রাষ্ট্রচিন্তা মৌলিক ছিল না, তাদের রাষ্ট্রভাবনায় প্রাচীন গ্রিসের যথেষ্টই প্রভাব ছিল। রােমের রাষ্ট্রদর্শন আসলে তাত্ত্বিক দর্শন নয়, তা হল ব্যাবহারিক জীবনদর্শন। রাষ্ট্রচিন্তায় রােমানদের অবদান প্রসঙ্গে ম্যাক্সি লিখেছেন- “রােম সারা বিশ্বকে সরাসরি কোনাে রাষ্ট্রতত্ত্ব না দিয়ে গেলেও রাষ্ট্রতত্ত্বের নানা উপাদান দিয়ে গেছে, যেগুলি রয়েছে তাদের আইন বিষয়ক বিভিন্ন তত্ত্ব ও ধারণার মধ্যে।”

[1] উৎস: রােমের ইতিহাস, ভৌগােলিক পরিবেশ, আর্থ- সামাজিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এই সমস্ত কিছুই রােমান রাষ্ট্রচিন্তাকে প্রভাবিত করেছিল। পাশাপাশি অখণ্ড সাম্রাজ্য গঠনের পরিকল্পনাও রােমান রাষ্ট্রচিন্তার উৎস হিসেবে কাজ করেছিল। সর্বোপরি আইন ও নাগরিকত্ব সম্পর্কে রােমানদের বাস্তব চিন্তা ও উদার চেতনা রোমান রাষ্ট্রচিন্তার প্রেক্ষিত রচনা করে।

[2] অইনতত্ত্ব: প্রকৃত অর্থে রােমান সাম্রাজ্যেই সর্বপ্রথম সঠিক আইনের ধারণা গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীকালে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আইনব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। রােমানরাই সর্বপ্রথম আইনকে লিখিত আকারে নথিভুক্ত করার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেন। ধর্মের সংকীর্ণ গণ্ডি ছাড়িয়ে তারা আইনকে প্রকৃতি জগতের বাস্তব প্রকাশ হিসেবে তুলে ধরেন। বিশ্বসভ্যতায় রােমান আইনের তিনটি দান হল—[i] পৌর আইন, [ii] সর্বজনীন আইন, [iii] প্রাকৃতিক আইন।

[3] রােমান নাগরিকতার তত্ত্ব: রােমান রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ নাগরিকত্বের ধারণাকে সর্বজনীন আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। রােমান নাগরিকতা তত্ত্বের মূল দুটি নীতি হল- [i] ‘জন্মসূত্রে মানুষ স্বাধীন’, [ii] ‘মানুষে মানুষে সমতার অধিকার হল প্রাকৃতিক অধিকার। রােমান রাষ্ট্রচিন্তাবিদ সিসেরাে বলেছেন, “সমগ্র বিশ্ব হল এমন একটি কমনওয়েলথ, যেখানে সমস্ত মানুষ সমান।” স্টয়িক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রােমান রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ বিশ্বমানবতা তথা সকলের সমতার ধারণা প্রচার করেন।

সমালােচনা: কিছু অসংগতির কারণে রােমান আইনতত্ত্ব সামঞ্জস্যহীন বলে সমালােচিত হয়েছে। রােমান রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ যে বিশ্বজনীন আইনের উল্লেখ করেছেন তার সঙ্গে বাস্তবের খুব একটা মিল নেই। তা ছাড়া মিশ্র শাসনব্যবস্থাও ভ্রান্তিকর, কেন না রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে মিশ্রণ সম্ভব নয়।

[1] প্রকৃতি: রােমান রাষ্ট্রচিন্তায় আইনতত্ত্বের ধারণা মেলে। পাশাপাশি এই রাষ্ট্রচিন্তা মিশ্র শাসনব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সার্বভৌমিকতারও স্বরূপ উন্মােচন করে। রোমান রাষ্ট্র ধারণায় চুক্তির মাধ্যমে শাসক-শাসিতের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। রােমান রাষ্ট্রচিন্তা অনুসারে রাজতন্ত্রের যুগে রাজা, প্রজাতন্ত্রের যুগে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, সাম্রাজ্যবাদের যুগে সম্রাট তাদের কাজের জন্য জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন।

[2] গুরুত্ব: রাষ্ট্রত্ত্বকে আইনের ধারায় প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল তাদের বড়াে অবদান। আইন, সংবিধান, সরকার এবং শাসননীতি, রাষ্ট্রসমবায়, বিশ্বনাগরিকত্ব, শৃঙ্খলাবাদ, সমাজজীবন সম্পর্কে তারা যে ধারণা দিয়ে গেছেন ব্যাবহারিক রাজনীতির বিকাশে তার গুরত্ব অসীম।