ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত ইটালির টাইবার নদীর উপকূলে আনুমানিক ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রােম নগরীর প্রতিষ্ঠা হয়। এই নগরীকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।
[1] জুলিয়াস সিজার: সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণে সর্বপ্রথম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার (৫৯-৪৪ খ্রিস্টাপূর্বাব্দ)।
-
প্রথমদিকের আধিপত্য: জুলিয়াস সিজার ফ্রান্সের বিভিন্ন উপজাতি গুলিকে পরাজিত করে সেখানে রােমের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এর দ্বারা রােমান সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সুরক্ষিত হয়।
-
নীলনদের যুদ্ধ: তিনি মিশরের রাজা ত্রয়ােদশ টলেমিকে নীলনদের যুদ্ধে (৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পরাজিত করে মিশর দখল করেন। রাজা ফারনাকেস-কে পরাজিত করে তিনি এশিয়া মাইনরে রােমের আধিপত্য স্থাপন করেন। রােমান সাম্রাজ্যের দুরন্ত প্রসারে জুলিয়াস সিজারের উক্তি “আমি এলাম, আমি দেখলাম, আমি জয় করলাম (“Veni, Vidi, Vici”)- এ কথা শুধু জুলিয়াস সিজারের রাজত্বকালেই নয়, তার পরবর্তী ৫০০ বছরের রােমান সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযােজ্য।
[2] অগাস্টাস সিজার: পরবর্তী সম্রাট অগাস্টাস সিজার সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে রােমান সাম্রাজ্যের সীমানা ইউরােপের গণ্ডি ছাড়িয়ে পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। এই সময় রােমান সাম্রাজ্যের সীমানা পশ্চিমে ফ্রান্স ও স্পেন থেকে পূর্বে ইউফ্রেটিস নদী এবং উত্তরে রাইন ও দানিয়ুব নদী থেকে দক্ষিণে সাহারা মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীগুপ্ত। এরপর গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রসারে সর্বাধিক কৃতিত্বের পরিচয় দেন গুপ্ত সম্রাট ঘটৎকোচগুপ্ত, প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।
[1] প্রথম চন্দ্রগুপ্ত: প্রথম চন্দ্রগুপ্ত (৩২০-৩৩৫ খ্রি.) লিচ্ছবি রাজকন্যা কুমারদেবীকে বিবাহ করে নিজের শক্তি ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেন। পরে গােটা লিচ্ছবি রাজ্যই চন্দ্রগুপ্তের অধীনে চলে আসে। তাঁর ‘মহারাজাধিরাজ উপাধি থেকে অনেকে মনে। করেন যে, তিনি মগধের রাজ্যসীমা বহুদূর বিস্তৃত করেছিলেন। সম্ভবত উত্তরে বেনারস থেকে দক্ষিণে মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ এবং পশ্চিমে বাকাটক রাজ্যের সীমানা থেকে পূর্বে সমতট বাদে বাংলার বাকি অংশ তার রাজ্যভুক্ত ছিল।
[2] সমুদ্রগুপ্ত: প্রথম চন্দ্রগুপ্তের পুত্র সমুদ্রগুপ্ত (৩৩৫-৩৮০ খ্রি.) ছিলেন গুপ্ত বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে আনেন।
-
উত্তর ভারতের রাজ্যজয়: হরিষে রচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে, সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারতের বিখ্যাত নয়জন রাজাকে পরাজিত করে তাদের রাজ্য দখল করেন। এই নয়জন রাজা হলেন- (a) রুদ্রদেব, (b) মতিল, (c) নাগদত্ত, (d) চন্দ্রবর্মন, (e) গণপতিনাগ, (f) অচ্যুৎ, (g) নাগসেন, (h) নন্দিন ও (i) বলবর্মন। এরপর তিনি দক্ষিণ দিকের আটবিক রাজ্যগুলিও জয় করেন।
-
দক্ষিণ ভারতের রাজ্যজয়: উত্তর ভারত জয়ের পর সমুদ্রগুপ্ত দক্ষিণ ভারত অভিযান করেন এবং সেখানকার ১২ জন রাজাকে পরাস্ত করেন। এরা হলেন- (a) বিয়ুগােপ, (b) হস্তীবর্মণ, (c) নীলরাজ, (d) উগ্রসেন, (e) ধনঞ্জয়, (f) কুবের, (g) স্বামীদত্ত, (h) দমন, (i) মহেন্দ্রগিরি, (i) মহেন্দ্র, (k) ব্যাঘ্ররাজ এবং (I) মন্তরাজ। অবশ্য তিনি দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে তার প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠা করেননি। দক্ষিণ ভারতে ‘গ্রহণ পরিমাে্ষ নীতি গ্রহণ করে সেখানকার রাজাদের বশ্যতা ও কর প্রদানের প্রতিশ্রুতি আদায় করে সমুদ্রগুপ্ত তাদের রাজ্য ফিরিয়ে দেন।
-
সীমান্তবর্তী রাজ্যজয়: সমুদ্রগুপ্ত সীমান্তবর্তী পাঁচটি রাজ্য- (a) নেপাল, (b) কর্তৃপুর, (c) সমতট, (d) দাভক, (e) কামরূপ জয় করেন।
-
অন্যান্য রাজ্যজয়: এ ছাড়া সমুদ্রগুপ্ত আরও নয়টি প্রজাতান্ত্রিক রাজ্যের বশ্যতা আদায় করেন। ভারতে সাম্রাজ্য প্রসারের পর সমুদ্রগুপ্ত ‘অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন।
[3] দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত: সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যর পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত মালব, গুজরাট ও সৌরাষ্ট্রে রাজত্বকারী বিদেশি শক রাজাদের পরাজিত ও বিতাড়িত করে শক রাজ্য নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। দিল্লির নিকটবর্তী মেহেরৌলির কটি লৌহস্থন্তে লেখা আছে যে, জনৈক চন্দ্র রাজা’ বাহলা ও বাকি দেশ জয় করেন। অনেক পণ্ডিত মনে করেন যে, এই ‘চন্দ্র রাজা’ এবং ইতিহাসখ্যাত গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত একই ব্যক্তি ছিলেন।
Leave a comment