প্রশ্নঃ রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, রাষ্ট্রের বলতে কী বুঝ?

ভূমিকাঃ রাষ্ট্র একটি অন্যতম সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মানবসমাজের ক্ষমতার বন্টন তথা ক্ষমতার কাঠামাে অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। রাষ্ট্রের সাথে সামাজিক মানুষের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই রাষ্ট্র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এর সামাজিক প্রকৃতি ও প্রভাব অনস্বীকার্য। রাষ্ট্রের ক্ষমতার পরিধি যতই বিস্তৃত হােক না কেন একথা অনুস্বীকার্য যে, রাষ্ট্রের উৎস সমাজ এবং রাষ্ট্র সামাজিক বিবর্তনের একটি নির্দিষ্ট ও অপরিহার্য স্তর।

রাষ্ট্রের সংজ্ঞাঃ রাষ্ট্র হলাে সমাজের শক্তিশালী এক বৃহৎ সংঘ। একে সমাজ বলা যায় না। সহজ কথায়, রাষ্ট্র হলাে নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডে সরকারের অধীনে সংগঠিত এমন এক জনসমষ্টি যারা স্বাধীনভাবে বসবাস করার অধিকার ও ক্ষমতা অর্জন করে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হলােঃ

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় বলেন, রাষ্ট্র হলাে এমন একটি মানব সম্প্রদায়, যা একটি নির্দিষ্ট এলাকার জনগােষ্ঠী, সম্পদ ও সম্পত্তিকে একচেটিয়া ব্যবহার বা নিয়ন্ত্রণ করার সময় অধিকার লাভ করে।

সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেন, রাষ্ট্র এমন একটি সংঘ, যা সরকারের ঘােষিত আইন অনুসারে কাজ করে। সরকার আইন ঘােষণা করার ও পালন করানাের শক্তির অধিকারী।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গার্নারের মতে, রাষ্ট্র হলাে নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মােটামুটি একটি বৃহৎজন সম্প্রদায়, যা বাইরের নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন এবং যার এমন একটি সরকার আছে, যার প্রতি অধিকাংশ অধিবাসী স্বভাবতই আনুগত্য প্রদর্শন করে।

অধ্যাপক গেটেল বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলাে সেই বিজ্ঞান যা রাষ্ট্রীয় সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও মতবাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলােচনা করে।

উইলােবির মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলাে সেই বিজ্ঞান যার লক্ষ্য হল রাজনৈতিক সত্যগুলাে নিরূপণ করা এবং তাদের মধ্যকার যুক্তিগত ও কার্যকারণগত সম্পর্ক অনুযায়ী তাদেরকে সুব্যবস্থিত উপায়ে বিন্যাস কর।

এরিস্টটলের মতে, রাষ্ট্র হলাে কয়েকটি পরিবার ও গ্রামের সমষ্টি, যার উদ্দেশ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন।

ব্রস্টসলির মতে, কোনাে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত জনসমাজই রাষ্ট্র।

পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। একটি অন্যটির পরিপূরক। একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব অকল্পনীয়। মােট জনসমষ্টি নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত, আবার রাষ্ট্রের জনগণই সরকার। পৃথিবীর সব সমাজেই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।