অথবা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদ সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকাঃ রাষ্ট্র হলাে সভ্য জীবনের বাহক। কারণ রাষ্ট্র ছাড়া সভ্য জীবনের কথা চিন্তা করা যায় না। সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য মানুষ রাষ্ট্র ও সমাজ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু রাষ্ট্রের উৎপত্তি কখন কীভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রের উৎপত্তিসংক্রান্ত মতবাদঃ রাষ্ট্র এমনি গঠিত হয়নি, হয়েছে মানবজীবনের বৃহত্তর প্রয়ােজনের তাগিদে। প্রয়ােজন কী ছিল এবং কেমনভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে এ স্তরে এসে পৌঁছেছে সেটা জানার জন্য উৎপত্তি সম্পর্কে আলােচনা প্রয়ােজন। রাষ্ট্রের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতাদর্শ আছে, তার মধ্যে ঐশ্বরিক মতবাদ, বলপ্রয়ােগ মতবাদ, সামাজিক চুক্তি মতবাদ, ঐতিহাসিক মতবাদ, জৈব মতবাদ প্রভৃতি প্রধান।
বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদের মূলকথাঃ একথা সত্য যে, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্বন্ধে বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন মতবাদ। এ মতবাদের মূলকথা হচ্ছে যে, বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অন্যান্য সবকিছুর ন্যায় রাষ্ট্রও বিধাতা কর্তৃক সৃষ্ট। রাজা বা শাসক বিধাতার প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তার মাধ্যমেই বিধাতার ইচ্ছা প্রকাশিত হয়।
বিধাতার সৃষ্টি মতবাদের ধারণাঃ বিধাতার সৃষ্টি মতবাদের ধারণা পাওয়া যায় বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে। এ সম্পর্কে বাইবেলে বলা হয়েছে, সকল ব্যক্তিই উচ্চতর ক্ষমতার অধীন থাকুক। আল্লাহর ক্ষমতাই অদ্বিতীয় ও অসীম। পৃথিবীর সকল ক্ষমতা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। পবিত্র কুরআনেও এর সমর্থনে অনেক আয়াত রয়েছে। হিন্দু ধর্মের মহাভারতেও অনেক নির্দেশ এ সম্পর্কে বিদ্যমান।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদ প্রাচীনকালে গ্রিক ও রােমানগণ গ্রহণ করেনি। তবে মধ্যযুগে সম্রাট ও পােপের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত সৃষ্টি করেছে। এ মতবাদ অনুযায়ী রাষ্ট্র স্বয়ং খােদা সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার প্রতিনিধি হিসেবে ইহজগতে রাজাকে পাঠিয়েছেন।
Leave a comment