অথবা, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যগুলাে আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ বর্তমান সভ্য জগতে রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগঠন। রাষ্ট্র নামক এ রাজনৈতিক সংগঠনটি সভ্যতার বহু পর্যায় অতিক্রম করে আধুনিক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এ সংগঠনের মধ্যেই আমরা বসবাস করি, লালিত-পালিত হই এবং মৃত্যুবরণ করি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল যথার্থই বলেছেন, মানুষ জন্মগতভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। রাষ্ট্র একটি বিবর্তনমূলক ও সমাজ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তির উত্তম জীবনযাপনের জন্য রাষ্ট্রিয় সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে।
আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যঃ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনেরই কতিপয় উদ্দেশ্য থাকে এবং এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠানটি তার কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়। নিম্নে বিভিন্ন মনীষী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কি বলেছেন বা কোন ক্ষেত্রগুলােকে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তা তুলে ধরা হলােঃ
(ক) অধ্যাপক স্মিথঃ অধ্যাপক স্মিথ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যথাঃ (১) সমাজে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা এবং বহিঃশক্তির আক্রমণ হতে তাকে রক্ষা করা। (২) সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে অন্যায় ও অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করা এবং (৩) ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব কার্য সম্পাদন করা সম্ভব নয় তা সম্পাদন করা এবং জনগণের জন্য অত্যাবশ্যক প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠন ও সংরক্ষণ করা।
(খ) অধ্যাপক গার্নারঃ অধ্যাপক গার্নারও অধ্যাপক স্মিথের ন্যায় আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যকে তিনটি শ্রেণিভুক্ত করেছেন। এগুলাে হলােঃ (১) রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। (২) জনগণের সামগ্রিক কল্যাণসাধন করা এবং জাতীয় অগ্রগতি নিশ্চিত করা এবং (৩) মানবসভ্যতার উন্নতি বিধানে জাতীয়তাবাদের সাথে আন্তর্জাতিকতাবাদের সমন্বয়সাধন করা।
(ঘ) রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলােবিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলােবির মতে, আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলাে তিনটি। যথাঃ (১) প্রাথমিক উদ্দেশ্য (২) মাধ্যমিক উদ্দেশ্য এবং (৩) চরম উদ্দেশ্য। উইলােবির মতে, দেশে শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা। এবং রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা করা হলাে রাষ্ট্রের প্রাথমিক উদ্দেশ্য।
(ঙ) অধ্যাপক লাস্কিঃ অধ্যাপক লাস্কি আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন যে, সর্বাধিক সমাজকল্যাণ সাধন এবং ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করাই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, রাষ্ট্র একটি চিরস্থায়ী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের পরিবর্তন ঘটতে পারে কিন্তু তাই বলে এর বিনাশ হয় না। রাষ্ট্রকে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের ও জাতিসংঘের কাছে স্বীকৃতি পেতে হয়। স্বীকৃতি পাবার পর প্রত্যেকটি রাষ্ট্র সমান অধিকার ও মর্যাদা দাবি করতে পারে।
Leave a comment