প্রশ্নঃ রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড কাকে বলে? তার উপাদান কি কি? রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড অর্জনের পদ্ধতি আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ স্বীকৃতির মাধ্যমে কোন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিসত্ত্বা প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ স্বীকৃতির মাধ্যমে কোন ভূ-খণ্ড রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করে।

স্বীকৃতি (Recognition) কাকে বলেঃ কোন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র, নতুন গঠিত কোন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেওয়া কে স্বীকৃতি বলে।

অধ্যাপক ওপেনহাম এর মতে, ‘কোন রাষ্ট্র শুধু স্বীকৃতির মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক সত্ত্বা লাভ করে এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়বস্তু হিসেবে গণ্য হয়।’

অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত একটি রাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিসত্ত্বা প্রতিষ্ঠিত হয় না। কারো কারো মতে স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত একটি রাষ্ট্র পূর্ণতা লাভ করে না।

এই স্বীকৃতি কোন অধিকার নয়। অর্থাৎ অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দাবী করা যায় না । আন্তর্জাতিক আইনে নতুন গঠিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে পুরাতন রাষ্ট্রের উপর কোন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয় নি। এটি নির্ভর করে সম্পূর্ণভাবে কোন রাষ্ট্রের মর্জির উপর।

রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড কাকে বলেঃ কোন রাষ্ট্রের জলভাগ, স্থলভাগ এবং আকাশ পথ একত্রে মিলে হয় ঐ রাষ্ট্রের ভূ-খণ্ড। পৃথিবীর নির্দিষ্ট এক একটি অংশ এক একটি দেশের সার্বভৌমভুক্ত। এই অংশে সংশ্লিষ্ট দেশের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় থাকে। এই অংশটি হলো ঐ দেশের ভূ-খণ্ড।

যে কয়টি উপাদান নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ভূ-খণ্ড। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যে অংশের উপর কোন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বজায় থাকে সেই অংশকে উক্ত রাষ্ট্রের ভূ-খণ্ড বলে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড হলো-

It is a definite part of the surface of the earth where the state normally exercises jurisdiction over persons or things to the exclusion of another state. Territory in international law means any area of the earth’s surface which is the subject of sovereign rights and interests.

রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের উপাদান : নিম্নে রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ডের উপাদানসমূহ উল্লেখ করা হলো-

(১) নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড : একটি রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান হলো নির্দিষ্ট একটি ভূ-খণ্ড।

(২) সার্বভৌমত্ব : কোন রাষ্ট্রের যে ভূ-খণ্ড আছে তার উপর উক্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব থাকতে হবে। 

(৩) জনগণ : একটি রাষ্ট্রে অবশ্যই জনবসতি থাকতে হবে।

(৪) জলভাগ : নির্দিষ্ট জলভাগ যেমন: নদ-নদী, খাল-বিল, হ্রদ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হবে। 

(৫) বায়ুমণ্ডল : রাষ্ট্রের উপরস্থ বায়ুমণ্ডল অর্থাৎ আকাশসীমা উক্ত রাষ্ট্রের ভূখণ্ড হিসেবে গণ্য হবে।

রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড অর্জনের পদ্ধতিঃ যে এলাকার উপর কোন দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় থাকে সেই এলাকাকে রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড বলে। নিম্নে রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড অর্জনের পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো-

(১) দখল : জনবসতি শূন্য কোন এলাকায় কোন রাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করলে তাকে দখল বলে। দখলের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড অর্জিত হতে পারে। তবে দখলের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড অর্জন করতে হলে সেই এলাকা জনবসতি শূন্য হতে হবে, সার্বভৌমত্বহীন হতে হবে। অন্যথা তা জবর-দখল হয়ে যাবে। দখল আইনত বৈধ হলেও জবর-দখল আইনত বৈধ নয়।

(২) সমার্পণ : কোন দেশ যদি চুক্তির মাধ্যমে তার কর্তৃত্ব অন্য দেশের নিকট হস্তান্তর করে তাহলে তাকে সমার্পণ বলে। সমার্পণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ড অর্জিত হতে পারে।

(৩) শক্তি প্রয়োগ করে : সামরিক শক্তি বা অন্য কোন শক্তি প্রয়োগ করে কোন দেশ বা দেশের কোন অংশ অর্জিত হতে পারে।

(৪) ইজারার মাধ্যমে : কোন দেশ তার কোন এলাকা অন্য দেশের নিকট ইজারা প্রদান করতে পারে। এক্ষেত্রে ইজারা গ্রহীতা দেশ ভূ-খণ্ড অর্জন করে। তবে ইজারার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে নয় বরং সাময়িকভাবে ভূ-খণ্ড অর্জন করা যায়।

(৫) দীর্ঘদিন ভোগের মাধ্যমে : শান্তিপূর্ণভাবে কোন ভূ-খণ্ড দীর্ঘদিন ভোগ-দখল করলে একসময় তা উক্ত দেশের ভূ-খণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

(৬) আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত : আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও ভূ-খণ্ড অর্জিত হতে পারে। 

(৭) প্রকৃতিক নিয়মে : প্রকৃতিক নিয়মে নতুন ভূ-খণ্ডের জন্ম হলে সেই এলাকার রাষ্ট্রীয় সীমানাযুক্ত দেশ উক্ত ভূ-খণ্ড লাভ করে। যেমনঃ সমুদ্র বক্ষের চর।

উপসংহারঃ স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ স্বীকৃতির মাধ্যমে কোন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিসত্ত্বা প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ স্বীকৃতির মাধ্যমে কোন ভূ-খণ্ড রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করে। কোন রাষ্ট্র স্বীকৃতি লাভ করলেই কেবল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে পারে।