মানুষের মূল্যবোধকে বাদ দিয়ে তার আচার-আচরণ বা রাজনীতিক ক্রিয়াকলাপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যায় না। মূল্যবোধ মানবসমাজের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানযুক্ত। বিভিন্ন ঘটনা কতকগুলি মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত হয়। সেগুলির অনুধাবন ও অনুশীলন আবশ্যক। ঘটনাকে কেবলমাত্র ঘটনা হিসাবে দেখলে চলবে না। তা হলে কারণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যাবে না। এবং সে ক্ষেত্রে রাজনীতির আলোচনা কেবলমাত্র ঘটনার বর্ণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। যে কোন ঘটনার পিছনে মূল্যকে একটি শক্তি হিসাবে সতত সক্রিয় দেখা যায়। সংঘটিত ঘটনাসমূহের সঙ্গে মূল্য ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত। মানবজীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। মানুষের কাজকর্মের ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে মূল্যায়ন হয়। সমাজজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হল এই মূল্যায়ন। সামাজিক বিজ্ঞানীর দায়িত্ব হল এসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা।
গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের অভিমত অনুসারে ‘রাজনীতির উদ্দেশ্য কর্ম, জ্ঞান নয়’। অনুরূপভাবে হ্যালোয়েল (Hallowell)-এর অভিমত অনুযায়ী রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান ও আচরণসমূহের অনুশীলনের অর্থবহ উদ্দেশ্য হল অনুশীলন সূত্রে প্রাপ্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে মানুষের যথাসাধ্য হিত সাধন করা। অর্থাৎ রাজনীতির অনুশীলন হবে আদর্শস্থাপনকারী ও লক্ষ্যনিষ্ঠ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর আলোচনা শুধুমাত্র রাজনীতিক জীবনের বর্ণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার ভাল-মন্দ, ত্রুটি-বিচ্যুতি, উন্নত-কামা ব্যবস্থার ধারণা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশ বা ইঙ্গিত থাকবে। কেবলমাত্র ঘটনার মধ্যে নয়, কি ঘটা উচিত—সে বিষয়েও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা সম্প্রসারিত হবে। অন্যথায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা অর্থহীন বা নিষ্ফল হতে বাধ্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী নীরস জ্ঞানচর্চা রাজনীতি অনুশীলনের উদ্দেশ্য নয়। এর উদ্দেশ্য হল অনুশীলনলব্ধ জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের সমাজ জীবনের উন্নতি সাধন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী রাজনীতির অনুশীলন হবে মূল্যবোধাত্মক। সামাজিক ও রাজনীতিক ব্যবস্থামাত্রেই কোন না কোন মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত। মূল্যবোধ, আদর্শ ও স্বার্থ মানুষের রাজনীতিক আচার-আচরণ ও ক্রিয়াকর্মের চালিকা শক্তি। এই কারণে মূল্যকে রাজনীতিক বিশ্লেষণ থেকে বাতিল করা যায় না। তথ্য হিসাবে মূল্যকে বিচার-বিবেচনা করা দরকার। দেশ-কাল নির্বিশেষে মানুষ সংগ্রাম করে আসছে বিবিধ মূল্যের জন্য। এই সমস্ত মূল্যের উদাহরণ হিসাবে অধিকার, স্বাধীনতা, ন্যায়, সাম্য প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই সমস্ত মূল্য হল বাস্তব তথ্য, আত্মবাদী নয়— সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই সমস্ত মূল্যকে উপেক্ষা করতে পারে না। রাজনীতির আলোচনাকে অর্থবহ করে তোলার জন্য মানুষের মূল্যবোধ, উদ্দেশ্য ও আদর্শ সম্পর্কে বিচার-বিবেচনা করা দরকার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গি কেবলমাত্র তথ্যাদি সংগ্রহ ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। বিভিন্ন প্রকারের মূল্যবোধ হল বাস্তব সত্য। এ হল এক বিশেষ ধরনের তথ্য। কারণ মানুষের মূল্যবোধ, উদ্দেশ্য, স্বার্থ, আদর্শ প্রভৃতি প্রভাবিত করে রাজনীতিক আচরণ ও রাজনীতিক কার্যকলাপকে। এবং এই রাজনীতিক আচরণ ও কার্যকলাপ হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তু। এই কারণে মূল্য ও তথ্য হিসাবে মূল্যমানের বিচার রাজনীতি অনুশীলনের প্রধান একটি বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়।
রাজনীতি চর্চায় আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির মূল কথা হল ‘কী হওয়া উচিত’, ‘শাসনব্যবস্থার রূপ কী হওয়া বাঞ্ছনীয়’—এ সবের বিচার-বিবেচনা। সনাতন রাজনীতিক দর্শনের আলোচনার এলাকাটি ছিল ব্যক্তির অধিকার ও কর্তব্য, রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা, রাষ্ট্রের প্রকৃতি, আদর্শ সমাজের স্বরূপ প্রভৃতি বিষয়াদির মধ্যে প্রসারিত। প্রাচীনকালের গ্রীক দার্শনিক প্লেটো-অ্যারিস্টটলের হাতেই আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির সূত্রপাত ঘটে। এই দুই প্রাচীন পণ্ডিতের সামাজিক ও রাজনীতিক জীবনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে আদর্শস্থাপনকারী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। মানবসমাজ ও সামাজিক জীবনধারায় ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, বাঞ্ছিত-অবাঞ্ছিত প্রভৃতি বিষয়াদির উপর এই দুই গ্রীক দার্শনিক বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের উপর আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব-প্রতিক্রিয়া বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক অবধি পরিলক্ষিত হয়। তারপর কিছু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গি অভিজ্ঞতাভিত্তিক, পরীক্ষণযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ অনুশীলনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এদের অভিমত অনুযায়ী রাজনীতির আলোচনা হবে মূল্যমান-নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞতাবাদী। কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন যে, মূল্যের বস্তুনিষ্ঠ অনুশীলন অসম্ভব ; মূল্যবোধ হল আত্মবাদী। অভিজ্ঞতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আবির্ভাব আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিকে হীনবল করে দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি পুনরুজ্জীবিত হয় বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির অনুগামী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমত অনুসারে রাজনীতির অনুশীলন থেকে মূল্যবোধকে অপসারিত করা অসম্ভব। রাজনীতিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে মূল্যবোধের কথা বলা হয়। সমাজ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মূল্যবোধের উৎস এবং অনুশীলনের বিষয়। স্বভাবতই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাত্রেই মূল্য সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ হয়ে থাকেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান মূল্যমান-নিরপেক্ষ হতে পারে না।
মূল্যবোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গি হল এক বিশেষ ধরনের রাজনীতিক তত্ত্ব। এই দৃষ্টিভঙ্গির মূল লক্ষ্য হল একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করা, অথবা প্রতিষ্ঠিত আদর্শের পরিবর্তন সাধন করা। এই মতবাদের প্রবক্তাদের অভিমত অনুযায়ী রাজনীতিক বিষয়াদির আলোচনা বা রাজনীতিক মতবাদ মূল্যবোধহীন হতে পারে না। কোন রাজনীতিক মতবাদই মূল্যবোধহীন নয়, বা মূল্যবোধহীন ছিল না। রাষ্ট্রনৈতিক আলোচনা দার্শনিক চেতনা বা মূল্যবোধের ধারণা রহিত হতে পারে না। এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাদের ধারণা অনুযায়ী সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার সাধনই হল রাষ্ট্রনীতিক সমস্যাদির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মৌলিক লক্ষ্য। রাজনীতিক মতবাদ ও রাজনীতিক আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হল সুনির্দিষ্ট আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করা এবং সুস্পষ্ট মূল্যবোধের দ্বারা মানুষকে অনুপ্রাণিত করা। অর্থাৎ আদর্শনিষ্ঠ বা মূল্যবোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গির মূল লক্ষ্য শুধুমাত্র আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা নয়। আদর্শ রাষ্ট্রের অনুসন্ধানকে উদ্দেশ্য করে আদর্শবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা রাষ্ট্রনীতিক দর্শনের আলোচনায় আগ্রহী। মহৎ একটি আদর্শ বা নীতিবোধপুষ্ট মৌলিক ও বিশিষ্ট ধারণা গড়ে তোলাই হল আদর্শবাদী রাষ্ট্রদর্শন বা মূল্যবোধমূলক রাষ্ট্রতত্ত্বের প্রধান উদ্দেশ্য। এই আদর্শ ও নীতিবোধের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে একটি আদর্শ পরিবেশ ও আদর্শ রাষ্ট্রের বনিয়াদ।
সাবেকি রাষ্ট্রনীতিক চিন্তা: বিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রবণতা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়। অথচ অদ্যাবধি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় কোন তত্ত্বকেই সর্বজনস্বীকৃত তত্ত্ব হিসাবে গণ্য করা যায় নি। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাকে সুদীর্ঘকাল ধরে একটি তত্ত্ব বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। এই তত্ত্বটি হল আদর্শবাদী তত্ত্ব বা মূল্যবোধমূলক মতবাদ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসাবে গ্রীক পণ্ডিত অ্যারিস্টটলের কথা বলা হয়। বস্তুত এই অ্যারিস্টটলের আমল থেকেই এই দৃষ্টিভঙ্গিটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাকে আলোড়িত করে আসছে। অর্থাৎ আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির ইতিহাস হল সুদীর্ঘকালের। বিভিন্ন বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রদার্শনিক ও চিন্তাবিদের ধ্যান-ধারণায় মূল্যবোধ-ভিত্তিক রাজনীতিক মতাদর্শ প্রাধান্য লাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে প্লেটো, টলস্টয়, মহাত্মা গান্ধী, থোরো, রাসেল, এমন কি অপেক্ষাকৃত আধুনিককালের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের প্রবক্তাদের কথা বলা যায়। সনাতন রাষ্ট্রনীতিক চিন্তা ও আলোচনা ছিল নৈব্যক্তিক প্রকৃতির এবং মূল্যবোধ-ভিত্তিক। এ ধরনের রাজনীতিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণই রাষ্ট্র-দর্শন বা রাজনীতিক চিন্তাধারাকে সমৃদ্ধ করেছে। এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই।
আদর্শনিষ্ঠ বা মূল্যবোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রখ্যাত প্রবক্তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এঁরা হলেন : প্লেটো-অ্যারিস্টটল, কার্টু-ফিক্টে-হেগেল, গ্রীণ-ব্রাডলে-বোসাংকেত, সেণ্ট টমাস অ্যাকুইনাস, মারসিগুলিও অব পড়ুয়া প্রভৃতি।
ধারণাগত ব্যাখ্যা: আদর্শনিষ্ঠ রাষ্ট্রদর্শনের মূল বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কতকগুলি মৌলিক ধারণার পরিচয় পাওয়া যায়। সংক্ষেপে এ বিষয়ে আলোচনা করা আবশ্যক। মানুষ আবহমানকাল ধরে একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা ও আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থার বাসনাকে পরিপুষ্ট করেছে। রাষ্ট্র-দার্শনিকগণও এই মানব সমাজেরই অংশ। আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারীরা তাঁদের রাষ্ট্রতত্ত্বে আদর্শরাষ্ট্রের রূপরেখা চিত্রিত করেছেন। রাষ্ট্র-দার্শনিকদের আলোচনা আদর্শ ও মূলবোধ-রহিত হতে পারে না। কারণ সামাজিক ঘটনাসমূহ ও ভাল মন্দের বিচার সমাজের সকলকেই প্রভাবিত করে। সমাজের অধিবাসী হিসাবে রাষ্ট্র-দার্শনিকরা এই প্রভাবের ঊর্ধ্বে বা বাইরে থাকতে পারেন না। আবার এই কারণে সামাজিক পার্থক্য হেতু বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে ধ্যান ধারণা ও মনোভাবগত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থক চিন্তাবিদদের অভিমত অনুযায়ী অদ্যাবধি রাষ্ট্র-দর্শনের কোন তাত্ত্বিক আলোচনাই আদর্শহীন বা মূল্যবোধহীন বলে প্রতীয়মান হয় নি। আদর্শ ও মূল্যবোধ-রহিত রাজনীতিক তত্ত্ব হল আসলে অন্তঃসারশূন্য। রাজনীতিক তত্ত্বমাত্রেই কোন-না-কোন আদর্শ ও মূল্যবোধের বাহক হিসাবে প্রতিপন্ন ও পরিগণিত হয়। অদ্যাবধি আলোচিত প্রতিটি রাজনীতিক তত্ত্বেই কোন একটি নির্দিষ্ট আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে। তবে সংশ্লিষ্ট আদর্শ ও মূল্যবোধ কোন কোন রাজনীতিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ ও সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। আবার কোন কোন রাজনীতিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে তা আংশিক ও প্রচ্ছন্নভাবে প্রতিফলিত হয়। যে কোন রাষ্ট্র-দার্শনিকের রাজনীতিক বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কোন-না-কোন রাজনীতিক আদর্শ বা মূল্যবোধের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।
পদ্ধতিগত ব্যাখ্যা: আদর্শনিষ্ঠ বা মূল্যবোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কতকগুলি পদ্ধতিগত বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এ বিষয়ে আলোচনা করা আবশ্যক। এক, আদর্শবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে কারণ দেখে কার্য নির্ণয়ের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ কার্য-কারণের সম্পর্ক নির্ধারণের উপর জোর দেওয়া হয়। আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে আগের কোন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচনা করা হয়। এবং এইভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে অবরোহণমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। দুই, আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে বা মূল্যবোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে ঘটনার অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ অনুসন্ধানের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অর্থাৎ ঔচিত্য-অনৌচিত্যের ধারণার উপর আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে অতিমাত্রায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তিন, আদর্শনিষ্ঠ রাষ্ট্র-দার্শনিকরা রাজনীতিক গবেষণা ও আলোচনার ক্ষেত্রে অনুমান ও কল্পনার উপর জোর দেন, সংশ্লিষ্ট তথ্যাদির উপর জোর দেন না। ঘটনামূলক আলোচনা বা বাস্তব উপাদান-উপকরণকে আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অর্থাৎ এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কল্পনাপ্রবণতার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। চার, ব্যাপক তত্ত্ব গঠন না করে, আদর্শনিষ্ঠ রাষ্ট্র-দার্শনিকরা বর্ণনামূলক বিশ্লেষণের পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। বিভিন্ন ঘটনা ও চিন্তাধারা বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণনাত্মক উপায়-পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সুতরাং আদর্শনিষ্ঠ তত্ত্ব বা মূল্যবোধমূলক মতবাদ হল বর্ণনামূলক।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী গান্নার মিরডাল (Gunnar Myrdal)-এর অভিমত অনুযায়ী দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যমানের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। সমাজবিজ্ঞান পক্ষপাতহীন হলে তা অর্থহীন। কোন দিন তা ছিল না এবং ভবিষ্যতে তা কোন দিন হবে না। লিও স্ট্রাউস (Leo Strauss)-এর মতানুসারে প্রত্যেক রাজনীতিক তত্ত্বের মধ্যে মূল্যায়ন থাকে; তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত তথ্যমূলক সূত্রাদির প্রামাণিকতা নির্ধারণের ব্যাপারে তা থাকে। তা ছাড়া মূল্যায়ন করা হয় তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত রাজনীতিক ঘটনাবলী, রাজনীতিক ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়ার উপর। স্বভাবতই রাজনীতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মূল্যমানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
মূল্যবোধাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির অনুগামীদের অভিমত হল রাজনীতিক বিষয়াদির অনুশীলনের ক্ষেত্রে মূল্যমান বাধার সৃষ্টি করে না; বরং বস্তুনিষ্ঠ আলোচনাকে মূল্যমান অধিকতর সমৃদ্ধ করে। রাজনীতি অনুশীলনের ক্ষেত্রে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্যক্তিগত মূল্যবোধকে বাতিল করার কথা বলেন। আসলে এই শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আড়াল করে রাখতে চান। মানুষ হিসাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সমাজের সদস্য। সমাজের অন্য সকলের মত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরও ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও মতামতের সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাত্রই আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সংগ্রহ, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মূল্যবোধও রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হন।
অধ্যাপক হেইনম্যান (Heinman)-এর মতানুসারে রাজনীতির প্রত্যেক বিষয়ের অনুশীলনে মূল্যমানের অনুপ্রবেশ অপরিহার্য্য। মানুষের ক্রিয়াকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল রাজনীতিক মূল্যবোধ ও বিশ্বাস। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কর্তৃক সংগৃহীত তথ্যাদি সঠিক বিচারে নিরপেক্ষ নয়। সংশ্লিষ্ট তথ্যাদির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
সমাজবিজ্ঞানী লিপসন (Leslie Lipson)-এর অভিমত অনুযায়ী নির্বাচন হল রাজনীতির নির্যাস। নির্বাচন অর্থে বিবিধ মূল্যবোধের মধ্যে বাছাই। রাজনীতি হল উদ্দেশ্য ও উপায় উভয়ের অনুসন্ধান। চিন্তাবিদ ফিলিপস (Derek Phillips) -এর মতানুসারে অনুসন্ধানের বিষয়, পদ্ধতি ও তথ্যাদির উৎস নির্বাচনের মত বিষয়াদি গবেষকের মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মূল্যবোধ ও পছন্দ-অপছন্দের দ্বারা প্রভাবিত হয় তথ্যাদি সংগ্রহ করার পদ্ধতি, অনুশীলনের জন্য তথ্যাদির বাছাইকরণ, তথ্যাদির ও ফলাফলের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। তাছাড়া সরকারের নীতি নির্ধারণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয় কোন না কোন মূল্যবোধের দ্বারা।
পরিশেষে বলা প্রয়োজন যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় বাস্তবকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে আদর্শের আলোকে। তবে আদর্শ ও মূল্যবোধ ব্যবহারিক জীবনের মানদণ্ডে যাচাই হওয়া আবশ্যক। রাজনীতির অনুশীলন কেবলমাত্র তথ্যাদির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। অনুরূপভাবে আবার অবাস্তব আদর্শ সমাজের রূপরেখা নির্ধারণে নিযুক্ত থাকবে না।
সমালোচনা: আদর্শনিষ্ঠ বা মূল্যবোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। বিরুদ্ধবাদীদের মধ্যে অভিজ্ঞতাবাদীরাই হলেন মুখ্য। সমালোচকরা আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুক্তির অবতারণা করেন। এই সমস্ত যুক্তির মধ্যে কতকগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এক. সমালোচকদের অভিযোগ অনুসারে আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি অতিমাত্রায় বর্ণনামূলক। রাজনীতিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বর্ণনার আতিশয্যের কারণে তত্ত্ব গঠনের উদ্যোগ অবহেলিত হয়েছে। অথচ তত্ত্বনির্ভর না হলে কোন জ্ঞানই যথার্থ প্রতিপন্ন হয় না। আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে এই অভিযোগের ব্যাপারে আধুনিককালের আচরণবাদীরাই অধিক সরব।
দুই, আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে যুক্তিনির্ভরতার পরিবর্তে আদর্শ নির্ভরতার আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। অতিমাত্রায় কল্পনাশ্রয়ী ও আদর্শভিত্তিক হওয়ার কারণে আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি বহুলাংশে বাস্তবতা রহিত হয়ে পড়েছে। এই মতবাদটির বাস্তববাদিতা বিপন্ন হওয়ার জন্য মতবাদটি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তিন, আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্বনির্ধারিত ধারণার ভিত্তিতে। অর্থাৎ আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে অবরোহণমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু যথার্থ তত্ত্বের ভিত্তি সঠিক অভিজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক। তবে রাজনীতিক আলোচনা সঠিক, প্রাসঙ্গিক ও বাস্তববাদী হবে অর্থাৎ রাজনীতিক আলোচনার পদ্ধতি আরোহণমূলক হওয়া দরকার। কিন্তু আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে পদ্ধতি হল অবরোহণমূলক। আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি উত্থাপিত হয়েছে মূলত অভিজ্ঞতাবাদীদের দ্বারা।
চার, সমালোচকদের মতানুসারে আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাসঙ্গিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। পর্যাপ্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ এবং সংগৃহীত তথ্যাদির সম্যক বিচার-বিশ্লেষণ ও যথাযথ পর্যালোচনা ব্যতিরেকে কোন মতবাদকে যুক্তির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। কিন্তু আদর্শনিষ্ঠ বা মূল্যবোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি সংগ্রহ ও সংগৃহীত তথ্যাদির বিন্যাসের বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
পাঁচ, বাস্তব ক্ষেত্রে আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারিক উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এই তত্ত্বে কল্পনা ও অনুমানের আধিক্য অনস্বীকার্য। সুতরাং বাস্তবে এই তত্ত্বের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক।
ছয়, সমালোচকদের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক তত্ত্বকে সামাজিক ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক করে তোলা প্রয়োজন। তারজন্য মূলবোধের ধারণা থেকে রাজনীতিক আলোচনাকে বিচ্ছিন্ন করা দরকার। রাজনীতিক তত্ত্ব ও বিচার-বিশ্লেষণ কোনভাবেই মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত হবে না। অন্যথায় তা অ-বৈজ্ঞানিক হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কোন তত্ত্ব যুক্তিনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানসম্মত হওয়ার জন্য মূল্যবোধ ভিত্তিক হবে না, হবে তথ্যভিত্তিক। রাজনীতিক তত্ত্বে মূল্যবোধ বা আদর্শের প্রাধান্যকে মেনে নেওয়া যায় না; মেনে নিলে বিজ্ঞানসম্মত বিচার-বিশ্লেষণ সম্ভবপর হবে না। রাজনীতিক তত্ত্বের বিচার-বিশ্লেষণ বাস্তববাদী ও নিরপেক্ষ হওয়া দরকার। কিন্তু আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি হল মূল্যবোধ-নির্ভর। এই কারণে এই তত্ত্বে বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটে না।
মূল্যায়ন: আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি বা মূল্যবোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে বিরূপ সমালোচনার অভাব নেই। এই তত্ত্ব সব রকম সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে এমন দাবিও করা যায় না। এতদসত্ত্বেও রাষ্ট্রনীতিক চিন্তাজগতে এ ধরনের মতবাদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। আবার আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে বলা সব যুক্তিগুলিই সর্বাংশে স্বীকার্য নয়। এ বিষয়ে জবাবী যুক্তিও বহু ও বিভিন্ন।
(ক) সম্যক যুক্তিনিষ্ঠা ও প্রাসঙ্গিকতা হল বিজ্ঞানের ভিত্তি। এ ভিত্তি আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে সম্যকভাবে বর্তমান। শুধুমাত্র স্তূপীকৃত তথ্যাদির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত আলোচনাকে বিজ্ঞানসম্মত বলে দাবি করা যায় না।
(খ) আদর্শবাদী রাষ্ট্র-দার্শনিকদের মূল্যবোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গির উপাদান-উপকরণ সমকালীন সমাজব্যবস্থা ও মানুষের জীবনধারা থেকে সংগৃহীত হয়। দেশ-কাল-সমাজের চাহিদার প্রতিফলন ঘটে এই সমস্ত মতবাদে। সুতরাং আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিকে নিছক কল্পনাবিলাস হিসাবে উপেক্ষা করা অসঙ্গত।
(গ) রাজনীতিক তত্ত্বমাত্রেই কোন-না-কোন আদর্শ বা মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও এ কথা সমভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং এ নিয়ে কোন রকম অভিযোগ অমূলক।
(ঘ) রাষ্ট্রনীতিক চিন্তাজগতে আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির একটি বড় অবদান হল এই যে, দৃষ্টিভঙ্গিটি তূলনামূলক আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে।
(ঙ) যে কোন রাষ্ট্রনীতিক তত্ত্বের উপযোগিতা ও গুরুত্ব তার কার্যকারিতার মধ্যেই নিহিত থাকে। কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক কলা-কৌশলই কোনতত্ত্বের উপযোগিতা নির্ধারণের মাপকাঠি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না। এ দিক থেকে বিচার করলে আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির উপযোগিতা ও গুরুত্ব বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। এই দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনামূলক, এই কারণে একে উপেক্ষা করা যায় না।
(চ) আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষের মূল্যবোধের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মানব সমাজে এবং মানব জীবনে এর গুরুত্ব বৈজ্ঞানিক কলা-কৌশলের থেকে কম নয়।
(ছ) আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতাবাদী চিন্তাবিদদের বিরূপ সমালোচনা অনেকাংশে অমূলক ও একপেশে।
(জ) আদর্শনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি রাজনীতিক বিষয়াদির বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মূল্যবোধ ও আদর্শকে সংযুক্ত করে অশেষ উপকার করেছে।
Leave a comment