রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজ-বিজ্ঞানের একটি শাখা: সমাজতত্ত্ব সামগ্রিকভাবে সমাজবদ্ধ মানুষের সামাজিক জীবন নিয়ে আলোচনা করে। সমাজবাসী মানুষের কার্যকলাপ, সংগঠন, ও তার ক্রমবিকাশ সমাজতত্ত্ব সামগ্রিক দৃষ্টিতে আলোচনা করে। এইভাবে সমাজতত্ত্ব সমাজ সম্বন্ধে সাধারণ সূত্র ও তত্ত্ব নির্ধারণ করে। সামগ্রিক দৃষ্টিতে সমাজতত্ত্ব মানব সমাজের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করে বলেই সমাজতত্ত্ব মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেবলমাত্র মানুষের রাষ্ট্রনৈতিক জীবন নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ মানুষের সমাজজীবনের এই একটিমাত্র দিকের আলোচনাই হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এই অর্থে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজতত্ত্বের একটি শাখা বিশেষ। ফরাসী দার্শনিক পল জাঁনে (Janet)-র মতে, ‘সমাজবিজ্ঞানের যে অংশ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি ও সরকারের নীতিসমূহ আলোচনা করে তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে” (“Political Science is that part of social science which treats of the foundations of the State and principles of Government.”)।
সমাজতত্ত্বের কাছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন দিক থেকে ঋণী।
(১) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সমাজতত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত: সমাজতত্ত্ব থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নানা উপাদান ও উপকরণ সংগ্রহ করে। সেজন্য সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঠিক অর্থ অনুধাবন করা অসম্ভব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় বিষয় ‘রাষ্ট্র’ প্রাথমিক অবস্থায় অন্যতম সামাজিক সংগঠন মাত্র ছিল। তারপর কালক্রমে বিবর্তনের পথে রাষ্ট্রের আবির্ভাব। সমাজতত্ত্ব থেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব, সামাজিক বিধিব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন।
(২) সামাজিক সমস্যা থেকে রাজনীতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়: কোন দেশের রাষ্ট্রনৈতিক সমস্যাকে সামাজিক সমস্যা থেকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়। ভাষা, ধর্ম, সম্প্রদায় প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিক্ষোভ রাজনীতিক ক্ষেত্রে সংকটের সৃষ্টি করে থাকে। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ক্ষেত্রে সংকট মূলতঃ সামাজিক সমস্যা থেকে সৃষ্টি হয়। আর্থনীতিক, রাজনীতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে প্রভাবিত করছে।
(৩) সমাজতত্ত্বকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অচল: আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর সমাজতত্ত্বের প্রভাব আরও বেড়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকারিতা, ব্যক্তি-স্বাধীনতার রূপায়ণ, বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ( Interest Group), সমাজবাসীদের রাজনীতিক কার্যকলাপ ও তার নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি অসংখ্য রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়ের আলোচনার জন্য সমাজতত্ত্বের জ্ঞান দরকার। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর সমাজতত্ত্বের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বস্তুতপক্ষে, বর্তমানে ‘রাজনীতিক সমাজতত্ত্ব’ (Political Sociology) নামে নতুন একটি শাস্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং সমাজতত্ত্বের জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা চলে না। ক্যাটলিন (Catlin) -এর মতানুসারে সমাজতত্ত্বকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চিন্তা অসম্ভব। সমাজতত্ত্বের প্রতিপাদ্য বিষয়ের ধারণা না থাকলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি করা যায় না। গিডিংস (Giddings) -এর অভিমত হল, ‘যাঁরা সমাজতত্ত্বের মূল সূত্রগুলি জানেন না তাঁদের রাষ্ট্রতত্ত্ব শিক্ষা দেওয়া, নিউটনের গতি সম্পর্কিত সূত্র বিষয়ে অজ্ঞ ব্যক্তিদের জ্যোতিবির্দা শিক্ষা দেওয়ার মতই অসম্ভব ব্যাপার’ (‘To teach the theory of the State to men who have not learned the first principles of society is like teaching astronomy or thermodynamics to men who have not learned the Newtonian laws of motion.”)।
(৪) কঁৎ, স্পেন্সার, মার্কস, ডুর্কহেইম, জিনসবার্গ প্রমুখ সমাজতত্ত্ববিদ তথা দার্শনিক সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। তার ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা বাস্তবভিত্তিক হয়েছে। জেঙ্কস্, মরগ্যান প্রমুখ সমাজবিজ্ঞানী রাষ্ট্রের বিবর্তন সম্পর্কিত বহু অর্থবহ তথ্য সরবরাহ করেছেন। তার ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমৃদ্ধ হয়েছে।
(৫) রাজনীতিক ধারণা সমাজব্যবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়: রাষ্ট্রনীতিকে সমাজতত্ত্ব থেকে পৃথক করা যায় না। কারণ কোন ব্যবস্থাকে তার পরিবেশ থেকে আলাদা করা যায় না। সামাজিক পরিবেশের দ্বারা রাজনীতিক ব্যবস্থা কিভাবে এবং কতটা প্রভাবিত হয় তা ডেভিড ইস্টন, ট্যালকট পারসনস, ম্যারিয়ন লেভি প্রমুখ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের রচনা থেকে জানা যায়। রাজনীতিক পরিবেশ বলতে সমাজকেই বোঝায়। রাজনীতিক ধ্যান-ধারণা সামাজিক পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানও সমাজতত্ত্বের উপাদান যোগায়। অর্থাৎ সমাজতত্ত্বও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাছে ঋণী।
(ক) রাষ্ট্র মানবসমাজের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান: সমাজতত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় কার্যাবলী সংক্রান্ত জ্ঞান সংগ্রহ করে। মানবসমাজে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন হিসাবে পরিচিত। রাষ্ট্রনৈতিক আইন-কানুনের নির্ধারিত পরিধির মধ্যে থেকেই সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের কার্যকলাপ পরিচালনা করে। রাষ্ট্রই সমাজবাসীদের সামাজিক আচার-আচরণকে কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকলাপ এবং সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের সামাজিক চাল-চলন যথাযথভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে হলে রাষ্ট্রের গঠন, প্রকৃতি ও কার্যাবলী সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। এবং এই ধারণা লাভের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতেই হয়।
(খ) আধুনিক সমাজতত্ত্বে রাষ্ট্রনীতির সমস্যাদির আলোচনা: প্লেটো, অ্যারিস্টটল, রুশো, বোঁদা, মেকিয়াভেলি প্রমুখ প্রাচীন রাষ্ট্র দার্শনিকগণ নিজেদের রাজনীতিক দর্শনের ভিত্তিতেই সামাজিক ধ্যান-ধারণা ও সমস্যাদির পর্যালোচনা করেছেন। বর্তমানে সমাজতত্ত্বের আলোচনায় রাষ্ট্রনীতির সমস্যাদি গুরুত্ব পাচ্ছে। রাজনীতিক নেতৃত্ব, বিপ্লব, পরিবর্তন, রাজনীতিক দল, স্বার্থগোষ্ঠী, জনমত, নির্বাচকমণ্ডলী প্রভৃতি বিষয় আধুনিক সমাজতত্ত্বের আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে।
সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। একে অপরের পরিপূরক। গার্ণার (Garner)-এর মতানুসারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা টানা সম্ভব নয়। তিনি বলেছেন : ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানীকে সমাজবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানীকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হতে হবে’ (“The Political Scientist ought to be at the same time a Sociologist and vice-versa.”)।
উভয় শাস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য আছে: কিন্তু উভয়ের মধ্যে এত গভীর যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব হল দুটি স্বতন্ত্র সামাজিক বিজ্ঞান। উভয়ের আলোচনাক্ষেত্র আলাদা। গিডিংস (Giddings) এর অভিমত হল উভয়ের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের আলোচনাক্ষেত্র একেবারে এক হয়ে যায়নি। উভয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা টানা সম্ভব। বর্তমানে উভয় শাস্ত্রের আলোচনা আলাদাভাবে করা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা যায়।
(১) সমাজতত্ত্বের আলোচনাক্ষেত্র ব্যাপকতর: সমাজতত্ত্ব সমাজবদ্ধ মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপের আলোচনা সমগ্রভাবে করে। মানুষের সামাজিক জীবনধারার সর্বতোমুখী আলোচনাই সমাজতত্ত্বের বিষয়। মানব সমাজের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, মানুষের সামাজিক, রাজনীতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি সকল দিকগুলির আলোচনাই সমাজতত্ত্বে করা হয়। তাই সমাজতত্ত্বের আলোচনাক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী ব্যাপক। বস্তুত, সমাজতত্ত্ব একটি মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান (Fundamental Social Science)। পক্ষান্তরে, সমাজবদ্ধ মানুষের রাষ্ট্রনৈতিক জীবন এবং রাষ্ট্র ও নাগরিকদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ ও পর্যালোচনার মধ্যেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গণ্ডী সীমাবদ্ধ। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল একটি বিশেষীকৃত সামাজিক বিজ্ঞান। গিলক্রিস্ট (Gilchrist) যথার্থই বলেছেন, ‘সমাজতত্ত্ব হল সমাজের বিজ্ঞান, আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল রাষ্ট্র বা রাজনীতিক সমাজের বিজ্ঞান। … সমাজতত্ত্ব অপেক্ষা রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধিকতর বিশেষীকৃত বিজ্ঞান’ (“Sociology is the science of society. Political Science is the science of the state of political society….. Political Science is a more specialised science than Socio-logy.”)।
(২) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় সমাজের কেবল সচেতন দিকটিই স্থান পায়। কিন্তু সমাজতত্ত্বের আলোচনায় সমাজের সচেতন ও অচেতন উভয় দিকই প্রতিফলিত হয়।
(৩) সমাজতত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তুলনায় প্রবীণ: ইতিহাসের বিচারে সমাজতত্ত্বের অনেক পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ প্রথমে সমাজবদ্ধ হতে শিখেছে। সমাজ গঠনের পর সমাজবদ্ধ মানুষের রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটেছে। অতঃপর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সৃষ্টি। সমাজজীবনের সূত্রপাত থেকে সমাজতত্ত্বের এবং তারপর রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের সূত্রপাত থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে। ডানিং (Dunning)-এর মতানুসারে, • জাতীয় জীবনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা শুরু হয়েছে সমাজতত্ত্বের অনেক পরে’ (Political Science begins much later in the life of the race than does sociology.”)।
(৪) আলোচনাক্ষেত্র এক নয়: সবরকম সামাজিক সম্পর্ক ও সংগঠন নিয়ে সমাজতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান কিন্তু কেবল রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা মূলতঃ সরকার ও অন্যান্য রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। পক্ষান্তরে, সকল প্রকার সামাজিক প্রতিষ্ঠান, তাদের কার্যাবলী, পারস্পরিক সম্পর্ক প্রভৃতি সকল বিষয়ের আলোচনাই সমাজতত্ত্বে স্থান পায়। ডানিং-এর মতানুসারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় প্রাক্- রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান স্থান পায় না। কিন্তু সমাজতত্ত্বে প্রাক্-রাজনীতিক মানুষের সকল প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
(৫) দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য: রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব সম্পূর্ণ পৃথক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মানবসমাজের বিবিধ কার্যকলাপের পর্যালোচনা করে। সমাজতত্ত্ব মানুষের সামাজিক জীবে পরিণত হওয়া সম্পর্কে আলোচনা করে। সমাজতত্ত্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখে কেন এবং কেমন করে মানুষ সামাজিক ও রাষ্ট্রনৈতিক প্রাণীতে পরিণত হল। অপরপক্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষকে রাষ্ট্রনৈতিক জীব হিসাবে গ্রহণ করেই মানুষের আচার আচরণ বিচার-বিশ্লেষণ করে।
(৬) বিষয়বস্তুর পার্থক্য: সমাজতত্ত্ব সংগঠিত অসংগঠিত নির্বিশেষে সকল রকম মানব সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা করে। পক্ষান্তরে, সমাজস্থ রাজনীতিক চেতনাসম্পন্ন মানবগোষ্ঠী সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করাই হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাজ।
(৭) সমাজতত্ত্বের আলোচনায় ব্যক্তির বহুমুখী পরিচয়কে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় ব্যক্তির রাজনীতিক পরিচয়কেই স্থান দেওয়া হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ব্যক্তিকে রাজনীতিক জীব হিসাবে দেখা হয়।
উপসংহার: উপরিউক্ত পার্থক্যগুলির উপস্থিতি সত্ত্বেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে অস্বীকার করা যায় না। এতদসত্ত্বেও উভয় শাস্ত্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্তমান। উভয় শাস্ত্রের পারস্পরিক সহযোগিতার উপর উভয়েরই সাফল্য ও সার্থকতা বহুলাংশে নির্ভরশীল। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে আলোচনা কখনই সফল ও সম্পূর্ণ হতে পারে না। তবে সমগ্র সমাজজীবনকে নিয়ে আলোচনা করে বলে সমাজতত্ত্ব হল একটি মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল একটি বিশেষীকৃত সামাজিক বিজ্ঞান। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইতিমধ্যে বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছে এবং ব্যাপক ও জটিল রূপ ধারণ করেছে। কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় বিষয় রাষ্ট্র মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক আলোচনার ক্ষেত্রে স্বাধীন স্থান দেওয়া হয়।
Leave a comment