রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল একটি অন্যতম সামাজিক বিজ্ঞান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার মুখ্য বিষয় হল মানুষ ও রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র হল সমাজবদ্ধ মানুষের সমাজজীবনের চরম অভিব্যক্তি। সেইজন্য মানব জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে যত বিজ্ঞান আছে সকলের সঙ্গেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নিকট সম্পর্ক বর্তমান। ইতিহাসের সঙ্গে এই সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে সম্পর্ক গভীর: ইতিহাস বলতে মানব সমাজের কথা ও কাহিনীকে বোঝায়। এই ইতিহাস হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল উপাদানসমূহের প্রধান উৎস। আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যতিরেকে ইতিহাস পাঠও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে গভীর সংযোগ বর্তমান। অধ্যাপক জন সীলি (John Seeley)-র মতে ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান ছাড়া ইতিহাসের আলোচনা নিষ্ফল “এবং ইতিহাস ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান ভিত্তিহীন’ (“History without Political Science has no fruit / Political Science without History has no root.”)। উক্তিটি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে গভীর যোগাযোগের অস্তিত্বকে স্পষ্ট করে তুলেছে।

(১) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূলে ইতিহাস বর্তমান: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূলে আছে ইতিহাসের অবদান। রাজনীতিক জীবনের ক্রমবিবর্তনের ধারা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ইতিহাস থেকে সংগ্রহ করা হয়। ইতিহাসের ঘটনা ভাণ্ডার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপাদান সরবরাহ করে। ঐতিহাসিক জ্ঞানের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রদর্শনের কাঠামো রচনা করেন। ইতিহাসের জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রের দার্শনিক আলোচনা একরকম অসম্ভব। সেইজন্য ফ্রীম্যান (Freeman) বলেন যে, ‘ইতিহাস হল অতীত রাষ্ট্রনীতি এবং রাষ্ট্রনীতি হল বর্তমান ইতিহাস’ (“History is past politics, politics present history.”)।

(২) ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিশ্বাসযোগ্য করে: আবার অতীত রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের গতি-প্রকৃতি সম্বন্ধে ধারণা না থাকলে বর্তমান রাজনীতিক মতবাদের ভিত্তি কল্পনাশ্রয়ী ও অবাস্তব হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ বর্তমানের রাষ্ট্রনৈতিক মতবাদকে পরীক্ষিত সত্যের সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করে। ঐতিহাসিক তথ্য যত বেশী সংগৃহীত হবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা হবে তত সত্যাশ্রয়ী ও বৈজ্ঞানিক অর্থাৎ ঐতিহাসিক তথ্যাদির সমর্থনই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তত্ত্বসমূহকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। তাই উইলোবী (Willoughby ) যথার্থই বলেছেন যে, ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে গভীরত্ব প্রদান করে’ (“History provides the third dimension of Political Science.”)। বার্নস (Burns)-এর মতানুসারে ঐতিহাসিক তথ্যসমূহ বর্তমানকে সমালোচনার ভিতর দিয়ে ভবিষ্যৎ গঠনের পথ করে দেয়।

(৩) রাষ্ট্র ও সরকারের বিবর্তন ইতিহাস থেকে জানা যায়: আবার ইতিহাসের আলোচনা ছাড়া রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সংগঠন ও কার্যাবলী সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা যায় না। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে রাষ্ট্রের স্বরূপ, সরকারের প্রকৃতি, প্রাচীন শাসকদের রাষ্ট্রপরিচালনা—এই সব বিষয়ে যাবতীয় তথ্য ইতিহাসই রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে দিতে পারে। আর রাষ্ট্রের গঠন, রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ইতিহাস প্রভৃতি হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। এই কারণে জেলিনেক (Jellinek)-এর অভিমত অনুসারে কেবল রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ও কার্যকলাপ বুঝবার জন্যও ইতিহাসের আলোচনা আবশ্যক।

(৪) বিভিন্ন রাজনীতিক তত্ত্ব ঐতিহাসিক জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, সমাজতন্ত্রবাদ, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি রাজনীতিক মতবাদ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

(৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় ইতিহাসের ভিত্তিতেই তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে উঠেছে। রাজনীতিক ধ্যান-ধারণাকে অতীতের সঙ্গে তুলনা করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মানবসমাজ ও শাসনব্যবস্থাকে ঐতিহাসিক পটভূমিকায় অনুধাবন করা যায়।

(ক) ইতিহাসও রাষ্ট্র-বিজ্ঞানের কাছে ঋণী: ইতিহাসও রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে বহুবিধ উপাদান সংগ্রহ করে। অর্থাৎ ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে ঋণী। ইতিহাস যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে তার অন্তর্নিহিত সত্যের সন্ধান দেয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞানও ইতিহাসের আলোচনাকে পরিপূর্ণতা দান করে। রাষ্ট্রনৈতিক জ্ঞান ছাড়া ইতিহাস পাঠ সার্থক হতে পারে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলি পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর উপর আলোকপাত করে এবং ইতিহাসের স্বরূপ উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। রাজনীতিক ঘটনাবলী ও তার তাৎপর্য বাদ দিলে ইতিহাসের আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যেমন—জাতীয়তাবাদ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, সমাজতন্ত্রবাদ প্রভৃতি রাষ্ট্রনৈতিক ধারণাগুলিকে বাদ দিলে ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় ইতিহাস সম্পূর্ণ ও অর্থবহ হতে পারে না।

(খ) ইতিহাসেও উদ্দেশ্যমূলক আলোচনা থাকে: এই উদ্দেশ্য হল আদর্শ সমাজজীবন প্রতিষ্ঠা। এই উদ্দেশ্যের জন্য ইতিহাসে রাষ্ট্রনৈতিক ঘটনাসমূহ স্থান পায়। বিভিন্ন রাজবংশের উত্থান-পতনের আলোচনা ইতিহাসের অন্যতম বিষয়বস্তু।

(গ) রাষ্ট্রনৈতিক মতবাদের বিশ্লেষণ: রাষ্ট্রনৈতিক বিভিন্ন মতবাদের পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের সাহায্যে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ধারণ ও ইতিহাসের দায়িত্ব। যেমন, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা, ঔপনিবেশিকতাবাদ বিরোধী বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন ভারতশাসন আইন প্রভৃতিকে বাদ দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস যথার্থ ও সম্পূর্ণ হতে পারে না।

(ঘ) রাষ্ট্রনৈতিক ধারণার দ্বারা ইতিহাস প্রভাবিত হয়: রাষ্ট্রনৈতিক ধ্যান-ধারণা বা কারণের দ্বারা ইতিহাসের ঘটনা প্রভাবিত হয়। একটি বিশেষ যুগে বা সমাজে প্রভুত্বকারী রাষ্ট্রনৈতিক আদর্শ বা ধ্যান ধারণা সেই যুগে বা সমাজে ইতিহাসকে প্রভাবিত করে। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর ইতিহাস বিভিন্ন রাজনীতিক ঘটনাবলীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ফরাসী বিপ্লব এবং ইংল্যাণ্ডের গৌরবময় বিপ্লব হল সমকালীন উল্লেখযোগ্য রাজনীতিক ঘটনা। এই সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার পিছনে রাজনীতিক উপাদানের অবদান অনস্বীকার্য।

(ঙ) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পদ্ধতি ইতিহাসে অনুসৃত হয়: আধুনিক ইতিহাস চর্চায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রয়োগ পদ্ধতি ও কলা-কৌশল অনেক ক্ষেত্রে অনুসৃত হচ্ছে। রাষ্ট্রনীতির গবেষণার অভিজ্ঞতা ইতিহাসের গবেষণাকে প্রভাবিত করছে। ঐতিহাসিকগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মত বিশেষ শ্রেণীর কার্যকলাপ বা ঘটনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মত ইতিহাসেও নির্বাচন (selection), পছন্দ (choice) প্রভৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

(চ) ইতিহাস চর্চার গতিপথ রাষ্ট্র-নীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়: বর্তমানে ইতিহাস চর্চার গতিপথ বহুলাংশে রাষ্ট্রনীতির দ্বারা প্রভাবিত, নিয়ন্ত্রিত ও নির্ধারিত হয়। ইতিহাসের অনুশীলন রাজনীতিক ব্যবস্থার পরিমণ্ডলের মধ্যে কার্যকর হতে দেখা যায়। বর্তমানে ইতিহাস চর্চাকে রাজনীতি-নিরপেক্ষ বলা যায় না। কোন একটি দেশের ইতিহাস-চিত্তা বিশেষ কোন রাজনীতিক দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস পরস্পরের পরিপূরক। উভয়েরই উদ্দেশ্য হল মানবজীবনের সুখ দুঃখের কথা কাহিনীর আলোচনা। তাই উভয়ের মধ্যে গভীর যোগাযোগ বর্তমান। লর্ড ব্রাইস-এর অভিমত হল, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইতিহাস ও রাষ্ট্রনীতির এবং অতীত ও বর্তমানের মাঝখানে অবস্থিত। একটি থেকে উপাদান সংগ্রহ করে অপরটির ক্ষেত্রে ব্যবহার করে” (“Political Science stands midway between History and Politics, between the past and the present. It has drawn its material from the one, it has to apply them to the other.”)। গেটেলের অভিমত অনুসারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের আলোচনা পরস্পরের সহায়ক ও পরিপূরক।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে গভীর যোগাযোগ আছে। এতদ্‌সত্ত্বেও ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান নয় এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানও ইতিহাস নয়। ইতিহাসকে অতীতের রাষ্ট্রনীতি এবং রাষ্ট্রনীতিকে বর্তমানের ইতিহাস বলা সঙ্গত নয়। কারণ উভয়ের আলোচনা ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে।

(১) ইতিহাসের বিষয়বস্তু ব্যাপকতর: ইতিহাসের আলোচনার পরিধি তুলনামূলকভাবে ব্যাপক। রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের বিবরণ ছাড়াও ইতিহাসে ভাষা, সাহিত্য, ললিতকলা, আচার, ধর্ম—এক কথায় সমাজজীবনের সর্বতোমুখী বিবর্তনের ঘটনাবলী সংরক্ষিত থাকে। পক্ষান্তরে, মানুষের রাজনীতিক জীবনের সমস্যাবলী এবং রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চৌহদ্দি সীমাবদ্ধ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রনৈতিক বিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলিকেই কেবল বেছে নেয়। লীকক (Leacock)-এর মতানুসারে ইতিহাসের কিছুটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অংশ, পুরোটা নয় (“Some history is part of Political Science.”)। অধ্যাপক গার্ণারও যথার্থই বলেছেন যে, ইতিহাসের সবটাই অতীতের রাজনীতি নয়। তাই ইতিহাসকে অতীতের রাষ্ট্রনীতি বললে, এর পরিধি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। সুতরাং সকল ইতিহাসই রাষ্ট্রনীতি নয়।

(২) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সব কিছু ইতিহাসভিত্তিক নয়: আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর সবটাই ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতি সংক্রান্ত মতবাদসমূহের অনেকগুলি কল্পনাশ্রয়ী (speculative)। এগুলি দার্শনিক তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাছাড়া, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সংক্রান্ত সূত্রগুলিও ইতিহাসের বিষয়বস্তু নয়। বস্তুতপক্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তত্ত্বের আলোচনায় এমন অনেক মতবাদ আছে যেগুলি দর্শনমূলক, মোটেই ইতিহাসভিত্তিক নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে তাই বর্তমান ইতিহাস বলা যায় না। কারণ সকল রাজনীতিক ঘটনাই ইতিহাস নয়।

(৩) ইতিহাসই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একমাত্র উৎস নয়: ইতিহাসই আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একমাত্র ভিত্তি নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য ইতিহাস ছাড়াও আরও অনেক বিষয় থেকে উপাদান ও দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করেন। কোন বিপ্লব বিশ্লেষণের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ছাড়াও সমসাময়িক অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বহু বিষয়ের উপর নির্ভর করেন। সুতরাং ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একমাত্র উৎস নয়। বার্কার (Barker) বলেন, ‘ঐতিহাসিক আলোচনার উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এমন উন্নত মানের রাষ্ট্রতত্ত্ব পাওয়া যায়’ (“You may have a Political theory which is a good theory without being rooted in historical study.”)।

(৪) আলোচনার প্রকৃতি ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে পার্থক্য: আবার ইতিহাস থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান উপাদান ও তথ্য সংগ্রহ করলেও উভয়ের আলোচনার প্রকৃতি ও পদ্ধতি আলাদা। ইতিহাসের আলোচনা পদ্ধতি বর্ণনামূলক। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা-পদ্ধতি প্রধানত দৰ্শনমূলক। ইতিহাস কালের পরম্পরায় বাস্তব ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে। নৈতিকতা ও মূল্যমানের বিচার-বিশ্লেষণ সাধারণভাবে ইতিহাসের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা ঐতিহাসিক তথ্যভিত্তিক হলেও, এই আলোচনা তথ্যের পরিধিকে অতিক্রম করে যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান আদর্শ নিয়ে আলোচনা করে। ন্যায়-নীতি, ঔচিত্য-অনৌচিত্য প্রভৃতি মূল্যবোধ সম্পর্কিত আলোচনাও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্থান পায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাজনীি প্রক্রিয়ার সূত্র সন্ধানে আগ্রহী নন।

(৫) মন্তব্য: একজন ইতিহাসবিদের মত নির্দিষ্ট সময়সূচী মেনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সব সময় রাজনীতিক তথ্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারেন না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সব সময় ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেন না।

বস্তুতপক্ষে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস দুটি পৃথক সামাজিক বিজ্ঞান। তাদের প্রত্যেকের আলোচনাক্ষেত্র আলাদা। তবুও উভয় শাস্ত্রের মধ্যে সম্পর্ক বিশেষ ঘনিষ্ঠ। পারস্পরিক সহযোগিতার উপর উভয়েরই সাফল্য ও সার্থকতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। বার্জেস (Burgess) -এর মতানুসারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইতিহাস পরস্পর পৃথক হয়ে গেলে একটি পঙ্গু হবে বা প্রাণ হারাবে এবং অপরটি আলেয়ায় পরিণত হবে।