ভূমিকাঃ মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের জীবন ও সমাজ গতিশীল। গতিশীলতার কারণে এর বিবর্তন ঘটছে ও ঘটবে। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কারণে মানুষ কতগুলাে নিয়ম মেনে চলে। এসব নিয়ম-কানুনের উন্নত প্রকাশ হলাে রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি। অন্যদিকে মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের চরম অভিব্যক্তি হলাে রাষ্ট্রশক্তি। তাই যে শাস্ত্র রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যাবলী নিয়ে আলােচনা করে, তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ। নিম্নে উভয়ের সম্পর্ক নিয়ে আলােচনা করা হলাে –
(১) উভয়ের ভিত্তি একঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি মূলত এক। উভয় বিজ্ঞানই সামাজিক বিজ্ঞানের দু’টি শাখা মাত্র। আধুনিক যুগে More specialisation বা অধিকতর বিশেষায়নের ফলে উভয়ে দু’টি ভিন্ন ও স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
(২) বিষয়বস্তুঃ সমাজের মানুষ ও রাজনৈতিক সমাজের সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের কার্যাবলী আলােচনা করে। মূলত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয় রাষ্ট্র ও রাজনীতি। আর সমাজবিজ্ঞান সমাজের সদস্য হিসাবে মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক জীবন প্রভৃতির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে আলােচনা করে।
(৩) পরিপূরকঃ সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরস্পর পরিপূরক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের অঙ্গ-সংগঠন ও সংস্থাসমূহ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানকে অবহিত করে। আর সমাজবিজ্ঞান সমাজের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সংগঠন ও সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে অবহিত করে। সুতরাং সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরস্পর পরিপূরক।
(৪) একই উদ্দেশ্যঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান উভয়ের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। উভয়ই সমাজ ও রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক ও বাস্তব বিষয়গুলাে গভীর পর্যবেক্ষণ এবং অধ্যয়নের মাধ্যমে সচেতন নাগরিক তৈরির প্রচেষ্টা চালায়। উদ্দেশ্যর অভিন্নতা উভয়ের সম্পর্ককে আরাে গভীর করেছে।
পড়ুনঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক সংক্ষেপে আলােচনা কর
(৫) অভিন্ন সত্তাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান উভয়ই এক ও অভিন্ন সত্তা ছিল। বর্তমান যুগে অধিকতর বিশেষায়নের ফলে উভয়ের পরিধি ও বিষয়বস্তু আরাে বিস্তৃত হয়েছে মাত্র। তবে এর বিস্তৃতির মাধ্যমে উভয়ের অধ্যয়নের প্রয়ােজনীয়তা আরাে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, কিছু কিছু পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল। একটিকে বাদ দিলে অপরটির কোন পরিপৰ্ণতা থাকে না। উভয় বিজ্ঞানের মাঝে কোনাে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, বরং আছে সুগভীর এক সেতুবন্ধন।
Leave a comment