কোনাে ব্যক্তি, বস্তু বা উপাদান সম্পর্কে রাশিতথ্য সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন গাণিতিক পদ্ধতির মাধ্যমে সেই রাশিতথ্যের সংখ্যাগত মান নির্ণয় করে তার উপস্থাপনা, বিশ্লেষণ, তুলনা ও ব্যাখ্যা করা হয় যে বিজ্ঞানে তাকে রাশিবিজ্ঞান বলে।


বিভিন্ন ব্যক্তি, বস্তু বা উপাদান সম্পর্কে সংগৃহীত, পরিমাপযােগ্য ও সংখ্যা দ্বারা প্রকাশিত যে-কোনাে তথ্যকে রাশিতথ্য বলে।


রাশিতথ্য সংগ্রহের জন্য অনুসন্ধান ক্ষেত্রের ব্যক্তি, বস্তু বা উপাদানের সমষ্টিকে পূর্ণক বা সমগ্রক বলে। যেমন— কোনাে স্কুলের সব ছাত্রের সমষ্টি হল পূর্ণক বা সমগ্রক।


নমুনা বলতে বােঝায় সমগ্রকের কিছু নির্বাচিত অংশকে। যেমন—কোনাে স্কুলের ছাত্রদের গড় বয়স নির্ণয় করার জন্য সব ছাত্রের পরিবর্তে কয়েকটি ছাত্রকে নমুনা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।


সংখ্যার মাধ্যমে উপযুক্ত এককের দ্বারা অথবা পরিসংখ্যানে যেসব বৈশিষ্ট্যের মান সংখ্যায় গ্রহণ করা হয় তাদের চলক বলে। যেমন—ওজন, বয়স, উচ্চতা, উয়তা ও বৃষ্টিপাত ইত্যাদির সংখ্যাগত মান এক-একটি চলক।


যে চলকে পূর্ণসংখ্যায় অথবা ভগ্নাংশে মান গৃহীত হয় তাকে অবিচ্ছিন্ন চলক বলে। যেমন—দৈর্ঘ্য, ওজন, উচ্চতা, বয়স ইত্যাদি.


যে চলকে কতকগুলি বিচ্ছিন্ন মান কেবলমাত্র পূর্ণসংখ্যায় গৃহীত হয়, ভগ্নাংশে কখনােই গৃহীত হয় না তাকে বিচ্ছিন্ন চলক বলে। যেমন—কোনাে গ্রামের বাড়ির সংখ্যা, মানুষের সংখ্যা ইত্যাদি। এই মানগুলিকে ভগ্নাংশে গ্রহণ করা যায় না।


অধ্যাপক প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ ভারতে রাশিবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত।


সংগ্রহের উৎস অনুযায়ী রাশিতথ্য দুই প্রকার, যথা- (i) প্রাথমিক রাশিতথ্য (Primary Data) ও (ii) গৌণ বা অপ্রাথমিক রাশিতথ্য (Secondary Data).


তথ্য সংগ্রহকারী যখন সরাসরি অনুসন্ধান ক্ষেত্র (Field) থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে প্রাথমিক রাশিতথ্য বলে।


যেসব তথ্য অনুসন্ধান ক্ষেত্র থেকে সরাসরি সংগ্রহ না করে বিভিন্ন প্রকাশিত (পত্রপত্রিকা, বই, অফিসের নথিপত্র ইত্যাদি) ও অপ্রকাশিত উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয় তাকে গৌণ বা অপ্রাথমিক রাশিতথ্য বলে।


বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তথ্য চার প্রকার যথা- (i) গুণগত রাশিতথ্য, (ii) সংখ্যাগত রাশিতথ্য, (iii) সময়ভিত্তিক রাশিতথ্য ও (iv) দৈশিক রাশিতথ্য।


গুণগত তথ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—এই ধরনের তথ্যকে সংখ্যার মাধ্যমে পরিমাপ করা যায় না।


মানুষের ভাষা, ধর্ম, জাতি, শিক্ষাগত যােগ্যতা ইত্যাদি গুণগত তথ্য, কারণ এগুলিকে সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।


বিন্যাসের প্রকৃতি অনুযায়ী রাশিতথ্য দুই প্রকার, যথা- (i) অসজ্জিত (Raw) রাশিতথ্য, (ii) সজ্জিত (Array) রাশিতথ্য।


যেসব রাশিতথ্যে চলকের মানসমূহ কোনাে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে সাজানাে থাকে না তাকে অসজ্জিত রাশিতথ্য বলে। প্রাথমিক রাশিতথ্যের ক্ষেত্রে এই প্রকার বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।


যেসব রাশিতথ্যে চলকের মানসমূহ একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানাে থাকে তাকে সজ্জিত রাশিতথ্য বলে। এক্ষেত্রে সাধারণত চলকের মানগুলি উর্ধ্বক্রম অথবা অধঃক্রম অনুসারে সাজানাে থাকে।


পরিসংখ্যা বিভাজন অনুযায়ী তথ্য দুই প্রকার যথা (i) অশ্রেণিবদ্ধ তথ্য ও (ii) শ্রেণিবদ্ধ তথ্য।


সংগৃহীত রাশিতথ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন প্রসারের মধ্যে অবস্থিত মানগুলিকে যখন কোনাে শ্রেণি ব্যবধানের অন্তর্গত না করে অবিন্যস্ত অবস্থায় রাখা হয় তখন তাকে অশ্রেণিবদ্ধ রাশিতথ্য বলে।


সংগৃহীত প্রাথমিক রাশিতথ্যকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য ও হিসেবের সুবিধার জন্য যখন সারণির আকারে উর্ধ্বক্রম অথবা অধঃক্রমে অনেকগুলি দলে ভাগ করা হয় তখন তাকে শ্রেণিবদ্ধ রাশিতথ্য বলে।


রাশিতথ্যকে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়—(i) বিবরণের মাধ্যমে (ii) সারণি বা ছকের মাধ্যমে এবং (ii) লেখচিত্র (Graph)-এর মাধ্যমে।


আবহাওয়া দপ্তর থেকে সংগৃহীত আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যকে গৌণ বা অপ্রাথমিক তথ্য বলা হয়।


ক্ষেত্র সমীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যকে প্রাথমিক তথ্য বলা হয়।


কোনাে বণ্টনের মধ্যে সংখ্যাগত চলকের মানের পুনরাবৃত্তির বা মানের উপস্থিতির যে সংখ্যা তাকে পরিসংখ্যা বলে।


শ্রেণি ব্যবধানের অন্তর্গত কোনাে পরিসংখ্যাকে বণ্টনের। মােট পরিসংখ্যার সাপেক্ষে অনুপাত অথবা শতকরায় প্রকাশ করা হলে তাকে আপেক্ষিক পরিসংখ্যা বলে।


সংগৃহীত রাশিতথ্য বিস্তৃত ও বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকে। সেই রাশিতথ্যকে উর্ধ্বক্রম অথবা অধঃক্রম অনুযায়ী এক-একটি শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করার পদ্ধতিকে পরিসংখ্যা বিভাজন বলে।


কোনাে বণ্টনের মধ্যে চলকের মান শূন্য হলে শ্রেণি ব্যবধান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বর্জন পদ্ধতি (Exclusive Method) অবলম্বন করা হয়।


যখন পরিসংখ্যা বিভাজনে প্রতিটি শ্রেণি ব্যবধানের দুই প্রান্তীয় মান নির্দিষ্ট থাকে এবং কোনাে শ্রেণির ঊর্ধ্বসীমার মান ও তার ঠিক পরবর্তী শ্রেণির নিম্নসীমার মান আলাদা হয় তাকে শ্রেণি সীমা বলে।


শ্রেণিবদ্ধ পরিসংখ্যা বিভাজনে যখন কোনাে শ্রেণির উর্ধ্বসীমা যে মান দিয়ে শেষ হয় ঠিক তার পরবর্তী শ্রেণির নিম্নসীমা ঐ একই মান দিয়ে শুরু হয়, তখন তাকে শ্রেণি সীমানা বলে।


কোনাে শ্রেণির প্রতি একক শ্রেণি দৈর্ঘ্যে যে পরিমাণ পরিসংখ্যা বর্তমান থাকে তাকে পরিসংখ্যা ঘনত্ব বলে।


কোনাে শ্রেণির ঠিক মাঝখানের মানটিকে মধ্য বিন্দু বা মধ্য মান (Mid Point) বা শ্রেণি চিহ্ন (Class Mark) বলে।


কোনাে শ্রেণির নিম্ন সীমানা এবং উর্ধ্ব সীমানার মধ্যে পার্থক্যকে শ্রেণি প্রসার বা ব্যবধান বলা হয়।


অনুভূমিক সরলরেখার ওপর অঙ্কিত পরস্পর সংলগ্ন একগুচ্ছ আয়তক্ষেত্র যাদের অনুভূমিক বিস্তার শ্রেণি ব্যবধানকে এবং উল্লম্ব উচ্চতা পরিসংখ্যানকে নির্দেশ করে, তাকে আয়তলেখ বলে।


আয়তলেখের উল্লম্ব অক্ষে পরিসংখ্যানকে প্রকাশ করা হয়।


আয়তলেখের অনুভূমিক অক্ষে শ্রেণি ব্যবধান বা শ্রেণি প্রসার প্রকাশ করা হয়।


প্রত্যেক শ্রেণির মধ্য বিন্দুর সাপেক্ষে সেই শ্রেণির পরিসংখ্যাকে উল্লম্ব অক্ষে বসিয়ে চিহ্নিত বিন্দুগুলিকে সরলরেখার সাহায্যে যােগ করলে যে চিত্র পাওয়া যায় তাকে পরিসংখ্যা বহুভুজ বলে।


প্রত্যেক শ্রেণির মধ্য বিন্দুর সাপেক্ষে সেই শ্রেণির পরিসংখ্যাকে উল্লম্ব অক্ষে বসিয়ে চিহ্নিত বিন্দুগুলিকে মসৃণ বক্ররেখার সাহায্যে যােগ করলে যে চিত্র পাওয়া যায় তাকে পরিসংখ্যা রেখা বলে।


পরিসংখ্যা রেখার সাহায্যে গড় (Mean), মধ্যমা (Median) ও ভূয়িষ্ঠক (Mode) দেখানাে হয়।


যে-কোনাে রাশিতথ্যের বণ্টনগত কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। দেখা যায় যে, বণ্টনের মধ্যে মানগুলির তারতম্য থাকা সত্ত্বেও কোনাে একটি মানকে ঘিরে অন্য মানগুলির কেন্দ্রীভবনের প্রবণতা আছে। রাশিতথ্যের এই প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।


যে কেন্দ্রীয় মানের চতুর্দিকে রাশিতথ্যের অন্যান্য মানগুলির কেন্দ্রীভবনের প্রবণতা থাকে সেই মানকে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপক বলা হয়।


কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপকগুলি হল গড় (Mean), মধ্যমা (Median) ও ভূমিষ্ঠক (Mode)।


কতকগুলি সমজাতীয় রাশির যােগফলকে রাশিগুলির মােট সংখ্যার দ্বারা ভাগ করে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকে রাশিগুলির গড় মান বলে।


গড় বা মধ্যক তিন প্রকারের- (i) যৌগিক গড় (Arithmetic Mean), (ii) গুণােত্তর গড় (Geometric Mean) ও (iii) বিবর্ত যৌগিক গড় (Harmonic Mean)।


কোনাে রাশিতথ্যকে যদি মানের উর্ধ্বক্রম বা অধঃক্রম সাজানাে হয়, তখন এর ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত মানকে মধ্যমা বলা হয়।


যে-কোনাে রাশিতথ্যে চলকের সর্বাধিক পরিসংখ্যাবিশিষ্ট মানকে ভূয়িষ্ঠক বা সংখ্যাগুরু মান বলে।


বণ্টনের সব মান থেকে গাণিতিক গড় চিহ্ন ব্যতিরেকে অন্তরফলের সমষ্টিকে মােট পরিসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায় তাকে গাণিতিক গড়ের সাপেক্ষে গড় বিচ্যুতি বলে।


বিচ্যুতির বর্গসমষ্টির গড়ের বর্গমূলকে প্রমাণ বিচ্যুতি বলে।


বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক বিষয়গুলির সম্পর্কে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানকে বিশ্লেষণ করতে এবং ভবিষ্যত প্রকৃতির স্বরূপ নির্ধারণ করতে ভূগােলে রাশিবিজ্ঞানের ব্যবহার করা হয়।

Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)