ভবভূতি রচিত যে তিনখানি নাটকের সন্ধান পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে কোন্‌টি কখন রচিত হয়েছিল, এ বিষয়ে কৃত-নিশ্চয় হবার উপায় নেই। তবে, রচনার অপরিপক্কতা এবং অপরিণতির চিহ্নকে যদি অনভিজ্ঞতার ফল বলে মেনে নেওয়া যায়, তবে ‘মহাবীরচরিত ‘কেই ভবভূতির প্রথম রচনা বলে নির্দেশ করতে হয়। শুধু রচনার অপরিপক্কতাই নয়, ভবভূতি তাঁর তিনটি রচনারই প্রস্তাবনাতে আত্মপরিচয় দান করলেও ‘মহাবীরচরিতে’ তা’ বিস্তৃততর, সম্ভবত, এটি প্রথম রচনা বলেই এরূপ হওয়া সম্ভবপর। এই নাটকের প্রস্তাবনাতেই ‘অপূর্বত্বাৎ প্রবন্ধস্য’ উক্তি থেকে মনে হয়, এর পূর্বে তিনি কিছু রচনা করেন নি; এ ছাড়া ‘মালতীমাধব’ নাটকের প্রথম অঙ্কের ষষ্ঠ শ্লোকে তিনি তাঁর পূর্ববর্তী রচনার ইঙ্গিত করেছেন, যা’ ‘মহাবীরচরিত কৈই নির্দেশ করে। এ সমস্ত কারণে ‘মহাবীরচরিত’কেই ভবভূতির প্রথম রচনা বলে মেনে নিতে হয়; কিন্তু এর বিরুদ্ধে একটি প্রবল যুক্তি উত্থাপিত হয়। এ বিষয়ে ড. সুকুমার সেনের বক্তব্য উদ্ধার করা যাচ্ছে। তিনি লিখেছেন, “নাটকটির পঞ্চম অঙ্কের খানিকটা পর্যন্ত ভবভূতির লেখা, বাকিটা অপরের লেখা, – এমন একটা জনশ্রুতি প্রাচীন টীকাকারেরা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। এ কথা সত্য হইলে বুঝিতে হইবে যে নাটকটি ভবভূতির শেষ রচনা এবং সমাপ্ত করিবার আগেই তাঁহার মৃত্যু হইয়াছিল।” ভবভূতির প্রথম রচনা সম্পর্কে ড. সেন মনে করেন, “মালতীমাধব’ ভবভূতির প্রথম রচনা। ইহাতে অপর দুইটি নাটকের মতো প্রৌঢ়িমা ও গাঁথনিতে দৃঢ়তা ও সামঞ্জস্য নেই। প্রস্তাবনায় কবির আত্মশ্লাঘাটুকুও তাহাই নির্দেশ করে।” মতান্তরে রচনার উৎকর্ষ-বিচারে অনেকেই ‘উত্তররামচরিত ‘কেও ভবভূতির সর্বশেষ রচনা বলে মনে করেন। অতএব ভবভূতির নাটকগুলি ক্রমপরম্পরা বিষয়ে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভবপর নয়।

১। মহাবীরচরিত : ভবভূতি-রচিত ‘মহাবীরচরিত’ তথা ‘বীরচরিত’ নাটকটি রামচন্দ্রের জীবন কাহিনী অবলম্বনে রচিত হয়েছে। রামচন্দ্রের সিদ্ধাশ্রমে প্রবেশ থেকে আরম্ভ করে রাবণবধের পর অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত কাহিনী নাটকে স্থান পেয়েছে। মূলত বাল্মীকি-রামায়ণকে অবলম্বন করলেও ভবভূতি বহুস্থলেই স্বাধীনচিত্ততার পরিচয় দিয়ে নাটকে অনেক নতুন কাহিনী ও রস পরিবেশন করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তাদের কয়েকটি উল্লেখ করা চলে।

কাহিনী : জনকগৃহে হরধনু ভঙ্গ করবার পূর্বেই মুনি বিশ্বামিত্রের আশ্রমে রাম-লক্ষ্মণের সঙ্গে সীতা-ঊর্মিলার সাক্ষাৎকার ঘটে এবং তাঁদের মধ্যে পূর্বরাগও সঞ্চারিত হয়। এদিকে লক্ষাধিপতি রাবণ সীতাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে মিথিলায় দ্রুত পাঠিয়েছিলেন; কিন্তু সেই দূত প্রত্যাখ্যাত হয়ে লঙ্কায় ফিরে গিয়ে রাম-সীতা-বিবাহের বিবরণ জানালে রাবণ রামচন্দ্রের ওপর বিদ্বেষ ভাব পোষণ করতে থাকেন এবং প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করবার জন্যই ভগিনী শূর্পণখাকে অযোধ্যায় প্রেরণ করেন। শূর্পণখাই মন্থরার ছদ্মবেশে কৈকেয়ীকে দুর্বুদ্ধি দিয়ে ঈপ্সিত পথে চালনা করে এবং তারই ফলে রামচন্দ্রের বনবাস। লঙ্কাপতি রাবণ কিস্কিন্ধ্যাপতি বালিকেও স্বমতে এনে তাকে রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে উত্তেজিত এবং বিদ্বিষ্ট করে তোলেন; অপরপক্ষে রাবণ-ভ্রাতা বিভীষণ সিংহাসন লাভের উদ্দেশ্যে সুগ্রীবের সঙ্গে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রামচন্দ্রের পক্ষাবলম্বন করেন। দ্বিপাক্ষিত যুদ্ধে রামচন্দ্রের হস্তে বালিবধ এবং রাবণবধ সাধিত হয়। সমগ্র যুদ্ধটি বর্ণিত হয়েছে ইন্দ্রচিত্ররথ-সংবাদ মাধ্যমে। ভবভূতি নাটকে আরো দুটি নতুন চরিত্রের অবতারণা করেছেন—একটি শোকাকুলা ‘লঙ্কা’ অপরটি তারই সান্ত্বনাদাত্রী ‘অলকা’। সীতাসহ অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনে কাহিনীর পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

কাব্যবিচার : সাত-অঙ্কবিশিষ্ট ‘মহাবীরচরিত’ নাটকটির কাহিনী ভবভূতির নিজস্ব না হলেও এতে তিনি যথেষ্ট মৌলিকত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বাল্মীকি রামায়ণের বহির্ভূত কাহিনীসমূহ যদি তিনি অপর কোনো সূত্র থেকেও আহরণ করে থাকেন, তবে তাদের সংযোজনায় তিনি যে যথার্থ কল্পনাশক্তির পরিচয় দিয়েছেন, তা’ স্বীকার করতেই হয়। চরিত্র-চিত্রণেও ভবভূতি যথেষ্ট কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। ‘মহাবীরচরিতে’ রামচরিত্র একেবারে নিষ্কলুষ এমন কি বাল্মীকি-রামায়ণেও রাম-চরিত্রে যে সমস্ত দুর্বলতার পরিচয় পাওয়া যায়, এখানে তার উল্লেখ নেই। এই নাটকে অপর একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র ‘পরশুরাম’ চরিত্র। রাবণের সচিব মাল্যবানের নির্দেশেই মহাবীর পরশুরামকে জনকভবনে হরধনুভঙ্গের সংবাদ জানিয়ে দিয়ে তাঁকে উত্তেজিত ও প্ররোচিত করা হয়। রামচন্দ্রকে শাসন করবার জন্য তিনি যে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছেন, তার মধ্য দিয়ে ভবভূতি অদ্ভুত, বীর, রুদ্র ও ভয়ানক রস-পরিবেশনে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বশিষ্ট এবং বিশ্বামিত্রের নিষেধ অমান্য করে তিনি গুরুবাকালঙ্ঘন-নিমিত্ত প্রায়শ্চিত্ত করতেও সম্মত, তবু ‘শাস্ত্ৰগ্ৰহমহাব্রত’ ত্যাগ করবেন না। ভাষাব্যবহারে ভবভূতি নাটকোচিত সহজ সরল ভাষারীতি ত্যাগ করে সমাসবহুল ভারি ভারি শব্দ ব্যবহার করে নাটকের গতিকে মন্থর করে দিয়েছেন। দীর্ঘ বক্তৃতার বাহুল্যও পীড়াদায়ক। সাধারণভাবে ভবভূতির নাটকে নাটকীয়তা অপেক্ষা তাঁর কাব্যকৃতির মূল্যবত্তাই বেশি স্বীকৃতি লাভ করলেও আলোচ্য নাটকে কলা-কৌশলের দিক থেকে তিনি অন্ততঃ ‘মালতীমাধব’ অপেক্ষা অধিকতর উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছেন। তবে, সব মিলিয়ে অনুমিত হয় যে, এই নাটক সমকালীন পাঠক-দর্শকদের তুষ্টিবিধানে বিশেষ সমর্থ হয়নি বলেই সম্ভবত পরবর্তী ‘মালতীমাধব’ নাটকে তিনি ক্ষুব্ধচিত্তে ভবিষ্যৎকালে কোনো সমান-ধর্মা পাঠকের আবির্ভাব কামনা করেছেন, যিনি তাঁর কাব্যের যথার্থ মর্যাদাদানে সক্ষম হতে পারেন। নাটকের শেষ দুটি অঙ্ক সুব্রহ্মণ্য নামক অপর কোনো ব্যক্তির রচনা বলে কেউ কেউ মনে করে থাকেন। গ্রন্থটি যদি কবির শেষ রচনা হয়ে থাকে এবং গ্রন্থ-সমাপ্তির পূর্বেই যদি গ্রন্থকার কাল কবলিত হয়ে থাকেন, তবেই এরকমটি হতে পারে।

২। মালতীমাধব : ভবভূতি-রচিত ‘মালতীমাধব’-এর স্থান রচনাকালের দিক থেকে ক্রমপর্যায়ে কোথায় অবস্থিত, তা’ নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভবপর নয়, কারণ বুধমণ্ডলী এ বিষয়ে অভিন্ন মতে উপনীত হতে পারেন নি। সব নাটকের কাহিনীটি জটিল।

কাহিনী : মন্ত্রী ভূরিবসু এবং অমাত্য দেবরাত ছিলেন বাল্যবন্ধু ও সতীর্থ; উভয়েই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন যে তাদের পুত্রকন্যাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবেন। এই উদ্দেশ্যে দেবরাত তার পুত্র মাধবকে পদ্মাবতী নগরে পাঠিয়ে পরিব্রাজিকা কামন্দকীকে তাদের বিবাহ-ব্যাপারে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন। সেখানে মন্ত্রীকন্যা মালতী ও মাধব পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু এদিকে রাজা তাঁর নমসখা নন্দনের সঙ্গে মালতীর বিবাহদানে কৃতসঙ্কল। এরই পাশাপাশি আর একটি কাহিনী–নন্দনের ভগিনী মদয়ন্তিকার প্রেমে জর্জরিত মাধব-সুহৃদ মকরন্দ। উভয় কাহিনী একত্রে বিজড়িত হয়ে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। যে রজনীতে নন্দনের সঙ্গে মালতীর বিবাহ অনুষ্ঠিত হবার কথা, সেদিন কামন্দকীর কৌশলে মাধবের সঙ্গে মালতী মিলিত হয় এবং মকরন্দ মালতীর বেশ ধারণ করে নন্দনের নিকট উপস্থিত হয়। এই সংবাদ প্রচারিত হলে মালতীর উদ্ধার কামনায় রাজসৈন্যদল অগ্রসর হয়, কিন্তু মাধব-মকরন্দের যুক্ত প্রচেষ্টায় তারা পরাভূত হয়। ওদিকে কপালকুণ্ডলা নাম্নী এক শ্মশানচারিণী সাধিকা গুরুহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ মানসে মালতীকে অপহরণ করে। মালতীকে না পেয়ে মাধব মূর্ছিত হয়ে পড়ে। মূর্ছিত মাধবকে মৃত ভেবে বন্ধু মকরন্দ প্রাণবিসর্জনে উদ্যত হলে বৌদ্ধ তাপসী সৌদামিনী তাকে জানান যে তিনি কপালকুণ্ডলার হাত থেকে মালতীকে উদ্ধার করেছেন। শেষ পর্যন্ত মাধবের সহিত মালতীর এবং মকরন্দের সঙ্গে মদয়ন্তিকার মিলন সাধিত হলো এবং রাজাও তা অনুমোদন করলেন। আলোচ্য নাটকে দুটি কাহিনী সমান্তরালভাবে চলেনি, পরস্পর অনুস্যুত হয়ে যে জটিলতার জাল বয়ন করেছে, তাতে মাধব-মালতীর কাহিনী মুখ্য হলেও মকরন্দ মদয়ন্তিকার শাখা-কাহিনীটিই গৌরবে মুখ্য কাহিনীকে অতিক্রম করে পাঠক-দর্শকের মুগ্ধ দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে।

কাব্য-বিচার : ‘মালতীমাধব’ ভবভূতি-রচিত ‘প্রকরণ’-জাতীয় (মৃচ্ছকটিক কাব্য বিচার অংশে প্রকরণ সম্বন্ধীয় আলোচনা দ্রষ্টব্য) রূপক কথা নাটক। এতে দশটি অঙ্ক আছে এবং এর কাহিনীও স্বকল্পিত বলে কবি উল্লেখ করেছেন। তবে পরবর্তী কালের সমালোচকগণ গুণাঢ্য-রচিত ‘বৃহৎকথা’ (‘বড্ডকহা’) গ্রন্থের কোনো কাহিনীর সঙ্গে এর কাঠামোগত সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। তাহলেও রক্তমাংসাদি যোজনা করে তাকে একটা বিশেষ আকৃতি দান করে তার মধ্যে প্রাণসঞ্চার করার কৃতিত্ব অবশ্যই ভবভূতির। নাটকটিতে উপকাহিনী যোগ করায় কাহিনীটি অযথা ভারাক্রান্ত হয়েছে এবং কাহিনীর নিজস্ব মাহাত্ম্যে উপকাহিনীটিই অধিকতর শ্লাঘ্য বিবেচিত হওয়ায় নাটকটির ভারসাম্যও ক্ষুণ্ন হয়েছে। নাটকের শেষ দুটি অঙ্ক অনায়াসে বর্জন করে নাটকটিকে আরো সুগঠিত করা সম্ভবপর ছিল। নাটকটির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য—এতে মধ্যবিত্ত জীবন কাহিনী রচনায় কবি যেভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন, তেমন দৃষ্টান্ত সংস্কৃত সাহিত্যে দুর্লভ। রাজকীয় প্রেমের দৃষ্টান্ত সাহিত্যে ভুরি ভুরি দেখা যায়, কিন্তু মকরন্দ-মদয়ন্তিকার তুলা কাহিনী আর একটিও নেই। গতানুগতিকতার বাইরে আর কয়েকটি চরিত্র সৃষ্টি করে। ভবভূতি নাটকটিতে অনেকখানি নতুন স্বাদ যুক্ত করেছেন। এতে শ্মশানচারী অবধৃত অঘোরঘণ্ট এবং তার উত্তরসাধিকা কপালকুণ্ডলা, বৌদ্ধ পরিব্রাজিকা কামন্দকী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য চরিত্র। অবশ্য শেষোক্তদের ভূমিকার যাথার্থ্য নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। ‘মালতীমাধব’ নাটকে ভবভূতি ‘নাট্যশিল্প’ বিষয়ে তাঁর নিজস্ব যে সকল ধারণার কথা বলেছেন, তা উল্লেখের দাবি রাখে—‘রসাদির প্রচুর ও নিগূঢ় প্রয়োগ, মনোরঞ্জক অভিনয়ক্রিয়া, বীরত্বযুক্ত প্রণয়, চিত্রকথা ও বৈদগ্ধ্যপূর্ণ সংলাপ— নাটকে এদেরই প্রয়োজন সমধিক। কিন্তু তিনি স্বয়ং তার রচনায় ভাবাতিশয্যকে অতিশয় প্রাধান্য দানের ফলে তাঁর কবিপ্রকৃতি যতটা সক্রিয় হয়ে উঠেছে, নাটকীয়তা ততটা মূর্ত হয়ে উঠতে পারেনি। তাঁর নাটকে এই কাব্যধর্মিতা যে নাটকীয়তাকে বহুলাংশে বিনষ্ট করেছে, এ বিষয়ে সমালোচকগণও অভিন্নমত ঃ “Some of the passage are highly poetical and picturesque, but they indicate an expansiveness and lack of moderation which are fatal to dramatic movement and propriety.” ‘মালতীমাধব’ নাটকে যুগল প্রণয় কাহিনীতে শৃঙ্গার রসের যথোপযুক্ত পরিবেশন ঘটলেও কতকগুলি স্বল্পপ্রচলিত রস-সৃষ্টিতে ভবভূতি অনন্য সাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। অধ্যাপক জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী দেখিয়েছেন যে এই নাটকে ‘নাট্যকার যে অদ্ভুত, বীভৎস ও রৌদ্ররসাদির অবতারণা করিয়াছেন, তাহা অভিনব। তৃতীয় অঙ্কের ‘শাদুল-বিদ্রাবন’ অর্থাৎ শাদুলের আক্রমণ হইতে মকরন্দের মদয়ন্তিকাকে উদ্ধার ও পঞ্চম অঙ্কে মহাশ্মশানে দুঃসাহসী মাধবের মহামাংস বিক্রয়ার্থ অভিযান এবং করালীমন্দিরে কাপালিপ অঘোরঘণ্ট ও কপালকুণ্ডলার মালতীবধোদ্যোগের দৃশ্যে যুগপৎ হৃদয়কে ভয়ে, বিস্ময়ে, ঘৃণায় ও উৎসাহে পরিপূর্ণ করিয়া তোলে। মহাশ্মশানের বর্ণনা বীভৎস ও ভয়াবহ (“মহতী শ্মশানে-বাস্য রৌদ্রতা’) — মাংসাহুতি দ্বারা প্রজ্বলিত চিতাবহ্নি, চিতাধুমের উৎকট গন্ধ, শবাহারী শিবা, ভূত-প্রেত, বেতাল-ভৈরবের সমাগম ও চিৎকার অতি ভীষণ। প্রেতপিশাচের ভোজন-উল্লাস বীভৎসতর চরম।”

‘মালতীমাধব’ নাটকে ভবভূতি এমন একটি উক্তি করেছেন, যা’ তাঁর রচিত সর্বাধিক পরিচিত শ্লোকাংশ বলে গণ্য হতে পারে— সেই শ্লোকটির প্রথমাংশে তিনি বলে নিয়েছেন, যাঁরা আমাদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন তাঁরা অনেক কিছুই জানতে পারেন (অর্থাৎ অনেক কিছু নাও জানতে পারেন), এটি তাঁদের জন্য নয়,

‘উৎপৎস্যতেহস্তি মম কোহপি সমানধর্মা।

কালোহায়ং নিরবধির্বিপুলা চপৃথ্বী।।”

‘আমার সমানধর্মা কেউ হয়তো জন্মগ্রহণ করবেন অথবা এখনো রয়েছেন (তাঁদের জন্যই এই প্রচেষ্টা), কারণ কাল নিরবধি, পৃথিবীও বিপুলা।’

এই উক্তিটি যেহেতু নাটকের ‘প্রস্তাবনা’তেই রয়েছে, অতএব এটি এই নাটক বিষয়ে নয়, সম্ভবতঃ পূর্ববর্তী কোনো নাটক প্রত্যাশিত সমাদর-লাভে ব্যর্থ হওয়াতেই ক্ষুব্ধ কবি তাঁর সমকালীন প্রজন্মের বিচারবুদ্ধির ওপর আস্থা রাখতে না পেরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সুবিচারের আশায়। তাতে একেবারেই যে ব্যর্থ হয়েছিলেন, এমনকথা বলা যায় না, কারণ পরবর্তীকালের অন্ততঃ কোনো সমালোচক অভিমত প্রকাশ করেছিলেন, ‘কবয়ঃ কালিদাসাদ্যঃ ভবভূতিমহাকবিঃ।

৩। উত্তররামচরিত : রামায়ণ কাহিনীর পূর্ব ভাগ অবলম্বনে ভবভূতি ‘মহাবীরচরিত’ রচনা করেছিলেন। তাতে রামচন্দ্রের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন এবং সিংহাসন লাভ পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছিল। ‘উত্তররামচরিত’ নাটকে ভবভূতি রামায়ণের উত্তরভাগ অর্থাৎ রামচন্দ্রের রাজত্বকালে সীতার বনবাস থেকে শুরু করে রামসীতার মিলন পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। বলা বাহুল্য, মূল রামায়ণ বিয়োগান্তক— সীতার পাতালপ্রবেশ, লক্ষ্মণ বর্জন এবং সরযূ নদীতে রামচন্দ্রের আত্মবিসর্জনে কাহিনীর সমাপ্তি। কিন্তু সংস্কৃত নাটকে বিয়োগান্তক কাহিনী নিষিদ্ধ বলেই ভবভূতি ‘উত্তররামচরিতে’ মিলনান্তক সমাপ্তি দান করেছেন। ‘মহাবীরচরিত’-এর মতোই এই নাটকেও ভবভূতি স্বীয় কল্পনার সাহায্যে বহু নতুন কাহিনী সংযোজন করেছেন।

কাহিনী : “অন্তঃসত্ত্বা সীতার সময় কাটানোর জন্য লক্ষ্মণকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, রাম সীতা কাহিনীর কিছু চিত্র-রচনার ব্যবস্থা করতে। তদনুযায়ী ব্যবস্থা অবলম্বিত হলে লক্ষ্মণ সীতাকে নিয়ে গেলেন চিত্রগৃহে-তথায় বনবাস-জীবনের আলেখ্যদর্শনে সীতার মনে যে সুখদুঃখময় স্মৃতিগুলি জেগে উঠলো, তাতে তিনি আবার সেই বনস্থলী-দর্শনের সাধ জ্ঞাপন করলে রামচন্দ্র লক্ষ্মণকে তদনুরূপ ব্যবস্থা অবলম্বনের আদেশ দান করেন। এই সময় রামচন্দ্র দুমুখের মুখে সংবাদ পেলেন যে প্রজাগণ সীতার শুচিতা বিষয়ে সন্দিহান। অতএব রামচন্দ্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন, বনভূমি-দর্শনের নামে সীতাকে যে বনবাসে পাঠানো হবে তাকে আর ফিরিয়ে আনা হবে না। এখানে নাটকের প্রথমাঙ্ক সমাপ্ত। সীতা-নির্বাসনের পর দ্বাদশ বৎসর অতিক্রান্ত। তপোবনে তপস্বিনী আত্রেয়ী ও বনদেবতা বাসন্তীর কথোপকথন থেকে জানা যায়, রামচন্দ্র অশ্বমেধ যজ্ঞানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হয়েছেন এবং তিনি তপস্বী শূদ্র শম্বুককে হত্যা করেছেন। তৃতীয় অঙ্কে দুই নদী তমসা ও মুরলার কথোপকথন থেকে জানা যায় যে রামচন্দ্র কর্তৃক পরিত্যক্তা সীতা আত্মহত্যায় উদ্যতা হলে স্বয়ং গঙ্গাদেবী তাঁকে রক্ষা করে দুই শিশুপুত্র সহ তাকে বাল্মীকির আশ্রমে রেখে আসেন। এই দৃশ্যেই ছায়াসীতার সঙ্গে রামচন্দ্রের মিলন ঘটে। মঞ্চে রামচন্দ্র ও বাসন্তী দৃশ্য, কিন্তু সীতা ও তমসা অদৃশ্য। সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যে রামচন্দ্র ও সীতার এই ভাবসম্মিলন এক অভিনব সামগ্রী। চতুর্থ অঙ্কে রাজর্ষি জনকের আশ্রম—সেখানে কৌশল্যার সঙ্গে লব-কুশের সাক্ষাৎ ঘটে কিন্তু কেউ কারো পরিচয় জানে না। তবে ওরা জানালো যে বাল্মীকির কাব্য থেকে ওরা রামচন্দ্রের কাহিনী জেনেছে। এদিকে রামচন্দ্রের যজ্ঞাশ্বের উপস্থিতিতে বীর্যবান্ লব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে সে যজ্ঞাশ্ব বন্ধন করবে। পঞ্চম অঙ্কে লক্ষ্মণ-পুত্র চন্দ্রকেতুর সঙ্গে লবের সংলাপ–উভয়ে উভয়ের গুণমুগ্ধ। ষষ্ঠ অঙ্কে চন্দ্রকেতু ও লবের যুদ্ধ, কিন্তু রামচন্দ্রের আবির্ভাবে যুদ্ধ বাধাপ্রাপ্ত হয়। রামচন্দ্র লবের শৌর্যবীর্যের প্রশংসা করেন। ওদিকে কুশ বাল্মীকি রচিত কাব্য নিয়ে উপস্থিত। রামচন্দ্র উভয়ের গুণে মুগ্ধ, কিন্তু তখনও একে অপরের অপরিচিত। সপ্তম অঙ্কে– ভরতমুনি-পরিকল্পিত অপ্সর-অপ্সরাদের দ্বারা অভিনীত নাট্যানুষ্ঠান। সীতার ভাগীরথীতে ঝাঁপিয়ে পড়া, গঙ্গা ও পৃথিবী-কর্তৃক দুই শিশু ক্রোড়ে নিয়ে সীতা-সহ রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব এবং শিশুদের বাল্মীকির আশ্রমে প্রতিপালনের নির্দেশ দান–প্রভৃতি অজ্ঞাত বাস্তব ঘটনাবলী-দর্শনে দর্শকাসনে উপবিষ্ট রামচন্দ্র মূর্ছিত হয়ে পড়লে দেবী অরুন্ধতী প্রকৃত সীতাকে নিয়ে রামচন্দ্রের কাছে এলেন, সীতার সেবায় রামচন্দ্র সুস্থ হয়ে উঠলেন। এইবার পৌরজনের সম্মতিতে রামচন্দ্র সীতাকে গ্রহণ করলেন, বাল্মীকির সঙ্গে পুত্রদ্বয় লব এবং কুশও পিতার নিকট চলে এলেন। পত্নী ও পুত্রদের সঙ্গে রামচন্দ্রের মিলনের মধ্য দিয়ে নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটলো।” (সংস্কৃত সাহিত্যের পরিচয়)

‘উত্তররামচরিতে’র কাঠামোটি মাত্র ভবভূতি বাল্মীকি রামায়ণ থেকে গ্রহণ করেছেন। এতদতিরিক্ত কাহিনী উপস্থাপনা, পরিবেশ রচনা, চরিত্র-সৃষ্টি, এমন কি কাহিনীর পরিণতিও তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব কল্পনার সাহায্যে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বাল্মীকির বিয়োগান্তক কাহিনীকে মিলনান্তক পরিণতি দান করেছেন। যে রামচন্দ্রের জীবনকে অবলম্বন করে বাল্মীকির রামায়ণ রচিত, সেই রামচন্দ্রই ভবভূতি-রচিত ‘উত্তররামচরিতে’র নায়ক। অথচ রামচন্দ্রের চরিত্র পরিকল্পনায় উভয়ের মধ্যে কত পার্থক্য। বাল্মীকির সেই বৃঢ়োরস্কঃ শালগ্রাংশু মহাভুজ রামচন্দ্র যিনি শৌর্যে বীর্যে পরাক্রমে শ্রেষ্ঠ, শোকেও যিনি অধীর, তিনি ভবভূতির কাব্যে কারুণ্যের অবতার হয়ে দাঁড়িয়েছেন। যদিও তাঁর সম্বন্ধে বনদেবী বাসন্তী একবার বলেছেন—

“বজ্রাদপি কঠোরাণি মৃদুনি কুসুমাদপি। 

লোকোত্তরাণাং চেতাংসি কে নু বিজ্ঞাতুমহতি।।

‘সত্য বটে, বজ্রের মতো কঠোর হৃদয় বলেই তিনি প্রাণপ্রিয়া সীতাকেও বিসর্জন দিতে পেরেছিলেন, কিন্তু এর জন্য তাঁর আবেগবিহ্বলতা বার বার বড় বেশি প্রকট হয়ে পড়েছে।’ রামচন্দ্রের জীবনটি যেন দুঃখভোগের জন্যই সৃষ্ট হয়েছিল— ‘দুঃখসংবেদনাইয়ের বামে চৈতন্যমাহিতম্’। কিন্তু যেহেতু রামচন্দ্র ছিলেন অদ্বিতীয় ধর্মবীর, সেইজন্য বহু দুঃখবেদনাকেই তিনি শুধু স্বীয় অন্তরেই বহন করেছেন, বাইরে তার প্রকাশ ঘটেনি বেদনার মধ্যেও তিনি ছিলেন আত্মসংবৃত— ‘অন্তগূঢ়ঘনব্যথ’। তবে নিজের আচরণে রামচন্দ্রের এই কারুণ্য প্রকাশ পেলেও অপরের দৃষ্টিতে শৌর্যগুণান্বিত মহিমান্বিত মূর্তি যথাযথ ভাবেই ধরা পড়েছে। কুশ রামচন্দ্রকে দেখেই মন্তব্য করেছিল— “স রামায়ণকথানায়কো ব্রহ্মলোকস্য গোপয়িতা!’ আবার রামচন্দ্রের দৈহিক বলের স্বীকৃতি মিলেছে তাঁরই হস্তে নিহত শঙ্কুকের কথায়ও। আবার নৈতিক বলকে আশ্রয় করেই বিশ্বপালন করতে হবে, একথাও আমরা রামচন্দ্রের মুখেই শুনতে পেয়েছি। প্রজানুরঞ্জনের জন্য তিনি যে সবকিছু ত্যাগ করতে পারেন তাও তিনি বলেন—

‘স্নেহং দয়াঞ্চ সৌখ্যঞ্চ যদি বা জানকীমপি।

আরাধনায় লোকানাং মুঞ্চতো নাস্তি মে ব্যথা।

তবু বলতে হয় যে পত্নী প্রেমে বিচলিত রামচন্দ্রের মধ্যে ভাববিহ্বলতার পরিমাণ এত অধিক যে, রামের কারুণ্য সমগ্র কাব্যকেই প্রভাবিত করেছে। তাই ভবভূতি সম্বন্ধে বলা হয়—’কারণ্যং ভবভূতিরেব তনুতে।”

কাব্যবিচার : ‘উত্তররামচরিত’ ভবভূতির সম্ভবতঃ সর্বশেষ এবং নিঃসন্দেহে পরিণততম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা বলেই বলা হয়েছে—’উত্তররামচরিত ভবভূতি বিশিষ্যতে।’ ‘মহাবীরচরিত’ নাটকে ভবভূতি রামচন্দ্রের পূর্বাধের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন, এখন ‘উত্তররামচরিত’ নাটকে উত্তরার্ধ গ্রথিত করায় এটি পূর্ববর্তী নাটকের পরিপূরকরূপে গণ্য হতে পারে। তবে প্রথম পর্বে রামচরিত যতটা সক্রিয় ছিল, এই পর্বের রামচরিত্রে সদ্যক্রিয়তা ততটা নেই, যতটা রয়েছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতিফলন। কাহিনীর মূল কাঠামো বাল্মীকি রামায়ণ থেকে গ্রহণ করা হলেও ভবভূতি পূর্বেকার মতো এটিতেও কল্পনাসৃষ্ট বহু কাহিনী যুক্ত করেছেন; বরং এতে অভিনবত্ব সৃষ্টি হয়েছে অনেক বেশি—এ কথাই বলা চলে। যে সমস্ত বিষয়ে ভবভূতি নতুনত্ব সৃষ্টি করেছেন, তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য— ‘আলেখ্যদর্শন আত্রেয়ী ও বাসন্তীর কথোপকথন, তমসা ও মুরলার কথোপকথন, সীতার পূর্বস্মৃতি-বিজড়িত বনভূমি দর্শন, ছায়াসীতা, লব ও চন্দ্রকেতুর যুদ্ধ, ভরতমুনি কর্তৃক নাট্যাভিনয় এবং রামসীতার মিলন।’ ‘ছায়া’-অভিধেয় তৃতীয় অঙ্কে রাম-সীতার ভাবসমাগম সংস্কৃত সাহিত্যে এক অভিনব বস্তু। এর করুণ রসই যে এই অঙ্কে নিমিত্তভেদে কত রূপান্তর প্রাপ্ত হয়েছে, তার যথার্থ বিশ্লেষণ কঠিন। সপ্তম অঙ্কে এক নাটকের মধ্যেই অপর এক নাটকের অভিনয় কল্পনা, সেই অভিনয় দর্শনে রামচন্দ্রের মূর্ছা এবং এই মূর্ছা-অপনোদনের জন্য সীতাকে এনে রাম-সীতার মিলন ঘটিয়ে বাল্মীকির বিয়োগান্তক নাটকের মিলনান্ত পরিণতি দেখিয়ে ভবভূতি যে অভিনবত্ব দেখিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে অতিশয় প্রশংসাহ।

ভাষা-ব্যবহারে ভবভূতি যথেষ্ট বিদগ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন, অবশ্য নাটকে ভাষা ব্যবহার বিষয়ে তাঁর অভিমতও ছিল অনুরূপ —বৈদগ্ধ্যপূর্ণ সংলাপ অর্থাৎ বাকপ্রোঢ়ি এবং অর্থগৌরবকে তিনি নাটকে অভিপ্রেত মনে করে ঐভাবেই তাদের ব্যবহার করেছেন—এর ফলে রচনার কাব্যগুণ বৃদ্ধি পেলেও নাট্যগুণ অনেকাংশেই ক্ষুণ্ণ হয়েছে। গৌড়ীয়রীতির অনুসারী ভবভূতির ভাষা দুরূহ, দুরুচ্চার্য এবং সমাসবহুল, যদিচ অর্থগৌরবে পূর্ণ। কিন্তু এ জাতীয় ভাষা নাটকের কথোপকথনে আদর্শ বলে স্বীকৃত হয় না। এমন কি প্রাকৃত ভাষা ব্যবহারেও ভবভূতি যে সমাসম্প্রীতির পরিচয় দিয়েছেন, তাতে বিষয়ের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা ও গুরুত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়, কিন্তু বাস্তববুদ্ধির পরিচয় একেবারেই অনুপস্থিত। ভাষার লালিত্য, সরলতা ও প্রাঞ্জলতার অভাবহেতু তাকে একান্তভাবেই কৃত্রিম বলে মনে হয়।

ভাষার বিষয়ে যেমন, অপর সমস্ত বিষয়েই ভবভূতি তেমনি সর্বপ্রকার লঘুতাকে পরিহার করে চলতে চেষ্টা করেছেন। ‘উত্তররামচরিত’ নাটকটির মিলনান্তক পরিসমাপ্তি ঘটলেও এর প্রধান রস যে করুণ, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এই করুণ রসের রেশ সর্বত্র অব্যাহত রাখবার জন্য তিনি নাটকটিতে ‘বিদূষকে’র কোনো ভূমিকা রাখেন নি। নাটকটির সঙ্গে তিনি একাত্ম হয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন, নাটকটির সঙ্গে আপনার ভাবাবেগকে তিনি এমনভাবেই জড়িয়ে ফেলেছিলেন। ড. সুশীলকুমার দে এইজন্যই মন্তব্য করেছেন, “Bhababhuti cannot write in the lighter vein, but takes his subject too seriously; he has no humour, but enough of dramatic irony; he can hardly attain perfect artistic aloofness, but too often merges himself in this subject, he has more feeling than real poetry.” I