দুর্গাবতী ছিলেন চান্দেল্ল বংশীয়, রাজপুত অধিপতি মাহহাবার কন্যা। তিনি ছিলেন একাধারে বুদ্ধিমতী, সাহসী, দেশপ্রেমিক ও সংস্কৃতিমনস্ক। তিনি গন্ডােয়ানার শাসক দলপত শাহের সঙ্গে বিবাহ করেন।

[1] শাসনভার গ্রহণ: গন্ডােয়ানার রাজা দলপৎ শাহের মৃত্যুর পর তার নাবালক পুত্র বীরনারায়ণ সেখানকার সিংহাসনে বসলে তার অভিভাবক হিসেবে বিধবা রানি দুর্গাবতী গণ্ডােয়ানা শাসন করতে থাকেন (১৫৫০-১৫৬৪ খ্রি.)। রানি দুর্গাবতী দ্রুত রাজ্যের সব শ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা ও সমর্থন লাভ করেন।

[2] বাজ বাহাদুরের আক্রমণ রােধ: দুর্গাবতীর রাজত্বের প্রথম দিকে আফগান নেতা বাজ বাহাদুর গণ্ডােয়ানা আক্রমণ করেন। কিন্তু দুর্গাবতী দক্ষতার সঙ্গে বাজ বাহাদুরের আক্রমণ প্রতিহত করেন। পরবর্তীকালেও বাজ বাহাদুর কয়েকবার গণ্ডােয়ানা আক্রমণ করে রানি দুর্গাবতীর বাহিনীর কাছে পরাজিত হন।

[3] অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দক্ষতা: দুর্গাবতী প্রতিবার জয়লাভ করলেও যুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যায়ের ফলে গণ্ডােয়ানার রাজকোশ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। দুর্গাবতী অভিযান চালিয়ে ক্ষুদ্র জমির মালিকদের কাছ থেকে বাড়তি রাজস্ব ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের নির্দেশ দেন। ফলে শীঘ্রই গন্ডােয়ানার রাজকোশ পূর্ণ হয়ে যায়।

[4] আকবরের আক্রমণের মোকাবিলা: গন্ডােয়ানার বিপুল অর্থসম্পদ ও ঐশ্বর্য মােগল সম্রাট আকবরকে প্রলুব্ধ করে। এজন্য সম্রাট আকবর ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি আসফ খাঁ-র নেতৃত্বে এক বিশাল বাহিনী গণ্ডােয়ানা অভিযানে পাঠান। যুদ্ধে দুর্গাবতীর পরাজয় হলেও তাঁর সংশয়াতীত স্বাধীনতাম্পৃহা, বীরত্ব ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল।

  • দুর্গাবতীর প্রতিরােধ: বিশাল মােগল বাহিনীর তুলনায় রানি দুর্গাবতীর সেনাবাহিনী ছিল নিতান্তই ক্ষুদ্র। তা সত্ত্বেও দুর্গাবতীর নেতৃত্ব এই বাহিনী অসীম সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে নররাই-এর যুদ্ধ (১৫৬৪ খ্রি.) প্রথমদিকে কয়েকবার মােগল বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করেন।

  • পরিণতি: যুদ্ধের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রানি দুর্গাবতী মােগল বাহিনীর তীরের আঘাতে দারুণভাবে আহত হন। শেষপর্যন্ত পরাজয় নিশ্চিত জেনে তিনি অপমানিত হয়ে বাঁচার চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় বলে গ্রহণ করে নিজের ছুরির আঘাতে আত্মহত্যা করেন। গণ্ডােয়ানার একাংশ মােগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং অপর অংশে দুর্গাবতীর বংশধর চন্দ্র শাহকে দেওয়া হয়। চন্দ্র শাহ মােগলদের হাতের পুতুল হয়ে শাসন পরিচালনা করতে থাকেন।

উপসংহার: রানি দুর্গাবতীর বিরুদ্ধে মােগল আক্রমণ ছিল মােগল বাহিনীর নগ্ন সাম্রাজ্যবাদ ও চূড়ান্ত অর্থলিন্সার সুস্পষ্ট উদাহরণ। দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রবল শক্তিধর মােগল বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে লড়াই করেও রানি দুর্গাবতী যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা ইতিহাসে অত্যন্ত দুর্লভ।