ভূমিকা: ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাে অনুসারে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা বা পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। ইংল্যান্ডের রাজা-রানি, লর্ডসভা এবং কমন্স সভা নিয়ে যেমন পার্লামেন্ট গঠিত তেমনি ভারতীয় সংবিধানের ৭৯ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যসভা এবং লোকসভার নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট গঠিত।

রাজ্যসভা: রাজ্যসভা হল কেন্দ্রীয় আইনসভা বা পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বা দ্বিতীয় কক্ষ। ক্ষমতা ও মর্যাদার দিক থেকে রাজ্যসভা লোকসভার মতাে সমমর্যাদাসম্পন্ন নয়। উভয় কক্ষের ক্ষমতা বিন্যাস ঘটানাের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হয়েছে।

রাজ্যসভার গঠন

সংবিধানের ৮০ নং ধারায় রাজ্যসভার গঠন সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা ২৫০ জনের বেশি হবে না। সাহিত্য, বিজ্ঞান, চারুকলা, সমাজসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছিল তাদের মধ্য থেকে ১২ জন সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনােনীত হয়ে থাকেন। অবশিষ্ট ২৩৮ জন সদস্য অঙ্গরাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে পরােক্ষভাবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে রাজ্যসভার মােট সদস্য সংখ্যা ২৪৫ জন।

রাজ্যসভার সদস্যদের নির্বাচনী যােগ্যতা: রাজ্যসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে গেলে নির্বাচন প্রার্থীকে অবশ্যই- (১) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, (২) অন্তত ৩০ বছর বয়স্ক হতে হবে, (৩) কোন কেন্দ্রের ভােটার হতে হবে, (৪) সরকারের কোনাে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকা চলবে না, (৫) আদালত কর্তৃক উন্মাদ, দেউলে এবং ভবঘুরে বলে ঘােষিত কোনাে ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না।

রাজ্যসভার সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি: রাজ্যসভার সদস্যগণ প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন না। সংবিধানের ৮০ (৪) নং ধারা অনুসারে বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য বা এম এল এ-দের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমণ্ডলী দ্বারা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের এককহস্তান্তরযােগ্য ভোট পরােক্ষভাবে রাজ্যসভার সদস্যগণ নির্বাচিত হন।

রাজ্যসভার সদস্যদের কার্যকাল: রাজ্যসভা হল স্থায়ী কক্ষ। রাজ্যসভার নির্বাচিত সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ হল ৬ বছর। রাজ্যসভার সকল সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ একসঙ্গে শেষ হয়। না। লােকসভার মতাে রাজ্যসভাকে রাষ্ট্রপতি ভেঙে দিতে পারেন না। রাজ্যসভার এক-তৃতীয়াংশ (১/৩ অংশ) সদস্য প্রত্যেক দু-বছর অন্তর অবসর গ্রহণ করেন। ওই জায়গায় নতুন সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসেন। রাজ্যসভার কোনাে সদস্য অযােগ্য বলে বিবেচিত হলে তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। রাজ্যসভার কোনাে সদস্য যদি লােকসভা বা রাজ্য আইনসভায় নির্বাচিত হন এবং সেই কক্ষের সদস্যপদ গ্রহণ করেন তবে তার রাজ্যসভার সদস্য পদ বাতিল বলে ঘােষিত হয়। রাজ্যসভার কোনাে সদস্য যদি একাদিক্রমে ৬০ দিন সভার সকল অধিবেশনে কোনাে কারণ না দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে রাজ্যসভা তার সদস্যপদ শূন্য হয়েছে বলে ঘােষণা করতে পারে। সংবিধানের ১৬০ নং ধারায় রাজ্যসভা এবং লোকসভার সদস্যদের অযােগ্যতা সংক্রান্ত বিষয়টি রাষ্ট্রপতির বিবেচনাধীন করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।

রাজ্যসভার কার্য পরিচালনা: রাজ্যসভার সভা পরিচালনা করেন উপরাষ্ট্রপতি। পদাধিকারবলে তিনি হলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। রাজ্যসভার সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে বা উপরাষ্ট্রপতি অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করলে ডেপুটি চেয়ারম্যান সভার কাজ পরিচালনা করেন। রাজ্যসভা পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য (যাকে বলা হয় কোরাম’) উপস্থিত থাকলে সভা পরিচালনা করা যায়। এই সংখ্যা হল রাজ্যসভার মােট সদস্য (২৫০) সংখ্যার এক দশমাংশ (১/১০ অংশ) সদস্যের উপস্থিতি। কোনাে কারণে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদ ওই সময় শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার অন্য কোনাে সদস্যকে সভা পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। প্রসঙ্গত মনে রাখা জরুরি, যদি কোনাে কারণে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বা ডেপুটি চেয়ারম্যানের অপসারণের কোনাে প্রস্তাব কক্ষে উত্থাপিত বা আলােচিত হয় তখন। সেই সংশ্লিষ্ট পদাধিকারী সভার কার্য পরিচালনা করতে পারবেন না।

রাজ্যসভার সভাপতির বেতন ও ভাতা: বর্তমানে রাজ্যসভার সভাপতি লোকসভার স্পিকারের মতােই মাসিক ১,২৫,০০০ টাকা বেতন ও অন্যান্য সুযােগসুবিধা এবং অবসরকালীন পেনশন পেয়ে থাকেন।

রাজ্যসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি

[1] সাধারণ বিল পাসের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা: রাজ্যসভা সাধারণ বিল অনুমােদনের ক্ষেত্রে লোকসভা সমান ক্ষমতা ভােগ করে। সাধারণ বিল লোকসভা এবং রাজ্যসভা যে-কোনাে কক্ষেই উত্থাপন করা যায়। রাজ্যসভা এবং লোকসভার মধ্যে সাধারণ বিল নিয়ে কোনাে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রপতি উভয় কক্ষে যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন। লোকসভার স্পিকার সংবিধানের ১০৮ নং ধারা অনুসারে উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে সাধারণ বিলের ভাগ্য নির্ধারিত হয়।

[2] অর্থ বিলের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা: অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যসভার সংবিধানে বিশেষ কোনাে ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। রাজ্যসভায় বাজেট ও অর্থ বিল উত্থাপন করা যায় না। রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী লোকসভায় অর্থ বিল উত্থাপন করেন। রাজ্যসভা বিল পাওয়ার পর ১৪ দিনের মধ্যে লোকসভার নিকট নিজ সুপারিশ প্রেরণে বাধ্য থাকে। রাজ্যসভা যদি ১৪ দিনের মধ্যে নিজ সুপারিশ না পাঠায় তবে লােকসভা ধরে নেবে যে রাজ্যসভা কর্তৃক বিল গৃহীত হয়েছে এবং তারপর রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত সম্মতি বা স্বাক্ষরের জন্য বিল প্রেরিত হয়। অর্থ বিলের কোনাে অংশ সংশােধন করা বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা রাজ্যসভার সদস্যরা ভােগ করে না। অর্থ বিলের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার মতামত লােকসভা গ্রহণও করতে পারে, আবার বর্জন করতে পারে। এই সম্পূর্ণ ঘটনাটি লোকসভার সদস্যদের নিজস্ব ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

[3] সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা: সংসদীয় শাসনব্যবস্থার রীতি অনুসারে সরকার গঠন, সরকারের কার্যকাল নিয়ন্ত্রণ ও অপসারণে রাজ্যসভার প্রকৃত কোনাে ক্ষমতা নেই। তবুও রাজ্যসভা নানাভাবে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। বিশেষত রাজ্যসভা হল ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ, ফলে মন্ত্রীসভার নানা বিষয় গুলো রাজ্যসভা কে জানাতে হয়। রাজ্যসভা নজর রাখে সরকার যাতে সঠিক পথে পরিচালিত হয়। এই কারণে দৃষ্টি-আকর্ষণ প্রস্তাব, নিন্দাসূচক প্রস্তাব, মুলতুবি প্রস্তাব ইত্যাদির মাধ্যমে রাজ্যসভা ভারত সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে থাকে।

[4] লোকসভার সমান ক্ষমতার ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা :

  • নির্বাচনমূলক ক্ষমতা: রাজ্যসভা এবং লোকসভার কতকগুলি ক্ষেত্রে সমান ক্ষমতা ভােগ করে। যেমন রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। উভয় কক্ষের মনােনীত ও নির্বাচিত সদস্যগণই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন লোকসভা এবং রাজ্যসভার সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি অভিন্ন নির্বাচন সংস্থার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
  • অপসারণের ক্ষমতা: রাজ্যসভার হাতে গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর অপসারণের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি সংক্রান্ত প্রস্তাব রাজ্যসভা এবং লোকসভার যে-কোনাে কক্ষেই উত্থাপিত হতে পারে। রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির প্রস্তাব প্রথমে রাজ্যসভায় উত্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ অন্যান্য বিচারপতি, ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাগণনা পরীক্ষক প্রমুখ পদাধিকারীদের পদচ্যুতির ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ও লোকসভা সমান ক্ষমতা ভােগ করে থাকে।

[5] সংবিধান-সংশোধনের ক্ষমতার ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা: রাজ্যসভা লোকসভা সঙ্গে সমানভাবে সংবিধান-সংশােধনের ক্ষমতা ভােগ করে থাকে। উভয় কক্ষের সম্মতি ছাড়া সংবিধানের কোনাে অংশের সংশােধন করা সম্ভব নয়। সংবিধান-সংশােধন নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হলে উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি। যেমন—১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে রাজন্য ভাতা বিলােপ বিলে রাজ্যসভা অনুমােদন দেয়নি। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ৪৪ তম সংবিধান-সংশােধন বিল রাজ্যসভার প্রস্তাব অনুসারে পাস হয়েছিল।

[6] জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতার ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা: জরুরি অবস্থা ঘােষণার প্রস্তাব অনুমােদনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষই সমান ক্ষমতা ভােগ করে থাকে। জরুরি অবস্থায় মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত বিল, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মৌলিক অধিকার প্রয়ােগ, স্থগিত রাখার জন্য যে আদেশ জারি করেন তা কার্যকর করার জন্য লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয় কক্ষেরই অনুমােদন প্রয়ােজন হয়।

[7] রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব উত্থাপনের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার একক ভূমিকা: সংবিধানে দুটি ক্ষেত্রে রাজ্যসভার বিশেষ ক্ষমতা ও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যথা一

  • ২৪৯ নং ধারা অনুসারে রাজ্যসভায় উপস্থিত এবং ভােটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে রাজ্যসভায় যদি কোনাে প্রস্তাব অনুমােদিত হয় যে, জাতীয় স্বার্থে রাজ্য তালিকাভুক্ত যে-কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়ে পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন করা উচিত তাহলে পার্লামেন্ট সেই নির্দিষ্ট বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারবে। এইভাবে রাজ্যসভার একক প্রস্তাবের দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানাে হয়।
  • ৩১২ নং ধারা অনুসারে রাজ্যসভায় উপস্থিত এবং ভােটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে যদি জাতীয় স্বার্থে সর্বভারতীয় রাষ্ট্রকৃত্যকের ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে হয়, তাহলে পার্লামেন্ট অধিক সংখ্যায় সর্বভারতীয় কৃত্যক গঠনের ব্যবস্থা করতে পারে।
  • পার্লামেন্টের স্থায়ী কক্ষ হিসেবে রাজ্যসভার ভূমিকা : পার্লামেন্টের স্থায়ী কক্ষ বলে পরিচিত রাজ্যসভা কখনােই ভেঙে দেওয়া যায় না। এদিক থেকে বিচার করলে রাজ্যসভার গুরুত্ব ও মর্যাদাকে কখনােই অস্বীকার করা যায় না।

সমালােচনা: রাজ্যসভার ভূমিকাকে গঠনগত এবং ভূমিকাগত দিক থেকে সমালােচনা করা হয়। সংবিধানে রাজ্যসভার যে ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে এবং যেভাবে রাজ্যসভা গঠন করা হয়েছে তার উপর রাজ্যসভার মর্যাদা ও ভূমিকা অনেকাংশে নির্ভর করে। এই আলােচনা প্রসঙ্গে রাজ্যসভার প্রাধান্যের যে দুটি উঠে এসেছে সেগুলি নিম্নে আলােচনা করা হল一

  • সমালোচক কে ভি রাও বলেন, গঠনগত দিক থেকে রাজ্যসভার ত্রুটি আছে। অঙ্গরাজ্যের সমপ্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা এখানে অনুপস্থিত। এর ফলস্বরূপ যে রাজ্যের ভৌগােলিক আয়তন ও জনসংখ্যা বেশি সেই রাজ্যের প্রাধান্যই এখানে পরিলক্ষিত হয়।
  • রাজ্যসভায় ১২ জন সদস্যকে রাষ্ট্রপতি মনােনীত করেন ঠিকই কিন্তু এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ ও পরামর্শ অনুযায়ী তার কার্য সম্পাদন করে থাকেন। যেহেতু এই মনোনয়ন ব্যবস্থাটা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত তার জন্যই এই ব্যবস্থাটা কতটা গণতান্ত্রিক সেই বিষয়ে সমালােচকরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
  • রাজ্যসভা লােকসভার অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত প্রতিরােধের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
  • রাজ্যসভার কার্যাবলি কখনাে-কখনাে বিরূপ প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। রাজ্যসভার অনেকসময় রক্ষণশীলতার দুর্গ বলে অভিহিত করা হয়। অনেকে বলেন যে, প্রভাবহীন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পুনর্বাসনের স্থান হল রাজ্যসভা।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার শুধুমাত্র প্রবীণদের কক্ষ নয় দেশের কোনাে বিশেষ স্বার্থের প্রতিনিধিদেরও কক্ষ নয়, এই কক্ষ লোকসভা বাধা দিতে পারে এবং শাসন বিভাগকে অসাংবিধানিক কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। এ ছাড়াও কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন, সর্বভারতীয় চাকরি সৃষ্টি প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে রাজ্যসভাকে অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লর্ডসভার মতাে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা একেবারেই ক্ষমতাহীন নয়, আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চকক্ষ সিনেটের মতাে শক্তিশালীও নয়। ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ (রাজ্যসভা) উভয় দেশের উচ্চকক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত রয়েছে।