ভূমিকা: ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রের মতাে রাজ্যগুলিতেও সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বা সরকার বর্তমান। অঙ্গরাজ্যের শাসন বিভাগ রাজ্যপাল এবং রাজ্য মন্ত্রীসভাকে নিয়ে গঠিত। সংবিধানের ১৫৪(১) নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যের শাসনক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত। তিনি হলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান (Constitutional Head) বা নামসর্বস্ব প্রধান (Nominal Head)। প্রতিটি রাজ্যের জন্য কিংবা দুই বা ততােধিক রাজ্যের জন্য একজন করে রাজ্যপাল থাকতে পারে (১৫৩ নং ধারা)। রাজ্য প্রশাসনের সকল ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। এই ক্ষমতা তিনি নিজে বা তার অধস্তন কর্মচারীবৃন্দের মাধ্যমে প্রয়ােগ করে থাকেন।

রাজ্যপালের যোগ্যতা, নিয়োগ ও কার্যকাল

ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কোনাে নাগরিককে রাজ্যপাল হতে গেলে তাকে অবশ্যই— (1) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, (2) কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে, (3) কেন্দ্র বা রাজ্য আইনসভার সদস্য থাকতে পারবেন না এবং (4) কেন্দ্র বা রাজ্যের কোনাে সরকারি লাভজনক পদে বহাল থাকতে পারবেন না।

ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালকে ৫ বছরের জন্য নিযুক্ত করেন। অবশ্য রাষ্ট্রপতি তাকে পুনরায় মনােনীত করতে পারেন বা কার্যকাল বৃদ্ধি করতে পারেন। এই নিয়ােগ সংক্রান্ত ব্যাপারে রাজ্যের কোনােরকম ভূমিকা বা হস্তক্ষেপ থাকে না। তবুও কোনাে রাজ্যের রাজ্যপাল নিয়ােগের পূর্বে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতামত গ্রহণ করে থাকেন। সংবিধানের ১৫৬ (১) নং ধারানুযায়ী রাজ্যপালের স্বপদে বহাল থাকা নির্ভর করে রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির উপর। রাজ্যপাল কে শপথ বাক্য পাঠ করিয়ে থাকেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। বর্তমানে (২০১৮ খ্রিস্টাব্দ, ১ এপ্রিল) রাজ্যপালের বেতন ৩,৫০,০০০ টাকা এবং তার সঙ্গে তিনি অন্যান্য সুযােগসুবিধাও ভােগ করে থাকেন।

রাজ্যপালের ক্ষমতা, কার্যাবলি

ভারতীয় সংবিধানের ১৫৪ (১) নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যের শাসন বিভাগীয় সকল ক্ষমতা রাজ্যপালের উপর ন্যস্ত। রাজ্যপাল নিজে বা তার অধীনস্থ কর্মচারীদের মাধ্যমে তাঁর উপর ন্যস্ত করা ক্ষমতা প্রয়ােগ করে থাকেন। ক্ষমতা প্রয়ােগ বা কাজকর্ম পরিচালনার ব্যাপারে তাকে মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়। যাইহােক, রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা হয়। যেমন 一 (A) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা, (B) আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা, (C) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা, (D) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা এবং (E) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।

(A) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা: তত্ত্বগতভাবে রাজ্যের শাসনবিভাগীয় প্রধান অর্থাৎ রাজ্যপালের নামেই শাসনকার্য সম্পাদিত হয়। রাজ্য আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদেরও তিনি নিযুক্ত করে শপথবাক্য পাঠ করান। তিনি রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অজুহাতে সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করতে পারেন। তিনি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

  • নিয়ােগ সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যপাল রাজ্যের অ্যাডভােকেট জেনারেল, পি এস সি-র চেয়ারম্যান, জেলা জজ, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভাইস-চ্যান্সেলার, উচ্চপদস্থ (WBCS) সরকারি কর্মচারীদের নিযুক্ত করেন। রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়ােগের সময় রাষ্ট্রপতি অপরিহার্যভাবে রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করে থকেন (২১৭ নং ধারা)। হাইকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে রাজ্যপাল বিচারকদের নিয়ােগ করেন। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাধ্যক্ষের নিয়োগ কর্তা হলেন রাজ্যপাল।
  • দণ্ড মার্জনা: আইন ভঙ্গের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর দণ্ড হ্রাস, দণ্ড স্থগিত রাখা এমনকি তাকে ক্ষমা প্রদর্শন করার ক্ষমতাও রাজ্যপালের রয়েছে।
  • তপশিলি ও অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণি সম্পর্কিত ব্যবস্থা: রাজ্যের তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অনুন্নত শ্রেণির সর্বাঙ্গীণ উন্নতির ক্ষেত্রে রাজ্যপালের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।
  • কেন্দ্রের এজেন্ট হিসেবে ক্ষমতা: রাজ্যে যদি শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দেখা দেয় তবে রাজ্যপাল ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারা অনুযায়ী সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে জানান। রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘােষিত হলে রাজ্য প্রশাসনের সমস্ত দায়িত্ব বর্তায় রাজ্যপালের উপর। তিনি তখন কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।

(B) আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার সদস্য নন তথাপি তিনি হলেন রাজ্য আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাজ্যপালের আইন সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য হলㅡ

  • আইনসভার সদস্য মনােনয়ন: রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার সদস্যদের মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে নিযুক্ত করেন এবং বিধান পরিষদে সমাজের বিশিষ্ট জনের মধ্য থেকে কয়েকজনকে আইনসভায় মনােনীত করতে পারেন এবং বিধানসভায় ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচিত না হলে তাদের মধ্য থেকে ১ জনকে মনােনীত করতে পারেন। যেসব রাজ্যে আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, সেইসব রাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ অর্থাৎ বিধান পরিষদে সাহিত্য, বিজ্ঞান, চারুকলা, সমাজসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে মনােনীত করতে পারেন।
  • আইনসভার অধিবেশন আহ্বান, স্থগিত: রাজ্যপাল রাজ্যের আইনসভার সদস্য নন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি হলেন রাজ্যের আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাজ্যপাল রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করেন, স্থগিত রাখতে পারেন এবং প্রয়োজনে বিধানসভা ভেঙেও দিতে পারেন। তবে এইসমস্ত ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ রাজ্যপালকে গ্রহণ করতে হয়। তিনি রাজ্য আইনসভার যে-কোনাে কক্ষে বক্তৃতা দিতে পারেন, বাণী পাঠাতে পারেন।
  • বিলে সম্মতি জ্ঞাপন: রাজ্য আইনসভার গৃহীত কোনা বিলে রাজ্যপাল সম্মতি না জানালে তা আইনে পরিণত হয় না। রাজ্য আইনসভায় গৃহীত কোনাে বিল তার কাছে পাঠানাে হলে তিনি তাতে সম্মতি জানাতে পারেন। সম্মতি জানালে তা আইনে পরিণত হয়। আবার সম্মতি না জানিয়ে আইনসভায় পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরতও পাঠাতে পারেন। তবে পুনর্বিবেচনা হয়ে ফেরত এলে তিনি তাতে সম্মতি জানাতে বাধ্য থাকেন। আবার রাজ্য আইনসভায় গৃহীত কোনাে বিলে সম্মতি না জানিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য আটকেও রাখতে পারেন।
  • অর্ডিন্যান্স জারির ক্ষমতা: রাজ্য আইনসভায় অধিবেশন না হলে রাজ্যপাল জরুরি পরিস্থিতির মােকাবিলার জন্য অর্ডিন্যান্স বা জরুরি আইন জারি করতে পারেন। এই জরুরি আইন আইনের মতােই কার্যকরী হয়, তবে আইন সভার অধিবেশনে বসার পর থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে আইনসভা কর্তৃক অনুমােদিত না হলে তা বাতিল হয়ে যায়। কিছু কিছু অর্ডিন্যান্স জারি করার পূর্বে, তাঁকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলােচনা করে তার নির্দেশ গ্রহণ করতে হয়।

(C) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া রাজ্য আইনসভায় কোনাে অর্থবিল পেশ করা যায় না (২০৫ এবং ২০৭ নং ধারা)। রাজ্যের বাৎসরিক ব্যয় বরাদ্দ বিল বা বাজেটকে তিনি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর মারফত রাজ্য আইনসভায় পেশ করার ব্যবস্থা করেন। আকস্মিকভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির মােকাবিলায় রাজ্যের জরুরি তহবিল (Contingency Fund) তার তত্ত্বাবধানে থাকে।

(D) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যপালের উল্লেখযােগ্য বিচার ক্ষমতার কয়েকটি হল নিম্নরূপ一

  • বিচারকদের নিয়ােগ: রাজ্যপাল জেলা জজ এবং অন্যান্য পদস্থ বিচার বিভাগীয় অফিসারদের নিয়ােগ করতে পারেন। কিন্তু হাইকোর্টের বিচারপতিদের রাজ্যপাল নিয়ােগ করেন না তবে তাদের নিয়ােগ করার সময় রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের পরামর্শ গ্রহণ করে থাকেন।
  • দণ্ডাদেশ হ্রাস সংক্রান্ত ক্ষমতা: যেসব বিষয়ে রাজ্যের শাসন বিভাগের ক্ষমতা প্রসারিত, রাজ্যপাল সেইসব বিষয়ে অনুষ্ঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে আদালতের রায়ে অভিযুক্ত অপরাধীর দণ্ড হ্রাস বা মকুব করতে পারেন। মৃত্যু দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনাে ব্যক্তির দণ্ডাদেশ তিনি স্থগিত রাখতে বা মকুব করতে পারেন না। কারণ সে ক্ষমতা একমাত্র রাষ্ট্রপতির রয়েছে।

(E) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা: সাধারণভাবে রাজ্যপাল রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে তার ক্ষমতা প্রয়ােগ করে থাকেন কিন্তু এমন কিছু ক্ষমতা আছে যেখানে মন্ত্রীসভার পরামর্শ গ্রহণ করা রাজ্যপালের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজ্যপালের এই ক্ষমতাকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে (১৬৩ নং ধারা)।

  • উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রশাসনের ক্ষেত্রে অসমের রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারেন। অসম সরকার কর্তৃক জেলাপরিষদকে প্রদেয় খনিজ লাইসেন্স-এর রয়্যালটি সম্পর্কে বিরােধ দেখা দিলে রাজ্যপাল স্ববিবেচনামতাে সেই বিরােধের মীমাংসা করতে পারেন।
  • রাষ্ট্রপতি যদি কোনাে রাজ্যের রাজ্যপাল কে পার্শ্ববর্তী কোনাে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসক নিযুক্ত করেন, তবে সেক্ষেত্রে রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার পরামর্শ ছাড়াই স্বেচ্ছাধীনভাবে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ ছাড়া নাগাল্যান্ডের তিয়েনসান জেলার আলেক পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে এবং নারীদের উগ্রপন্থী কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য তিনি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগের মাধ্যমে রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সমর্থ হন।
  • সিকিম, মণিপুরের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য রাজ্যপাল কিছু বিশেষ ক্ষমতা ভােগ করে থাকেন। রাজ্যপাল ৩৫৬নং ধারানুযায়ী রাজ্যে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে পারেন। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতি মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট রাজ্যের রাজ্যপালকে তাদের অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিশেষ কিছু দায়িত্ব দিয়ে থাকেন, সেই দায়িত্ব সেই রাজ্যের রাজ্যপাল নিজ বিবেচনা অনুযায়ী পালন করে থাকেন।
  • সিকিমের রাজ্যপাল শাস্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতিবিধানের জন্য কিছু কিছু বিশেষ ক্ষমতা ভােগ করে থাকেন। এই ক্ষমতাগুলি প্রয়ােগ করতে গিয়ে তিনি স্বেচ্ছাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার বৈধতা নিয়ে আদালতে কোনাে প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় না।

রাজ্যপালের পদমর্যাদা

কোনাে কোন সংবিধান বিশেষজ্ঞ রাজ্যপালকে রাজ্য প্রশাসনের একজন প্রকৃত ক্ষমতাসম্পন্ন শাসক হিসেবে প্রতিপন্ন করেছেন। রাজ্যপাল রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হলেও তিনি কিন্তু মূলত নিয়মতান্ত্রিক শাসকরূপেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছেন।

গণপরিষদের অন্যতম সদস্য সংবিধান-প্রণেতা ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর বলেছিলেন যে, রাজ্যপাল কোনাে ক্ষমতা ভােগ করেন না। তাই তাকে মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হয়।

কে এম মুন্সী বলেছিলেন যে, রাজ্যপাল মন্ত্রীসভাকে উপেক্ষা করবেন না, তিনি গ্রেট ব্রিটেনের রাজা-রানির মতাে ভূমিকা পালন করবেন, তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকলেও তা কোনােক্রমেই রাজ্যে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার পরিপন্থী হবে না। তিনি হলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান (Constitutional Head) বা নামসর্বস্ব প্রধান (Nominal Head)। উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল সরোজিনী নাইডু-রাজ্যপালের পদটিকে সোনার খাঁচায় বন্দি পাখির (A Bird in Golden Cage) সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল (বর্তমান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, ১৮ জুলাই ২০১৪) নিয়মতান্ত্রিক শাসক নন, তিনি হলেন প্রকৃত শাসক। আসলে ভারতে অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের দ্বৈত ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। একদিকে তিনি রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান অন্যদিকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে কেন্দ্রের প্রতিনিধি। তিনি যখন স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করেন এবং কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন তখন তিনি মন্ত্রীসভার পরামর্শমাফিক চলতে বাধ্য থাকে না। এইসমস্ত ক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পরামর্শক্রমে পরিচালিত হন। তাই বলা যেতে পারে যে, বাস্তবে রাজ্য সরকারের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার জন্যই সংবিধানে এইভাবে রাজ্যপালের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।