অ্যালান বলের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক সংস্কৃতির শ্রেণীবিন্যাস:

প্রচলিত রাজনীতিক প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক সংস্কৃতির শ্রেণী-বিভাজন সম্ভব। এ প্রসঙ্গে অ্যালান বল তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে রাজনীতিক সংস্কৃতির শ্রেণী-বিভাজনের ক্ষেত্রে কতকগুলি বিষয় বিচার-বিবেচনা করা দরকার। এই বিষয়গুলি হল: সমাজের সদস্যরা রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে ভূমিকা গ্রহণ করেন কি-না, সরকারী কাজকর্ম থেকে তাঁরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আশা করেন কি-না, সরকারের কার্যাবলীর ব্যাপারে জনসাধারণের অবগতির মাত্রা ও প্রকৃতি, সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে জনগণের আগ্রহ প্রভৃতি। বল বলেছেন: “Political cultures can be classified according to whether members of society take an active role in the political process and expect benefits from governmental activity, or whether there is a passive relationship in which individuals know very little about government activity, and do not expect to share in the decision making process.

The Civic Culture শীর্ষক গ্রন্থে অ্যালমন্ড ও ভার্বা (Almond and Varba) বিভিন্ন রাজনীতিক সংস্কৃতির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিন শ্রেণীর রাজনীতিক সংস্কৃতির উল্লেখ করেছেন। এই তিন শ্রেণীর রাজনীতিক সংস্কৃতি হল : 

  • (১) সংকীর্ণতাবাদী রাজনীতিক সংস্কৃতি (Parochial Political Culture), 

  • (২) অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিক সংস্কৃতি (Participatory Political Culture) এবং 

  • (৩) নিষ্ক্রিয় রাজনীতিক সংস্কৃতি (Subject Political Culture)।

(১) সংকীর্ণতাবাদী রাজনীতিক সংস্কৃতি: সাধারণত অনুন্নত দেশগুলিতে এবং সনাতন সমাজব্যবস্থায় রাজনীতিক বিষয়াদি সম্পর্কে ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চেতনা ও আগ্রহের অভাব বা ব্যাপক উদাসীনতা দেখা যায়। রাজনীতিক জীবনধারা এবং জাতীয় রাজনীতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে দেশবাসীর প্রবল অনীহার কারণে সংকীর্ণতাবাদী রাজনীতিক সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়। এ ধরনের রাজনীতিক সংস্কৃতিতে ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রাজনীতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞতাসম্ভৃত ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় না। ডেভিস ও লুইস এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “It exists in simple traditional societies in which there is very little specialisation and where actors fulfil a combination of political economic and religious roles simultaneously: ” সংকীর্ণতাবাদী রাজনীতিক সংস্কৃতিতে জনসাধারণের মধ্যে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রসঙ্গেও সচেতনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। সংকীর্ণতাবাদী রাজনীতিক সংস্কৃতির অবসানের জন্য শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার এবং রাজনীতিক যোগাযোগের প্রসারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে এশিয়া ও আফ্রিকা এই দুটি মহাদেশে এখনও অনেক অনুন্নত অঞ্চল আছে। এই সমস্ত অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিশেষভাবে অনগ্রসর। এই সমস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয় রাজনীতিক ব্যবস্থা ও রাজনীতিক জীবন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অনীহা অনস্বীকার্য।

(২) অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিক সংস্কৃতি: অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিক সংস্কৃতিতে প্রত্যেক নাগরিক রাজনীতিক বিষয়ে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। ব্যক্তিমাত্রেই নিজেকে দেশের বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার একজন সক্রিয় সদস্য হিসাবে বিবেচনা করে।‌ প্রচলিত রাজনীতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির অংশগ্রহণ ও মূল্যায়ন এ ধরনের রাজনীতিক সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ব্যক্তিমাত্রেই তার অধিকার, ক্ষমতা ও কর্তব্য সম্পর্কে সতত সচেতন থাকে। অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিক সংস্কৃতির অন্যতম ভিত্তি হিসাবে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার সমালোচনা ও মূল্যায়নের কথা বলা হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে ডেভিস ও লুইস বলেছেন: “Evaluation and criticism of the system exist at all levels, and it is generally accepted as discernible that political activity should be under the close scrutiny of individuals and groups within society.” তবে এ ধরনের রাজনীতিক সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব অনুকূল হতে পারে, আবার প্রতিকূলও হতে পারে। অর্থাৎ অংশগ্রহণকারীরা বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার সংরক্ষণের ব্যাপারে সক্রিয় হতে পারে, আবার অনুরূপভাবে আমূল পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারে।

(৩) নিষ্ক্রিয় রাজনীতিক সংস্কৃতি: নিষ্ক্রিয় রাজনীতিক সংস্কৃতিতে রাজনীতিক বিষয়াদিতে জনগণের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে এবং তাদের জীবনধারার উপর রাষ্ট্রীয় কাজকর্মের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণ সম্পূর্ণ সচেতন থাকে। রাজনীতিক জীবন সম্পর্কে উৎসাহের অস্তিত্ব সত্ত্বেও এখানে ব্যক্তিবর্গ সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার কোন চেষ্টা করে না। বরং সরকারের অধিকাংশ সিদ্ধান্তকেই বিনা প্রতিরোধে কর্তৃত্বসম্পন্ন বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা নীতি নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের উদ্যোগ বা উৎসাহ জনগণের মধ্যে দেখা যায় না। রাজনীতিক বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে এই প্রবণতার জন্য এ ধরনের রাজনীতিক সংস্কৃতিকে নিষ্ক্রিয় রাজনীতিক সংস্কৃতি বলে। এ ধরনের রাজনীতিক সংস্কৃতিতে জনগণ ‘উপকরণ-কাঠামো’ (Input structure)-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দরকার আছে বলে মনে করে না। উপকরণ-কাঠামো ও ব্যক্তিগত ভূমিকা সম্পর্কে ব্যক্তিবর্গ সাধারণত উদাসীন থাকে। কিন্তু আইন, সরকারী সুযোগ-সুবিধা প্রভৃতি ‘উপপাদ-কাঠামো (Output structure) সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে জোহারী বলেছেন: “It (Subject Political Culture) exists where there is a high frequency of orientation to the system as a whole and to its specifically output aspects.”

রাজনীতিক সংস্কৃতির শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কে অ্যালান বলের ব্যাখ্যা:

রাজনীতিক সংস্কৃতির শ্রেণীবিভাজন সম্পর্কিত উপরিউক্ত তাত্ত্বিক বিচার বিশ্লেষণ সত্ত্বেও এ কথা বলা দরকার যে-কোন দেশের রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই কোন বিশেষ শ্রেণীর রাজনীতিক সংস্কৃতি বিশুদ্ধভাবে বর্তমান থাকে না। প্রত্যেক রাজনীতিক সংস্কৃতিই হল আসলে মিশ্র সংস্কৃতি। সমজাতীয় রাজনীতিক সংস্কৃতি কোন রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই দেখা যায় না। বল-এর অভিমত অনুসারে অধিকাংশ সমাজব্যবস্থাতেই রাজনীতিক সংস্কৃতি হল মিশ্র প্রকৃতির। তিনি বলেছেন: “In most societies they will be found in mixed form, and the degree of emphasis the particular values and attitudes receive will provide the key to the overall cultural pattern.” বস্তুত রাজনীতিক সংস্কৃতির ব্যবহারিক রূপই হল মিশ্র সংস্কৃতি। বার্গহর্ণ (F. C. Barghoorn) প্রণীত Politics in the USSR শীর্ষক গ্রন্থ থেকে অধ্যাপক বল পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের উদাহরণ উল্লেখ করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনীতিক সংস্কৃতিকে অংশগ্রহণকারী নিষ্ক্রিয় রাজনীতিক সংস্কৃতি (participatory-subject political culture) বলে। এখানে এটাই স্বাভাবিক যে নাগরিকরা দেশের রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের যুক্ত করবে, সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কে সচেতন হবে এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারী গোষ্ঠীসমূহে যোগদানের ব্যাপারে উৎসাহী ও উদ্যোগী হবে। এতদ্‌সত্ত্বেও শাসনকারী কর্তাব্যক্তিরা শাসিতদের কাছ থেকে আনুগত্য আশা করেন এবং সরকারী নির্দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচার-আচরণ আশা করেন।

তিন ধরনের মিশ্র রাজনীতিক সংস্কৃতি: বাস্তবে বিশ্বের সকল দেশের রাজনীতিক সংস্কৃতিই হল মিশ্র প্রকৃতির। সংকীর্ণতাবাদী, অংশগ্রহণমূলক এবং নিষ্ক্রিয় রাজনীতিক সংস্কৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক সংস্কৃতির মিশ্র প্রকৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। অ্যালমন্ডের অভিমত অনুসারে নাগরিক সংস্কৃতি (Civic culture) গঠিত হয় রাজনীতিক সংস্কৃতির বিশুদ্ধ তিনটি শ্রেণীর সংমিশ্রণের মাধ্যমে। অ্যালমন্ড তিন ধরনের মিশ্র রাজনীতিক সংস্কৃতির কথা বলেছেন। মিশ্র রাজনীতিক সংস্কৃতির এই তিনটি ধরন হল: 

  • (১) সংকীর্ণতাবাদী-নিষ্ক্রিয় রাজনীতিক সংস্কৃতি (Parochial Subject Political Culture), 

  • (২) নিষ্ক্রিয় অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিক সংস্কৃতি (Subject- Participatory Political Culture) এবং 

  • (৩) সংকীর্ণতাবাদী অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিক সংস্কৃতি (Parochial Participatory Political Culture).

রাজনীতিক সংস্কৃতির শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কে অ্যালমন্ড ও পাওয়েল:

Comparative Politics শীর্ষক গ্রন্থে অ্যালমন্ড ও পাওয়েল সাবেকী সমাজে এবং আধুনিক সমাজে রাজনীতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সাবেকী এবং আধুনিক সমাজে রাজনীতিক সংস্কৃতি পৃথক প্রকৃতির হয়ে থাকে। সাবেকী সমাজে ধর্মের প্রভাব-প্রতিপত্তি অধিক। এই ধরনের সমাজব্যবস্থায় ব্যক্তির অবস্থান নির্ধারিত হয় জন্মগতভাবে প্রাপ্ত মর্যাদার ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মেধা বা গুণগত যোগ্যতার গুরুত্ব অস্বীকৃত। রাজনীতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং আনুষ্ঠানিক নয় এমন সংযোগ সাধনের প্রকৃতি ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত। এখানে মর্যাদা আরোপিত হয়, অর্জিত হয় না। সুনির্দিষ্ট ধরনের সম্পর্ক এবং আরোপিত মর্যাদা সাবেকী সমাজব্যবস্থায় পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু আধুনিক সমাজে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি হল যুক্তিবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষ। এখানে প্রাসঙ্গিক ও আনুষ্ঠানিক ভূমিকার মাধ্যমে ব্যক্তির অবস্থান ও গুরুত্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে এমন কথা বলা যায় না যে, এখানে আনুষ্ঠানিক নয়, এমন পদ্ধতি বা আরোপিত মর্যাদা একেবারে অনুপস্থিত। আধুনিক সমাজেও অ-আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি ও আরোপিত মর্যাদা পরিলক্ষিত হয়। তবে সাবেকী ও আধুনিক নির্বিশেষে সকল রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই মিশ্র প্রকৃতির রাজনীতিক সংস্কৃতির অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে বল তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “The British political culture is a mixture of tradition and modernity.” তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন: “…it is a political culture of hierarchical traditional values interspersed with more recent liberal democratic and collectivist values.”

রাজনীতিক সংস্কৃতির শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কে লুসিয়ান পাই:

লুসিয়ান পাই তাঁর Aspects of Political Development শীর্ষক গ্রন্থে সাবেকী ও উত্তরণশীল সমাজে রাজনীতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। অভিমত অনুসারে সাবেকী সমাজে বিভিন্ন অংশে রাজনীতিক সংস্কৃতি বিভক্ত থাকে। কারণ সাবেকী সমাজে রাজনীতিক বিষয়াদি সম্পর্কে সকলে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন বা মনোভাবাপন্ন নয়। অর্থাৎ রাজনীতিক সংস্কৃতির অখণ্ড চরিত্র সাবেকী সমাজে অনুপস্থিত। সাবেকী সমাজে ব্যক্তিবর্গের অস্থিতিশীল ও বৈচিত্র্যযুক্ত মনস্তাত্ত্বিক বিন্যাসের ভিত্তিতে রাজনীতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠে। এখানে ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত স্বার্থের সঙ্গে সমাজের সাধারণ সমস্যার অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়। নাগরিকদের রাজনীতিক কাজকর্মে অংশগ্রহণের পিছনে বহু ও বিভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দেশ্য কাজ করে। প্রাধান্যকারী কোন রাজনীতিক সংস্কৃতিও এখানে অনুপস্থিত। সাবেকী ও উত্তরণশীল সমাজের বৈশিষ্ট্য হল আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে অসম বিকাশ, শিক্ষার ক্ষেত্রে অব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, পশ্চাদপদ, শিল্প-প্রযুক্তি প্রভৃতি। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে সাবেকী ও উত্তরণশীল সমাজে জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ, সম্প্রদায়, অঞ্চল প্রভৃতি বিচার-বিবেচনার মধ্যেই ব্যক্তির আনুগত্যের বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকে। এখানে বৃহত্তর রাজনীতিক স্বার্থ ও সার্বজনীন রাজনীতিক কাজকর্ম সম্পর্কিত আচার-আচরণ বা বিধি-ব্যবস্থা বিকশিত হয় না। এ ধরনের সমাজে গোষ্ঠীগত, জাতিগত, সম্প্রদায়গত, অঞ্চলগত ও ব্যক্তিগত বিচার-বিবেচনা রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবকে প্রভাবিত করে। লুসিয়ান পাই-এর মতানুসারে স্থিতিশীল রাজনীতিক ব্যবস্থায় অন্য চিত্র পরিলক্ষিত হয়। এখানে বৃহত্তর স্বার্থ ও সার্বজনীন রাজনীতিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ সংযুক্ত থাকে। স্থিতিশীল রাজনীতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রাজনীতিক কার্যাবলী প্রসঙ্গে সাধারণভাবে সহমতের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। এবং এই কারণে অপেক্ষাকৃত সমজাতীয় রাজনীতিক সংস্কৃতি হল স্থিতিশীল রাজনীতিক ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।