রাজনীতি বিজ্ঞানের আলোচনায় রাজনীতিক ধারণা ও মতাদর্শসমূহ বহু ও বিভিন্ন। এদের প্রকারভেদ করা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে বিবিধ উদ্যোগ-আয়োজন পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সর্বাধিক পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিটি হল বাম-ডান রাজনীতিক বিভাজন। এই বিভাজন রৈখিক। সমান্তরাল প্রাপ্তবিশিষ্ট রেখার দু’প্রান্তে দু’ধরনের মতাদর্শসমূহের অবস্থান। রাজনীতিক বিশ্বাস ও অবস্থান অনুযায়ী বাম প্রান্তবর্তীদের বামপন্থী এবং ডান প্রান্তবর্তীদের দক্ষিণপন্থী বলা হয়।
র্যাডিক্যাল বা বৈপ্লবিক মতাদর্শগুলি হল বামপন্থী এবং রক্ষণশীল মতবাদগুলি হল দক্ষিণপন্থী। সাধারণত রৈখিকভাবে বাম প্রান্ত থেকে ডান প্রান্ত পর্যন্ত মতাদর্শগুলিকে বিন্যস্ত করা যায়: মার্কসবাদ বা কমিউনিস্ট মতবাদ, সমাজতন্ত্রবাদ, উদারনীতিবাদ, সংরক্ষণশীলতাবাদ, ও ফ্যাসিবাদ। হেউড এ বিষয়ে বলেছেন: “There is broad agreement about where different ideas and idologies are located along this spectrum.”
রাজনীতিক মতাদর্শসমূহের রৈখিক বিন্যাসের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনীতিক মূলবোধ বা আর্থনীতিক কর্মপ্রণালী সম্পর্কিত পরস্পর বিরোধী বক্তব্যসমূহ প্রতিফলিত বা প্রকাশিত হয় বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়। আবার এও মনে করা হয় যে, মতাদর্শের রৈখিক শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে সাম্য সংক্রান্ত বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীলরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও পুঁজিবাদের সমর্থক। সাম্যের বিষয়টিকে তারা অদ্ভুতভাবে অবহেলা করেন। তাঁদের অভিমত অনুযায়ী সাম্য হয় অনভিপ্রেত অথবা সাম্য নীতির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বামপন্থীরা কিন্তু সাম্যের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। সাম্য নীতির বাস্তব রূপায়ণের ব্যাপারে তাঁরা বিশেষভাবে আশাবাদী ও আন্তরিক। বামপন্থী মতাদর্শ অর্থনীতি সম্পর্কিত বিবিধ বিষয়াদির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। কমিউনিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসীরা সম্পত্তির ব্যক্তিগত অধিকারের অবসান চান। তাঁরা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত আর্থনীতিক ব্যবস্থার পক্ষপাতী। আধুনিক কালের উদারনীতিবাদীরা এবং সমাজতন্ত্রীরা মিশ্র অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকে স্বীকার ও সমর্থন করেন।
কিন্তু বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থী মতাদর্শসমূহের মধ্যে উপরিউক্ত পার্থক্যমূলক বিচার-বিশ্লেষণের মধ্যে অসঙ্গতির অস্তিত্ব অনস্বীকার্য। নৈরাজ্যবাদীরা সাম্য নীতির প্রতি গভীরভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। সুতরাং এদিক থেকে বিচার করলে নৈরাজ্যবাদীরা চরম দক্ষিণপন্থী। সুতরাং মতাদর্শসমূহের উপরিউক্ত রৈখিক বিন্যাসে নৈরাজ্যবাদের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ দূরূহ ব্যাপার। আবার ফ্যাসিবাদকে উপরিউক্ত রৈখিক বিন্যাসে চরম দক্ষিণপন্থী অবস্থান প্রদান করা হয়েছে। অথচ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় আর্থনীতিক পরিচালনা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকে স্বীকার ও সমর্থন করা হয়। সুতরাং রৈখিক বিন্যাস মোতাবেক মতাদর্শসমূহের শ্রেণীবিভাজন অনেক সময়ই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
অবাধ আধুনিককালের রাজনীতিক আলোচনায় মতাদর্শসমূহের বামপন্থী-দক্ষিণপন্থী এই বিভাজন ক্রমশ অধিকতর জটিল হয়ে পড়েছে। কেবলমাত্র বিপ্লব ও প্রতিক্রিয়াশীলতার মধ্যে পার্থক্যের নিরীখে অতি সাধারণভাবে মতাদর্শসমূহের প্রকারভেদের পরিকল্পনা সম্যকভাবে সঠিক বিবেচিত হয় না। বিষয়টি উদাহরণ সহযোগে আলোচনা করা আবশ্যক। দক্ষিণপন্থী মতামতকে সাধারণভাবে বলা হয় প্রতিক্রিয়াশীল। এ ধরণের মতাদর্শ অনুযায়ী অভিপ্রেত ও অনুকূল অবস্থার অতীতে প্রত্যাবর্তনের কথা বলা হয়। ফ্যাসিবাদ হল উপরিউক্ত রৈখিক বিন্যাস মোতাবেক চরম দক্ষিণপন্থী একটি মতাদর্শ। ফ্যাসিবাদ আবার বিপ্লববাদীও বটে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, ইতালীয় ফ্যাসিবাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সদর্থক এবং প্রগতিমূলক ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অনুপন্থী। আবার সাধারণভাবে বলা হয় যে, বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি হল প্রগতিমূলক এবং বৈপ্লবিক। কিন্তু ঐতিহাসিক বা বাস্তব বিচারে কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীরা ক্ষেত্রবিশেষে পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছে; তারা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সমর্থন করেছে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত অর্থনীতির সংস্কারসাধনের বা অবসানের বিরোধিতা করেছে।
প্রকৃত প্রস্তাবে রাজনীতিক মতাদর্শ হল বিভিন্ন বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও মতবাদ সম্পর্কিত বিষয়াদির এক অতিমাত্র জটিল সংকলন। বিশেষ কোন একটি পদ্ধতিতে প্রকারভেদের পরিকল্পনা অতি সরলীকরণ দোষে দুষ্ট হতে বাধ্য। রৈখিক ধারায় মতাদর্শসমূহের শ্রেণীবিভাজনের ব্যবস্থা করা হয় একটি মাত্র নিরীখের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, সাম্য সম্পর্কিত ধারণা অথবা পরিবর্তনের ব্যাপারে মনোভাব, অথবা আর্থনীতিক দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গিসমূহের প্রকারভেদের পরিকল্পনা করা হয়। অর্থাৎ রাজনীতিকে একমাত্রিক বিষয়ে পরিণত করা হয়। রৈখিক পদ্ধতিতে প্রকারভেদের এটি একটি দুর্বল দিক। এই কারণে দ্বিমাত্রিক বা বহুমাত্রিক মানদণ্ডে অপেক্ষাকৃত জটিল ও বাস্তবধর্মী শ্রেণীবিভাজনের ব্যবস্থা করা যায়।
রৈখিক পদ্ধতিতে রাজনীতিক শ্রেণীবিভাজনের অন্যবিধ সীমাবদ্ধতাও আছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে পৃথক প্রকারের দুটি মতাদর্শের মধ্যে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে কমিউনিস্ট মতবাদ ও ফ্যাসিবাদের কথা বলা যায়। কমিউনিস্ট ও ফ্যাসিবাদী উভয় ধরনের শাসনব্যবস্থায় কর্তৃত্বমূলক এবং পীড়নমূলক রাজনীতিক শাসন কায়েম হতে দেখা যায়। এই কারণে অনেকে কমিউনিস্ট ও ফ্যাসিবাদী শাসনকে সামগ্রিকতাবাদী বলার পক্ষাপাতী। হেউড এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন: “… an alternative political spectrum might be horseshoe-shaped, indicating that the extreme points on the left and the right tend to converge, distinguishing both from the “democratic’ beliefs of liberalism, socialism and conservation.”
দক্ষিণপন্থী মতাদর্শগুলিকে বলা হয় রক্ষণশীল মতাদর্শ। রক্ষণশীল মতাদর্শ বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানসমূহকে, বিশেষত সরকার, অর্থনীতি ও শ্রেণীকাঠামো সম্পর্কিত বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানসমূহকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সমর্থন করে। বামপন্থী মতাদর্শসমূহ বৈপ্লবিক মতবাদ হিসাবে পরিচিত। বৈপ্লবিক মতবাদসমূহ বিদ্যমান সামাজিক কাঠামো বা ব্যবস্থার বিরোধিতা করে এবং পুনর্গঠনের কথা বলে। আধুনিককালের রাজনীতিক পরিস্থিতি পরিমণ্ডলে রাজনীতিক মতাদর্শসমূহের এ ধরনের প্রকারভেদ অতিমাত্রায় জটিল হয়ে পড়েছে। রক্ষণশীল বা প্রতিক্রিয়াশীল এবং বৈপ্লবিক বা র্যাডিক্যাল – এ রকম প্রকারভেদের মাধ্যমে সঠিক অবস্থার সম্যক প্রতিফলন ঘটে না। এ ধরনের শ্রেণীবিভাজনের ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় যে, রাজনীতিক মতাদর্শগুলি একমাত্রিক বা একমুখী। মতাদর্শের নীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট অপরিহার্য কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। মনে করা হয় যে, এগুলি অপরিবর্তনীয় এবং ধর্মীয় বাণীর মত সংরক্ষণযোগ্য।
কিন্তু উপরিউক্ত বক্তব্য সর্বাংশে স্বীকার্য নয়। ঐতিহাসিক বিচারে একই মতাদর্শ এক সময়ে বৈপ্লবিক প্রকৃতির হতে পারে; আবার অন্য সময়ে শাসক গোষ্ঠীর গোঁড়ামি হিসাবে প্রতিপন্ন হতে পারে। আজকের দিনের র্যাডিক্যাল মতাদর্শ আগামী দিনে রক্ষণশীল মতাদর্শ হিসাবে প্রতীয়মান হতে পারে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে উদারনীতিবাদ ছিল একটি বৈপ্লবিক দর্শন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই উদারনীতিবাদ নতুন এক ধরনের গোঁড়ামি হিসাবে পরিগণিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিককার উদারনীতিবাদ ছিল রক্ষণশীল। কিন্তু আধুনিক কালের উদারনীতিবাদকে তা বলা যাবে না। সাম্প্রতিককালে উদারনীতিবাদকে ক্লাসিক্যাল এবং আধুনিক – এই দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়।
কমিউনিস্টরা বিপ্লবী এবং প্রগতিশীল। কিন্তু রাশিয়ায় তারা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত অর্থনীতির সংস্কার সাধনের বিরোধিতা করেছে। অথচ সমকালীন রাশিয়ায় তার প্রয়োজন ছিল। আবার বিভিন্ন উদারনীতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কমিউনিস্টরা এবং সমাজতন্ত্রীরা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার সমর্থনে ভূমিকা পালন করেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রাশিয়ায় মার্কসবাদ অন্যতম বিপ্লবী মতাদর্শ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু ১৯১৭ সালের পরবর্তী পর্যায়ে মার্কসবাদের গায়ে গোঁড়ামির ছাপ লাগানো হয়েছে। আবার মার্কসবাদের মধ্যেই মতাদর্শগত বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখযোগ্য হল ‘সোভিয়েত কমিউনিস্ট মতাদর্শ’, ‘গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের কমিউনিস্ট মতাদর্শ’, ‘পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট মতাদর্শ’ প্রভৃতি। আবার মার্কসবাদী সমাজতন্ত্রীরা অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক গণতন্ত্রীদের বিরোধিতা করেছেন।
রাজনীতিক মতাদর্শসমূহ হল চিন্তাধারার ব্যাপকতর ঐতিহ্যযুক্ত। প্রতিটি রাজনীতিক মতাদর্শই বৈশিষ্ট্যযুক্ত বেশ কিছু বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা সমন্বিত। কিন্তু পরিবর্তনশীল ঐতিহাসিক পরিস্থিতি-পরিমণ্ডলের চাপে রাজনীতিক মতাদর্শের ধারণাসমূহ নিরত্তর সংশোধিত ও পরিশীলিত হয়। প্রত্যেক রাজনীতিক মতাদর্শের মধ্যে বহু ও বিভিন্ন, এমন কি বিরোধী ঐতিহ্য বর্তমান থাকে। ব্যাপকতর পরিধির বিষয়বস্তুকে নিয়ে সকল মতাদর্শের আবেদনের ভিত্তিভূমি রচিত হয়। বাস্তবে সকল রাজনীতিক ধারণাই আকার-আয়তনে স্থিতিস্থাপক বা সম্প্রসারণশীল। কোন রাজনীতিক ধারণার অর্থই অপরিবর্তনীয় নয় বা স্বতঃসিদ্ধ নয়। স্বভাবতই বিশুদ্ধ উদারনীতিবাদ বা আদর্শ সমাজতন্ত্র বলে কিছু হয় না।
আধুনিককালে রাজনীতি বিজ্ঞানের আলোচনায় বিবিধ নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখযোগ্য হল: নারীবাদ, বিশ্বায়ন, পরিবেশ আন্দোলন প্রভৃতি। তারফলে রাজনীতিক ধারণাসমূহের সাবেকি ডান-বাম বিভাজন বহুলাংশ অপ্রাসঙ্গিক প্রতিপন্ন হয়। এ বিষয়ে রাজনীতিক সমাজবিজ্ঞানী গিডেনস ( A. Giddens) তাঁর Beyond Left and Right: The Future of Radical Politics শীর্ষক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। প্রকৃত প্রস্তাবে সাম্প্রতিক কালের রাজনীতি বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়াদির প্রকৃতি ও পরিধির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক মতাদর্শসমূহের দক্ষিণপন্থী-বামপন্থী বিভাজন পুরোপুরি পরিহার করাই বিধেয় বিবেচিত হয়। আগেকার দিনের শ্রেণী মেরুকরণজনিত অবস্থানের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। তারফলেও ডান-বাম বিভাজন সম্পর্কিত প্রক্রিয়া বাস্তবে বহুলাংশে অর্থহীন হয়ে গেছে। পরিবর্তিত রাজনীতিক পরিস্থিতি-পরিমণ্ডলে মতাদর্শসমূহের সাবেকি অবস্থানের মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। সাম্প্রতিক কালে সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বাজার অর্থনীতির প্রতি আগ্রহ-আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হয়। অনুরূপভাবে আবার রক্ষণশীলদের মধ্যে মতাদর্শগত রাজনীতি এবং র্যাডিক্যাল কার্য প্রক্রিয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ-আয়োজন পরিলক্ষিত হয়। হেউড এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন: “The green movement stated this boldly in adopting slogans such as ‘no left or right but ahead.”
Leave a comment