প্রত্যেক রাজনীতিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে একটি রাজনীতিক মতাদর্শের অস্তিত্ব বর্তমান থাকে। এই রাজনীতিক মতাদর্শই রাজনীতিক ব্যবস্থার পরিচালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে থাকে। এই কারণে যে-কোনো রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি পর্যালোচনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক মতাদর্শটি অনুধাবন করা আবশ্যক। অর্থাৎ প্রত্যেক রাজনীতিক ব্যবস্থায় একটি প্রাধান্যকারী রাজনীতিক মতাদর্শ থাকে। বস্তুত সকল সমাজব্যবস্থাতেই বিভিন্ন শ্রেণী থাকে।। এই সমস্ত শ্রেণী স্বার্থও বিভিন্ন শ্রেণী-স্বার্থের বিভিন্নতা অনুসারে সকল সমাজেই প্রত্যেক শ্রেণীর নিজস্ব মতাদর্শ থাকতে দেখা যায়। তবে সমাজে শাসক শ্রেণীর মতাদর্শের কর্তৃত্বমূলক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সকল সমাজব্যবস্থাতেই আর্থ-সামাজিক বিন্যাসের একটি রাজনীতিক উপরি-কাঠামো থাকে। এই রাজনীতিক উপরি-কাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমাজের প্রাধান্যকারী রাজনীতিক মতাদর্শ সম্পর্কযুক্ত থাকে। সুতরাং প্রত্যেক রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই একটি নির্দিষ্ট রাজনীতিক মতাদর্শের ভূমিকার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আবার রাজনীতিক মতাদর্শের ভূমিকা অনুধাবনের জন্য তার কার্যাবলী সম্পর্কে অবহিত হওয়া আবশ্যক। রাজনীতিক মতাদর্শের কার্যাবলী বহু ও বিভিন্ন অনুধাবনের সুবিধার জন্য এই কার্যাবলীকে নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।
রাজনীতিক ধ্যান-ধারণা ও মতাদর্শসমূহ বিভিন্নভাবে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের রাজনীতিক জীবনকে প্রভাবিত করে থাকে।
[1] আনুগত্য সৃষ্টি ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: সমাজব্যবস্থার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে সমন্বয়মূলক রাজনীতিক ধ্যান-ধারণা ও মূল্যবোধসমূহ সৃষ্টি হতে পারে। আবার এক ধরনের সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া হিসাবে রাজনীতিক ধারণা ও মূলবোধ উপর থেকে কার্যকর করা যেতে পারে। এর উদ্দেশ্য হল আনুগত্য সৃষ্টি করা এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা। বিরোধীদের নিরস্ত্র করার জন্য এবং বিরূপ সমালোনাকে যথাসম্ভব মেকাবিলা করার জন্য শাসক এলিটরা রাজনীতিক ধ্যান-ধারণা ব্যবহার করতে পারেন। মতাদর্শমূলক প্রক্রিয়ায় বিরোধিতাকে বহুলাংশে অপসারিত করা যায়। বিশেষত সামগ্রিকতাবাদী রাজনীতিক ব্যবস্থায় সরকারি রাজনীতিক মতাদর্শের মাধ্যমে রাজনীতিক বিরোধিতার মেকাবিলা করা। নাৎসী জার্মানী ও অধুনা অবলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে যথাক্রমে জাতীয় সমাজতন্ত্রবাদ এবং মার্কসবাদ-লেলিনবাদের মাধ্যমে রাজনীতিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সভ্যতা-সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য-শিক্ষা প্রভৃতি সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ রকম রাজনীতিক ব্যবস্থায় সরকারি রাজনীতিক ধারণা ও মতাদর্শের বিরোধী বক্তব্য ও মতামতকে দমিয়ে রাখার ও নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হয়। তবে সাধারণভাবে বলা যায় যে সকল সামাজিক ও রাজনীতিক ব্যবস্থায় সুক্ষ্মভাবে সুকৌশলে রাজনীতিক মতাদর্শমূলক উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা করা হয়।
[2] রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি নির্ধারণ: বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থা বর্তমান। বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থাসমূহ সব সময়ই নির্দিষ্ট রাজনীতিক ধারণা ও মূলবোধসমূহের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি নির্ধারণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতিক ধারণাসমূহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। আগেকার দিনে চূড়ান্ত রাজতন্ত্রই ছিল স্বাভাবিক ও বহুলভাবে প্রচলিত শাসনব্যবস্থা। অবাধ রাজতন্ত্র ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। আধুনিক কালের অধিকাংশ পশ্চিমী রাজনীতিক ব্যবস্থাসমূহ উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। পশ্চিমী উদারনীতিক গণতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধ সাংবিধানিক সরকার; প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা; নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রভৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ঐতিহ্যবাদী কমিউনিস্ট রাজনীতিক ব্যবস্থা মার্কসাবাদী লেনিনবাদী ধ্যান-ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। কমিউনিস্ট রাজনীতিক ব্যবস্থাসমূহও কতকগুলি মৌলিক মার্কসাবদী-লেনিনবাদী ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন এক দলীয় ব্যবস্থা। কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থায় একটি মাত্র রাজনীতিক দল, অর্থাৎ কেবলমাত্র শাসক কমিউনিস্ট দলের অস্তিত্বকেই স্বীকার করা হয়। শাসক কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃত্ব লেনিনবাদী এই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত যে, কেবলমাত্র কমিউনিস্ট পার্টিই শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থসমূহের প্রতিনিধিত্ব করে।
[3] লক্ষ্য নির্ধারণ: রাজনীতিক ধারণা ও মতাদর্শসমূহ লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়; তদনুসারে রাজনীতিক কার্যাবলী অনুপ্রাণিত হয়। অধিকাংশ রাজনীতিবিদই ক্ষমতা দখলের ব্যাপারে সতত সচেষ্ট থাকেন। এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। স্বভাবতই রাজনীতিকদের বাস্তববাদী হতে হয়। তাঁরা নির্বাচনী জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চান। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, সামরিক বাহিনী, ধর্মীয় জনসম্প্রদায় প্রভৃতি শক্তিশালী গোষ্ঠীসমূহের সমর্থন অর্জনের ব্যাপারে রাজনীতিকরা উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করেন। ক্ষমতা অর্জিত হলে তার প্রয়োগের ব্যাপারেও রাজনীতিকদের নিজস্ব ধারণা, মূল্যবোধ ও বিশ্বাস বর্তমান থাকে।
[4] ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি: সমাজের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শ্রেণী ও গোষ্ঠীসমূহ ধ্যান-ধারণা ও মতাদর্শের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ বা সুসংহত হতে পারে। রাজনীতিক ধ্যান-ধারণা ও মতাদর্শসমূহ সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে এবং ঐক্য সম্পাদনকারী শক্তি হিসাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। রাজনীতিক ধারণা ও মতাদর্শসমূহের মাধ্যমে সামাজিক গোষ্ঠীসমূহ, বস্তুত সমগ্ৰ সমাজ সংহতি সম্পাদনকারী বিশ্বাস ও মূল্যবোধ লাভ করে। অধিকাংশ পশ্চিমী রাষ্ট্রসমূহে উদারনীতিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসমূহ সংহতি সাধনমূলক শক্তি হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলিম দুনিয়ায় ইসলামের নৈতিক বিধি-ব্যবস্থা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধসমূহ ঐক্য সম্পাদনকারী শক্তি হিসাবে কাজ করে। রাজনীতিক ধারণাসমূহ সমাজে সুসংহত রাজনীতিক সংস্কৃতির সৃষ্টি করে। তারফলে সামাজিক শৃঙ্খলা ও স্থায়িত্ব নিরাপদ হয় এবং নিশ্চয়তা লাভ করে।
[5] সংহতি ও বিচ্ছিন্নতা উভয়ের কারণ হিসাবে কাজ করে: অ্যালান বল-এর অভিমত অনুসারে রাজনীতিক মতাদর্শ সমাজে সংহতি ও বিচ্ছিন্নতা উভয়েরই কারণ হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ রাজনীতিক মতাদর্শ সমাজে সংহতি ও বিচ্ছিন্নতা উভয়ই আনয়ন করে। সমাজের সমস্বার্থ বিশিষ্ট বিভিন্ন অংশের মধ্যে অভিন্ন মতাদর্শের ভিত্তিতে ঐক্য সংহতির সৃষ্টি হয়। সমাজে প্রাধান্যকারী মতাদর্শের প্রভাবে সংকীর্ণতাজনিত বিভেদ-বিসংবাদের কারণসমূহ দূরীভূত হয়। সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংহতির সৃষ্টি হয়। হিটলারের আমলে নাৎসিবাদ জার্মানের অধিবাসীদের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধ ও সংহতির সৃষ্টি করেছে। আবার বিপরীতক্রমে রাজনীতিক মতাদর্শগত বিরোধ বিভেদ ও বিবাদ-বিসংবাদের সৃষ্টি করে। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী ও শ্রেণী-স্বার্থ থাকলে তদনুসারে একাধিক মতাদর্শের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। পরস্পর-বিরোধী মতাদর্শের অস্তিত্বের কারণে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হয় এবং অনৈক্য ও বিভেদ প্রতিপন্ন হয়।
[6] বিবিধ স্বার্থ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি: রাজনীতিক ধারণাসমূহের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণীর বিবিধ স্বার্থ, জীবনধারাগত অভিজ্ঞতাসমূহ, আশা-আকাঙ্খা প্রভৃতির অভিব্যক্তি ঘটে। স্বভাবতই রাজনীতিক মতাদর্শ সামাজিক শ্রেণীর মধ্যে সংহতিবোধের সৃষ্টি করে। সুনির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেণীসমূহের সঙ্গে রাজনীতিক মতাদর্শসমূহকে সাধারণভাবে সংযুক্ত থাকতে দেখা যায়। শ্রমজীবী শ্রেণীর সঙ্গে সমাজতন্ত্র সংযুক্ত। ভূস্বামী অভিজাত শ্রেণীর সঙ্গে সংযুক্ত রক্ষণশীলতাবাদ। আবার উদারনীতিবাদ সাধারণত সংযুক্ত থাকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীসমূহের সঙ্গে।
[7] দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি: সচেতন বা অসচেতন যেভাবেই হোক না কেন, বিশেষ কিছু রাজনীতিক ধারণা ও মূল্যবোধের প্রতি প্রত্যেক মানুষের আনুগত্য, আস্থা বা বিশ্বাস পরিলক্ষিত হয়। সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক ধারণাসমূহ ব্যক্তিবর্গের আচার-ব্যবহারকে প্রভাবিত করে এবং কাজকর্মকে পরিচালিত করে। রাজনীতিক ধ্যান-ধারণার মাধ্যমে মানুষজন একটি দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তারা এই বিশ্বসংসারকে দেখে। সেভাবেই ব্যক্তিবর্গ এই দুনিয়াকে বোঝে ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। অ্যান্ড্রু হেউড তাঁর Political Ideologies শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বলেছেন: “People do not see the world as it is, but only as they expect it to be; in other words, they see it through a veil of ingrained beliefs, opinions and assumptions.”
[8] রাজনীতিকদের আচরণ ও ক্রিয়াকার্যের উপর প্রভাব: রাজনীতিকদের রাজনীতিক ধ্যান ধারণা বা মতাদর্শগত বিশ্বাস থাকে। কিন্তু কোন রাজনীতিবিদই অন্ধভাবে রাজনীতিক মতাদর্শের অনুগামী হন না। রাজনীতিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য বা অর্জিত ক্ষমতার অধিকারকে অব্যাহত রাখার জন্য রাজনীতিকরা কৌশলগত কারণে সমঝোতা করেন। রাজনীতিকরা মতাদর্শগত বিচার-বিবেচনা এবং বাস্তব পরিস্থিতির তাগিদ—এই দু’য়ের মধ্যে যথাসম্ভব ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেন। তবে এই ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনীতিকের মধ্যে অল্পবিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আবার একই রাজনীতিবিদের রাজনীতিক জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ বিষয়ে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তবে রাজনীতিবিদদের আচরণ ও ক্রিয়াকর্মের উপর রাজনীতিক ধারণা ও মতাদর্শের সিদ্ধান্তমূলক প্রভাব বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। লেনিনের মত মার্কসবাদী বিপ্লবীদের চূড়ান্ত রাজনীতিক লক্ষ্য হল শ্রেণীহীন কমিউনিস্ট সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা। তবে সমকালীন পরিস্থিতির প্রয়োজনে কৌশলগত কারণে লেনিনও সাময়িকভাবে সমঝোতা করেছেন। তিনি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। এতদ্সত্ত্বেও বিংশ শতাব্দীর কুড়ির দশকের গোড়ার দিকে ‘নয়া আর্থনীতিক নীতি’ (New Economic Policy) চালু করেন। এই নীতি অনুসারে রাশিয়ায় সীমবদ্ধভাবে বেসরকারী উদ্যোগের পুনরুত্থানকে অনুমতি দেওয়া হয়। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘রিপাবলিকান’ ও ‘ডেমোক্রাট’ নির্বিশেষে সকল রাজনীতিকই মার্কিন মতাদর্শের অনুগামী। মার্কিন মতাদর্শ বলতে যা বোঝায় তা হল উদারনীতিক পুঁজিবাদী মূল্যবোধ, উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুযোগ-সুবিধাসমূহ এবং মার্কিন সাংবিধানিক নীতিসমূহ।
[9] রাজনীতিক কাঠামোর বৈধকরণ ও ক্ষমতার বণ্টন: রাজনীতিক ব্যবস্থার মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন এবং রাজনীতিক কাঠামোকে বৈধতা প্রদান রাজনীতিক মতাদর্শের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে বিবেচিত হয়। অ্যালান বল এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “All ideologies are concerned with nature of distribution of power.” তাঁর আরও অভিমত হল: “… the most important function of an ideology.is to legitimise the political structures and the distribution of political power.” উদাহরণ হিসাবে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কথা বলা যায়। এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় মার্কসবাদের ভিত্তিতে রাজনীতিক কাঠামো বৈধতাযুক্ত হয় এবং মার্কসীয় দর্শন অনুসারে ক্ষমতা বণ্টনের পদ্ধতি বৈধতা লাভ করে। আবার উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয় এবং যাবতীয় রাজনীতিক ক্ষমতার উৎস হিসাবে জনগণের ইচ্ছাকে নির্দেশ করা হয়। এই কারণে উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার, নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিনিধি নির্বাচন, প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার পরিচালনা, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীসমূহের ভূমিকার গুরুত্ব, গণমাধ্যমগুলির স্বাধীনতা প্রভৃতি পরিলক্ষিত হয়। গণতান্ত্রিক মতাদর্শের ভিত্তিতে উদারনীতিক রাজনীতিক কাঠামো বৈধতা প্রাপ্ত হয়। সরকার ও সরকারী নীতির বৈধতা সংরক্ষণের ব্যাপারেও মতাদর্শের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
[10] মতাদর্শের মাধ্যমে শ্রেণী সম্পর্ক ও শ্রেণীর উদ্দেশ্য বোঝা যায়: সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী ও শ্রেণী স্বার্থ থাকে। এবং প্রত্যেক শ্রেণীর নিজস্ব মতাদর্শ থাকে। এই মতাদর্শ সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর শ্রেণী-স্বার্থের অনুকূল হয়। তাই শ্রেণীমাত্রেই এই মতাদর্শ অনুসারে পরিচালিত হয়ে থাকে। সুতরাং প্রতিটি সামাজিক শ্রেণীর স্বরূপ ও উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর মতাদর্শের মাধ্যমে অনুধাবন করা যায়। সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর সামাজিক অবস্থান ও ভূমিকা, লক্ষ্য ও প্রকৃতি প্রভৃতি সেই শ্রেণীর রাজনীতিক মতাদর্শের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ার্কসবাদীদের মতানুসারে চূড়ান্ত বিচারে মতাদর্শের মাধ্যমেই শ্রেণী-সম্পর্ক নির্ধারিত হয়ে থাকে। সমাজের দুই প্রধান শ্রেণীর মধ্যে যে সংগ্রাম বর্তমান, মার্কসবাদীদের মতে তা হল মতাদর্শগত সংগ্রাম। প্রকৃত প্রস্তাবে সমাজের শ্রেণীসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রাজনীতিক মতাদর্শ থেকেই বোঝা যায়।
[11] রাজনীতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা সংরক্ষণ: রাজনীতিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনয়ন বা প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধনের ক্ষেত্রে রাজনীতিক মতাদর্শের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যে-কোনো রাজনীতিক ব্যবস্থায় কর্তৃত্বকারী শ্রেণীর পক্ষে এবং বিরোধীদের বিপক্ষে রাজনীতিক মতাদর্শকে ব্যবহার করা হয়। অ্যালান বলের অভিমত অনুসারে সমাজের কোন প্রাধান্যকারী মতাদর্শ থাকলে সংশ্লিষ্ট সমাজের রাজনীতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। কারণ সেই কর্তৃত্বশালী মতাদর্শের স্বীকৃত মূল্যবোধের একটি নির্দিষ্ট কাঠামো থাকে। সম্ভাব্য সকল রকম বিরোধের মীমাংসা সেই কাঠামোর মধ্যে সম্পাদিত হয়। তার ফলে রাজনীতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলা যায়। এই সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা সংরক্ষণের স্বার্থে মার্কসীয় মতাদর্শের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। অনুরূপভাবে আবার উদারনীতিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক মতাদর্শকে ব্যবহার করা হয়। আবার বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে। রাজনীতিক ব্যবস্থায় কর্তৃত্ব বা প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে সমশক্তির একাধিক রাজনীতিক মতাদর্শ বর্তমান থাকলে তাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মতাদর্শগত সংঘাতের সৃষ্টি হয়। তার ফলে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়।
[12] রাজনীতিক অংশগ্রহণের কারণ: সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গ রাজনীতিক কার্যপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এই রাজনীতিক অংশগ্রহণের (Political Participation) পিছনে নানা কারণ কাজ করে। এই সমস্ত কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রাজনীতিক ক্ষমতা লাভ, রাজনীতিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, আর্থিক লাভ, জনকল্যাণ, সামাজিক পুনর্গঠন প্রভৃতি। কিন্তু এইভাবে ব্যক্তির রাজনীতিক অংশগ্রহণকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। ব্যক্তির রাজনীতিক অংশগ্রহণের সামগ্রিক পরিচয় পাওয়ার জন্য রাজনীতিক মতাদর্শের সাহায্য দরকার। রাজনীতিক কার্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে নাগরিকদের সংযোগ রাজনীতিক মতাদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা যায়। আবার সকল রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই মতাদর্শের মাধ্যমে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে দেখা যায়। যুদ্ধ বা সংকটকালীন অবস্থায় রাষ্ট্রের কর্ণধারদের এই উদ্দেশ্যে রাজনীতিক মতাদর্শকে ব্যবহার করতে দেখা যায়। বস্তুত রাজনীতিক মতাদর্শের ভাষায় রাজনীতিক প্রক্রিয়ার পর্যালোচনা সহজতর হয়।
[13] দাবি-দাওয়ার গ্রন্থিকরণ ও উপস্থাপনা: দাবি-দাওয়ার গ্রন্থিকরণ এবং উত্থাপনের ব্যাপারে রাজনীতিক মতাদর্শ সাহায্য করে। সকল দেশের রাজনীতিক ব্যবস্থায় দাবি-দাওয়া উত্থাপন বা পেশ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনীতিক দল মতাদর্শের সাহায্য নেয়। প্রকৃত প্রস্তাবে নির্দিষ্ট মতাদর্শের আবরণে দাবিগুলিকে আবৃত করা হয় এবং তারপর সেগুলি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয়। প্রত্যেক রাজনীতিক ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট মূল্যবোধের কাঠামোর মধ্যে দাবিগুলি পেশ করার ব্যবস্থা করা হয়। এবং সংশ্লিষ্ট মূল্যবোধের কাঠামো রাজনীতিক মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল নির্বিশেষে সকলেই রাজনীতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে নিজেদের দাবি-দাওয়ার বৈধতা ও যথার্থতা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে।
[14] রাজনীতিক দলের উৎপত্তির ভিত্তি: যে-কোনো রাজনীতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক দলব্যবস্থার উৎপত্তির ক্ষেত্রেও রাজনীতিক মতাদর্শের অবদান অনস্বীকার্য। রাজনীতিক মতাদর্শগত ভিত্তিতেই রাজনীতিক দলের উৎপত্তি হয়। এই কারণে যে রাজনীতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন মতাদর্শ বর্তমান থাকে সেখানে বহু রাজনীতিক দলের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মতাদর্শকে বাস্তবে রূপায়িত করার উদ্দেশ্যে বহু রাজনীতিক দল গড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলা যায়। এ ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণী ও শ্রেণী-স্বার্থ থাকে। প্রতিটি সামাজিক শ্রেণীর নিজস্ব মতাদর্শ থাকে। এই সমস্ত মতাদর্শের ভিত্তিতে বহু রাজনীতিক দল গড়ে উঠে।
[15] গোষ্ঠী বা শ্রেণীগত স্বার্থ সাধন: শ্রেণী বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ সাধনের উদ্দেশ্যে মতাদর্শের সাহায্য গ্রহণ করা হয়। আসল উদ্দেশ্যকে আড়ালে রেখে মতাদর্শের দোহাই দিয়ে জনগণকে রাজনীতিক কার্যপ্রক্রিয়ায় সামিল করার চেষ্টা করা হয়। এই মতাদর্শগত কৌশলের মাধ্যমে শ্রেণী, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থ সিদ্ধির প্রচেষ্টা সকল রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই অল্পবিস্তর পরিলক্ষিত হয়। রাজনীতিক দল, দলীয় নেতৃবৃন্দ এমনকি পদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদেরও এ রকম মতাদর্শগত কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যায়।
[16] সমাজের আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক পরিচয় প্রকাশ করে: রাজনীতিক মতাদর্শের মাধ্যমে সমাজের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ব্যক্ত হয়ে থাকে। প্রত্যেক সমাজেই একটি প্রাধান্যকারী রাজনীতিক মতাদর্শের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। আবার রাজনীতিক মতাদর্শমাত্রেই এক নির্দিষ্ট ধাঁচের সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং প্রাধান্যকারী রাজনীতিক দর্শের পরিপ্রেক্ষিতে যে-কোনো সমাজের সকল রকম আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক প্রকৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। তা ছাড়া নির্দিষ্ট ধাঁচের রাষ্ট্রব্যবস্থা বা রাজনীতিক সংগঠনের সঙ্গে রাজনীতিক মতাদর্শ সম্পর্কযুক্ত থাকে। রাজনীতিক মতাদর্শ নির্দিষ্ট এক ধরনের রাজনীতিক সংগঠনের পক্ষে এবং অন্যান্য ধরনের রাজনীতিক সংগঠনের বিপক্ষে থাকে। সুতরাং বিদ্যমান রাজনীতিক মতাদর্শের মাধ্যমে কোন একটি সমাজের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতিক সংগঠনসমূহের সামগ্রিক পরিচয় পাওয়া যায়।
[17] রাজনীতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন: প্রচলিত রাজনীতিক ব্যবস্থার সংস্কার সাধন বা রাজনীতিক কাঠামোর পরিবর্তন সাধনের ক্ষেত্রেও রাজনীতিক মতাদর্শের অবদান অনস্বীকার্য। জনসাধারণের প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে প্রচলিত রাজনীতিক ব্যবস্থা অসমর্থ প্রতিপন্ন হলে কোন প্রগতিশীল রাজনীতিক মতাদর্শের মাধ্যমে বিদ্যমান রাজনীতিক কাঠামোর পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিক দল ও রাষ্ট্রের কর্ণধারদের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রগতিশীল রাজনীতিক মতাদর্শের উদ্দেশ্য হল সমগ্র সমাজের পরিবর্তন সাধন এবং পরিবর্তিত সামাজিক কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন।
[18] সকল রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই নির্দিষ্ট একটি মূল্যবোধের কাঠামোর মধ্যে বিভিন্ন রাজনীতিক দাবি-দাওয়া ও সিদ্ধান্তসমূহ সংগঠিত হয়ে থাকে। আবার রাজনীতিক মতাদর্শ এই মূল্যবোধের কাঠামোকে প্রভাবিত করে।
[19] রাজনীতিক মতাদর্শ রাজনীতিক ক্ষেত্রে বিরোধ-বিতর্কের সৃষ্টি এবং সংশ্লিষ্ট বিরোধ নিরসনের পদ্ধতি-প্রকরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার যে কোনো রাজনীতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক মতাদর্শ রাজনীতিক কার্যাবলীকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।
মূল্যায়ন: মতাদর্শসমূহের দুনিয়াকে নিয়ে আলোচনা করা আবশ্যক। তাহলে সমস্যাসংকুল এই বিশ্বসংসারের কুশীলব হিসাবে ব্যক্তিবর্গের মানসিক অভিযোজন ঘটে। এ ধরনের আলোচনার সুবাদে মতাদর্শমূলক বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি ঘটে। সম্পদ ও ক্ষমতার ব্যাপারে অসাম্য-বৈষম্যের কারণে বিবাদ-বিসংবাদের সৃষ্টি হয়। মতাদর্শগত সংঘাতসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অর্থ সম্পদ ও ক্ষমতার অসাম্য থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া। কারণ এই অসাম্যই জন্ম দেয় সংঘাত-সংঘর্ষের। ধ্যান-ধারণা ও মতাদর্শকে নিয়ে রাজনীতিক জীবনের মৌলিক বিষয়াদি গড়ে ওঠে। রাজনীতি, রাজনীতিক আচার আচরণ ও রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্যক ও সার্থক আলোচনার জন্য আবশ্যক হল ধারণা ও মতাদর্শসমূহের পরিপূরক পর্যালোচনা। সমাজস্থ সকলেই সামাজিক কার্যপ্রক্রিয়ার সামিল হয়। এর থেকেই সৃষ্টি হয় রাজনীতিক মতাদর্শের ও মতাদর্শগত পার্থক্যসমূহের। ইতালীয় রাজনীতিবিজ্ঞানী আন্টোনীয় গ্রামসি (Antonio Gramsci) বলেছেন : Ideologies create the terrain on which men move, acquire consciousness of their position, struggle etc. “
মানবসমাজকে পরস্পর বিরোধী মতাদর্শসমূহের যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে গণ্য করা যায়। নীতি ও কার্যপ্রক্রিয়া প্রসঙ্গে রাজনীতিক মতপার্থক্যের অস্তিত্ব অনস্বীকার্য। মতাদর্শসমূহের মাধ্যম এই মতপার্থক্য সম্পর্কিত বৌদ্ধিক হাতিয়ার পাওয়া যায়। মতাদর্শগুলি সমাজ সম্পর্কে বিবদমান ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হাজির করে। স্বভাবতই মতাদর্শসমূহ অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং সংঘাতপূর্ণ। পরস্পরবিরোধী ও বিবদমান সামাজিক শ্রেণী ও গোষ্ঠীসমূহের বিবিধ স্বার্থের অভিব্যক্তি ঘটে বিবিধ মতাদর্শের মাধ্যমে। উদাহরণ হিসাবে কতকগুলি মতাদর্শের কথা বলা যায়। এই মতাদর্শগুলি হল: সমাজতন্ত্রবাদ, সাম্যবাদ, সামগ্রিকবাদ, উদারনীতিবাদ প্রভৃতি। এদিক থেকে বিচার করলে আধুনিক কালের সমাজব্যবস্থা হল মতাদর্শগুলির বিরোধ-বিতর্কের একটি মঞ্চ। সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গ মতাদর্শগত বিরোধ-বিতর্কের মধ্যেই বসবাস করে।
রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিষ্ঠা এবং রাজনীতিক বাস্তবতার মূল্যায়নের জন্য মতাদর্শ হল বিশেষভাবে মূল্যবান। মৌলিক মতাদর্শগত ঐতিহ্যসমূহ বিগত দুশতাব্দী ধরে আধুনিক দুনিয়ার রাজনীতির চেহারা চরিত্র নির্ধারণ করেছে। বর্তমান বিশ্বে রাজনীতিক আলোচনা থেকে মতাদর্শকে বিচ্ছিন্ন করা অসম্ভব।
Leave a comment