প্রতিবছর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আর পরিবেশ দিবসের সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমাদের
ছাত্রসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে কারণ ছাত্ররাই হলো জাতির ভবিষ্যৎ। আর
আমাদের এই ছাত্রদের বিভিন্ন পরীক্ষায় রচনা – বিশ্ব পরিবেশ দিবস লিখতে হয়।
তাই আমি তোমাদের জন্য রচনা – বিশ্ব পরিবেশ দিবস বিস্তারিত ভাবে লেখার চেষ্টা
করেছি।
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমি এই লিখার মাধ্যমে সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আমি আশা করি আমার এই রচনা – বিশ্ব পরিবেশ দিবস তোমরা পরীক্ষায় লিখলে বেশ
ভালো নম্বর পাবে। নিচে রচনা – বিশ্ব পরিবেশ দিবস বিস্তারিতভাবে লেখা হলো-
পোস্ট সূচিপত্রঃ রচনা – বিশ্ব পরিবেশ দিবস -বিস্তারিত জানুন
(৬-১২)
ভূমিকা
পরিবেশ মানব সভ্যতার বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ মানুষ পরিবেশ গড়ে
তুলেছে তার সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে। সেই আদিকাল থেকেই পরিবেশ এবং মানুষের
মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মানুষ তার চারপাশের পরিবেশ থেকেই
বেঁচে থাকার সকল উপাদান সংগ্রহ করে আবার এই পরিবেশকে মানুষ স্বার্থপরের মত শোষণ
করে।
পরিবেশের উপর ভিত্তি করে মানুষ সভ্যতার উন্নতি হলেও মানুষ সেই পরিবেশের শোষণ
সভ্যতার পক্ষে প্রতিকূল হয়ে দাঁড়িয়েছে।মানুষের তৈরি বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানব
সৃষ্ট কর্মকান্ডের ফলে পরিবেশ এখন বিপন্ন তাই পরিবেশের নানা দূষণ ও সমস্যা দূর
করে পৃথিবীকে মানুষের বসবাস উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলায় এখন একমাত্র লক্ষ্য।
পরিবেশের নানা ধরনের বিপর্যয় এবং অবক্ষয়ের কারণ স্বরূপ মানুষ এখন নানা প্রকার
ব্যাধি ও সমস্যায় জর্জরিত।
প্রকৃতির সাথে সম্পর্কের অবক্ষয় মানুষকে ঠেলে দেয় নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে। মানব
সভ্যতাকে সচেতন করে তোলার জন্যই জাতিসংঘ পাঁচ ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে
ঘোষণা করেছে। তাই প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে নিরন্তন সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করার
জন্য পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।
পরিবেশ দিবস
মানুষ নিজের চেষ্টায় এবং বিজ্ঞানের কল্যাণে জয় করেছে পৃথিবীর নানা কিছু।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ আজ গভীর সমুদ্র তলদেশ থেকে মহাশূন্য পর্যন্ত
বিস্তার লাভ করেছে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর নিবিড় সম্পর্কে রয়েছে পরিবেশের
সাথে। পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে কঠিন থেকে কঠিনতর বিপদের
দিকে। আর এই ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে দিতে এবং মানুষকে সচেতন করতেই প্রতিবছর ৫
জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে।
আর এই জাতিসংঘ ঘোষিত পাঁচ ৫ জুনকে প্রতিবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা
হয় বিভিন্ন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে। শুধু বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করলে চলবে না
মানুষকে পরিবেশের দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ দিবসের ইতিহাস
পশ্চিম ইউরোপের ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলি বিশ্ব পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত
আন্দোলনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তবে এই দেশগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা
এগিয়ে থাকে সুইডেন। বর্তমানে সুইডেনের অত্যন্ত পরিবেশ সচেতন স্কুল পড়ুয়া
গ্রেটথুনবার্গ যিনি আমাদের সকলের কাছে পরিচিত মুখ। ১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাছে সুইডেন সরকার একটি চিঠি প্রেরণ করেন।
আরো পড়ুনঃ একটি ঝড়ের রাত – রাত্রি রচনা সম্পর্কে জানুন
আর এই চিঠিতে তিনি পরিবেশ দূষণের কথা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে তুলে ধরেন।আর
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সেই বছরেই বিশ্বের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনে
অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং জাতিসংঘ পরের বছর তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে পরিবেশ রক্ষার
বিষয়ে সমাধানের উপায় আলোচনা করতে নির্দেশ দেন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালে
সুইডেনের রাজধানী স্টক হোমে ৫ জুন থেকে শুরু ১৬ই জুন পর্যন্ত বিশ্ব পরিবেশ
সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এবং এই সম্মেলনে পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। আর এটি
ছিল পৃথিবীর প্রথম পরিবেশ সংক্রান্ত কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনের পরের
বছর অর্থাৎ ১৯৭৩ সাল থেকে জুন মাসের পাঁচ ৫ তারিখ থেকে জাতিসংঘ বিশ্ব পরিবেশ দিবস
হিসেবে ঘোষণা করে। তবে ১৯৭২ সালের ৫ জুনকেই বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা
হয়।
পরিবেশ কাকে বলে
পরিবেশ দিবস পালন করার পূর্বে আমাদের জানতে হবে পরিবেশ কাকে বলে।আমাদের চারপাশে
যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। আমাদের পরিবেশে যা কিছু আছে তার কিছু অংশ
আমরা খালি চোখে দেখতে পায় আর কিছু খালি চোখে দেখতে পায় না। এই উপাদানগুলো এতই
ক্ষুদ্র যে একে দেখার জন্য আমাদের যন্ত্রের প্রয়োজন হয় আবার এমন কিছু উপাদান
রয়েছে যেগুলো আমরা একেবারে দেখতে পাই না সেগুলো শুধু অনুভব করতে পারি।
আর ভূপৃষ্ঠের এই দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান সকল উপাদান মিলেই আমাদের পরিবেশ গঠিত
হয়। আমাদের পরিবেশে গঠনের প্রধানত দুই ধরনের উপাদান রয়েছে। যথা – জৈব পদার্থ ও
অজৈব পদার্থ। আর জৈব পদার্থ গুলোর মধ্যে রয়েছে মাটি, পানি, শিলা প্রভৃতি
দৃশ্যমান হলেও বায়ু আমরা দেখতে পায় না শুধু অনুভব করতে পারি।
পরিবেশের প্রকারভ
আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়ে আমাদের পরিবেশ গঠিত হলেও পরিবেশকে আমরা দুই
ভাগে ভাগ করে থাকি সেগুলো হল-
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও
সামাজিক পরিবেশ
প্রাকৃতিক পরিবেশ
প্রকৃতির তৈরি যেসব উপাদান নিয়ে যে পরিবেশ গঠিত হয় তাকে বলা হয় প্রাকৃতিক
পরিবেশ। যেমন – পাহাড়, সমুদ্র, নদী – নালা, সূর্য, নক্ষত্র ইত্যাদি নিয়ে যে
পরিবেশ গঠিত হয় তাকে বলা হয় প্রাকৃতিক পরিবেশ।
সামাজিক পরিবেশ
মানুষ যে পরিবেশ তৈরি করে অর্থাৎ মানুষ সৃষ্ট পরিবেশই হলো সামাজিক পরিবেশ। যেমন –
ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্রভৃতি।
পরিবেশ দিবসের প্রেক্ষাপট
পরিবেশ প্রতিনিয়ত বিধ্বস্ত এবং মানব সভ্যতা ও ধ্বংসের প্রধান কারণ হচ্ছে
পরিবেশের উপর মানুষের যথেচ্ছাচার এর অনিবার্য ফল। কিন্তু মানুষ ভুলে যায় যে
পরিবেশ ও প্রকৃতি মানব সভ্যতার ওপর নির্ভরশীল নয় বরং মানব সভ্যতায় পরিবেশের ওপর
সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। আর বাস্তুতন্ত্রের ওপর আজ নানা ভাবে টান পড়ার প্রধান
কারণ হলো প্রাণী জগতের ওপর মানুষের নির্বিচার শোষণ।
আরো পড়ুনঃ নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা সম্পর্কে জানুন
যার কারণে আজ টান পড়েছে সর্বভুক মানব জাতির খাদ্য ভান্ডারেও। আমাদের
চারপাশের পরিবেশ দিন দিন এত দূষিত হচ্ছে যে মানুষ তার নিজের পরিবেশকে বসবাসের
অনুপোযোগী করে তুলেছে। আবার এই বিষাক্ত পরিবেশের মধ্যেই মানুষ নিঃশ্বাস নিতে
বাধ্য হচ্ছে যার কারণে তার শরীরে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন প্রকার মরণ রোগ। এর
ফলশ্রুতিতে বেড়ে চলেছে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, অ্যালঝাইমার প্রভৃতির মতো
মরণ ব্যাধি।
কিন্তু আসার কথা হলো বর্তমানে মানুষ পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতার কথা বুঝতে পেরে
পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব আরোপ করছে। ক্রমে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন বিশ্ব জুড়ে
জোরদার হতে থাকে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নির্দিষ্ট একটি সাংগঠনিক বিধান তৈরি
করে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আর এভাবে ধীরে ধীরে বিশ্ব পরিবেশ
দিবসের পটভূমি প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিবেশ দিবস পালনের উদ্দেশ্য
বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশকে মানুষের বসবাস উপযোগী করে
তোলা আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিবছর পাঁচই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা
হয়ে থাকে এছাড়াও বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে তা হল-
- বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণের গুরুত্ব আরোপ করা
- বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা
- কৃষি কাজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমানো
- অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করা
- সকল দেশের জাতীয় পরিবেশ নীতির সফল বাস্তবায়ন করা
- পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রচারণা বাড়ানো
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন
- উপকূলীয় বনায়ন সম্প্রসারিত করা
- শিল্প বর্জ্য যথাযথভাবে পরিশোধন নিশ্চিত করা
- সর্বপরি পরিবেশ সম্পর্কে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচি
১৯৭৩ সালে পরিবেশ দিবস ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৪ সালের ৫ই জুন
থেকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঘোষণার
পর থেকে এই দিবসটি পালন করত মূলত পৃথিবীর প্রথম সারির উন্নত দেশগুলির মধ্যে।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেই একটু একটু করে পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে
সচেতন হয়ে ওঠে এবং এই বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে।
দিন যত এগোচ্ছে পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রত্যেক বছর উত্তর গোলার্ধে বসন্ত ঋতুতে এবং দক্ষিণ গোলার্ধ শরৎ ঋতুতে মহা
ধুমধাম এর সাথে এই পরিবেশ দিবস পালন করা হয়ে থাকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তথা
তৃণমূল স্তর থেকে শুরু করে পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এই সকল কর্মসূচি গৃহীত
হয়। আর এই কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পরিছন্নতার প্রসার, দূষণ রোধ এবং
বৃক্ষরোপণ।
আরো পড়ুনঃ শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দশটি ১০টি ব্যবহার
বিস্তারিত
এই দিনটি আন্তর্জাতিক পরিসরে লাভজনক ও লাভজনকভাবে আন্তঃদেশীয় বিভিন্ন
কোম্পানিগুলো পালন করে থাকে। বন সৃজন, বন সংরক্ষণ, মহাসাগর পরিষ্কার করা এবং সকল
প্রকার দূষণ রোধের মতো নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে এই দিবসটি পালন করা হয়।
২০১৮ সালে এই দিবসটি পালিত হয়েছিল “বিট প্লাস্টিক পলিউশন” শিরোনামে। বর্তমানে
প্রত্যেকটি দেশ এই দিবসটি পালন করে বিভিন্ন সচেতনামূলক বিষয়কে কেন্দ্র করে
বিশ্ববাসীকে সচেতন করার জন্য।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম কারণ এই
পরিবেশের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে আজকের এই উন্নত মানব সভ্যতা।পরিবেশ আমাদের
সমাজকে দিয়েছে বর্তমানের এই সমৃদ্ধি। আর সেই পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা
করার জন্য একটি দিনকে উৎসর্গ করা আমাদের সকলের পবিত্র কর্তব্য। আর পরিবেশকে
ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রতিবছর পাঁচ ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে
পালন করা হয়।
আপাত দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে আমাদের এই পরিবেশকে উন্নত বলে মনে হলেও পরিবেশ দূষণের
কারণে তা হয়ে পড়েছে ধ্বংসের সম্মুখীন। আমাদের এই পরিবেশ ভেঙ্গে পড়তে পারে
তাসের ঘরের মতো। আর সেই ভাঙ্গনকে আটকানোর জন্য প্রয়োজন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন।
আর এই দিনটি পালনের মধ্যে দিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়
পরিবেশ সচেতনতার বার্তা। যার কারনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব ও পরিসীম। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের
মতো বাংলাদেশ ও পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণমুক্ত রাখতে ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন
করে থাকে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের ভূমিকা অত্যন্ত নগণ্য হলেও
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন আমাদের এই বাংলাদেশ।
তাই বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন করে তুলতেই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব এবং
প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা
হচ্ছে এবং প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়।
বাংলাদেশে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচি
বাংলাদেশে পরিবেশ দিবস পালনের সচেতনাতাকে বুঝতে পেরেছে এবং বিশ্বের সাথে একাত্ব
হয়ে বাংলাদেশ প্রতিবছর পাঁচ ৫ই জন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করে থাকে। বর্তমানে
জনগণকে পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলা হচ্ছে এবং পরিবেশ দূষণের কুফল ও পরিবেশ রক্ষার
সংবাদ নিয়ে জাতীয় দৈনিক বিশেষ কৌড়পত্র ও প্রচার করা হচ্ছে। যেমন – বনায়ন,
বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করন, বন সংরক্ষণ ইত্যাদি।
এছাড়াও এখানে পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও
রয়েছে অনেক। আর এর সহযোগিতা হিসেবে জেলায় জেলায় বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশ,
সেমিনারের ও আয়োজন করা হয়ে থাকে। এছাড়া ও বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ রক্ষায়
পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর এবং নানা অনুষ্ঠান ও আলোচনার মাধ্যমে এই দিনটি
উদযাপন করে আসছে।
পরিবেশ দূষণ রক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা
পরিবেশ দূষণ রক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা ও গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। পরিবেশ দূষণের
হাত থেকে পুরো বিশ্ব তথা দেশকে রক্ষা করতে হলে ছাত্রসমাজকে সক্রিয় ভূমিকা পালন
করতে হবে। বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে ছাত্র সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করতে হবে। এছাড়াও সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলির
মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার প্রচারণা বাড়াতে হবে।
ভবিষ্যতে যেন পরিবেশ দূষণ আর বাড়তে না পারে সেজন্য ছাত্র সমাজ, সাধারণ মানুষ এবং
অভিভাবকদের ও সচেতন করে তুলতে হবে। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে
বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে অর্থাৎ বনায়ন করতে হবে।
পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা
পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা পুরো বিশ্বব্যাপী দিন দিন অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবেশ
দূষণের ফলে মানুষ মানসম্মুখীন হচ্ছে নানা বিপর্যয়ের। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির
কল্যাণে মানুষ প্রকৃতিকে জয় করতে পেরেছে ঠিকই কিন্তু সৃষ্টি করেছে বিশাল সমস্যা।
বিজ্ঞান আর এই প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ আধিপত্য বিস্তার করেছে কিন্তু পরিবেশ
দূষণের ফলে নানা সমস্যার সম্মুখীনও হচ্ছে। বর্তমানে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা এতই
বৃদ্ধি পেয়েছে যে এটি আর কোন নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই ভাবিয়ে তুলেছে
পুরো বিশ্ববাসীকে।
আরো পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
পরিবেশ দূষণের ভয়াল কবল থেকে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজ বিপদের সম্মুখীন, তারা
অপেক্ষা করছে এক মহা ধ্বংসের। পানিতে এসেছে বিষ, বাতাসে এসেছে আতঙ্ক। গত ৬০ বছরে
নিশ্চিহ্ন হয়েছে ৭৬ টিরও বেশি প্রজাতির প্রাণী। এছাড়াও প্রতিবছর প্রায় ২০ কোটি
কার্বন মন অক্সাইড সঞ্জিত হচ্ছে বাতাসের মাধ্যমে যা পরিবেশের জন্য এক বিশাল
হুমকির সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর পরিবেশ দূষণের প্রভাব দিন দিন এতই বেড়েছে
যে বিজ্ঞানীদের ধারণা ভূপৃষ্ঠ এক ডিগ্রি থেকে দুই ডিগ্রী বেড়ে যেতে পারে।
আরে ভূপৃষ্ঠ বেড়ে গেলে হতে পারে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, মহামারী। বায়ুমণ্ডলের ওজন
স্তরের আয়তন ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত বায়ুমন্ডলের স্তর।
বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তর সংকুচিত হওয়ার ফলে প্রাণী জগৎ, উদ্ভিদ জগত আজ বিপন্ন।
সমুদ্র, নদী, জলাশয়েও মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং মাছের ও নানা রকম রোগ
দেখা দিচ্ছে।
উপসংহার
বর্তমানে বিশ্ব নানা বিপর্যয়ের কারণে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই পরিবেশ
রক্ষার্থে জনগণকে সক্রিয় তার কথা বলা প্রয়োজন। পরিবেশ দূষণের কুফল ও পরিবেশ
রক্ষার সংবাদ প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে যাতে করে বিশ্ব বসবাস উপযোগী হয় এবং
বিশ্বের মানুষ হয়ে ওঠে সচেতন। আর বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তোলার জন্য প্রতিবছর
পাঁচ ৫জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঘোষণা করেছে এবং প্রতিবছর ৫ ই জুন যথাযোগ্য
মর্যাদায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
পরিবেশ তথা বিশ্বকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি। একমাত্র সচেতনতাই পারে
পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে। প্রতিবছর পাঁচ ৫ জুন পরিবেশ দিবস
বিশ্ববাসীর দ্বারে এসে নাড়া দেয় এবং মানুষ তা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে
থাকে।
Leave a comment