অথবা, যৌথ পরিবারের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ মানবসমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পরিবার। কারণ একটি শিশু পরিবারেই জন্মগ্রহণ করে, পরিবারেই লালিত-পালিত হয় ও পরিবারেই তার বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে। মানবসমাজের ইতিহাসে পরিবার একটি প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান।
যৌথ পরিবারঃ যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, নাতী-নাতনীর পাশাপাশি এক বা একাধিক ভাইবোেন তাদের সন্তান-সন্ততিসহ বা নিকটতম অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন বসবাস করে, তাকে যৌথ পরিবার বলে। যৌথ পরিবার সাধারণত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়। শহরাঞ্চলে যৌথ পরিবারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম।
যৌথ পরিবারের সুবিধাঃ যৌথ পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা বেশ কিছু সুবিধা ভােগ করেন, যা একক পরিবারের সদস্যরা পান না। যৌথ পরিবারের সুবিধাগুলাে হলাে:
(১) পরিবারে উপার্জনক্ষম লােকের সংখ্যা বেশি হওয়ার পারিবারিক আয় বেশি হয়।
(২) যৌথ পরিবারে সদস্যসংখ্যা বেশি হওয়ায় কারণে তুলনামূলকভাবে বেশি সামাজিক নিরাপত্তা ভােগ করেন।
(৩) পারিবারিক দায়-দায়িত্ব অধিকসংখ্যক সদস্যের মধ্যে বণ্টিত হয় বলে তারা অবসর সময় বেশি পায়।
(৪) যৌথ পরিবারে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বেশি হয়।
(৫) যৌথ পরিবারে শিশুরা আনন্দময় পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযােগ পায় বলে মানসিক বিকাশ বেশি ঘটে।
(৬) পারিবারিক ব্যবস্থাপনা সমস্যা কম থাকে।
(৭) সামাজিক সুযােগ-সুবিধা বেশি।
যৌথ পরিবারের অসুবিধাঃ যৌথ পরিবারে সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা আছে। অসবিধাগুলাে হলাে:
(১) একক কর্তা পরিবার নিয়ন্ত্রণ করায় অন্যান্যরা দায়িত্বহীন হয়ে পড়েন।
(২) যৌথ পরিবারে অনেক সময় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা যায়।
(৩) বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সদস্যদের মধ্যে মতানৈক্য ও ঝগড়া-বিবাদ দেখা দেয়।
(৪) একজনের ভুল বা অপরাধের কারণে অনেককে ভােগান্তি পােহাতে হয়।
(৫) সম্পত্তির মালিকানা ও ব্যবহার নিয়ে বিরােধ দেখা দেয়া।
(৬) একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিযােগিতা দেখা যায়।
(৭) পারিবারিক ঐক্য বজায় রাখা অনেক সময় কঠিনতর হয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, যৌথ পরিবার হলাে পরিবারের একটি প্রাচীনতম ধরন। বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে এ পরিবার এখানও কৃষিপ্রধান এলকাগুলােতে টিকে আছে। তবে সামাজিক গতিশীলতার কারণে দিন দিন যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলেও যৌথ পরিবার প্রথা লক্ষ্য করা যায়, যদিও সংখ্যায় তা খুবই কম।
Leave a comment