প্রশ্নঃ যৌক্তিক সিদ্ধান্তের পর্যায়সমূহ বর্ণনা কর।
ভূমিকাঃ মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। রাষ্ট্র বা সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পদাধিকারী ব্যক্তিগণকে বৃহত্তর বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করতে হয়, যার উপর একটি সংগঠন, সংস্থা বা একটি জাতি নির্ভরশীল থাকতে পারে। সিদ্ধান্তের উপযুক্ততা, শ্রেষ্ঠত্ব ও কুশলতার উপরও নির্ভর করে অনেকের ভাগ্য। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয় আর কমই আছে। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সমাজবিজ্ঞানীদের নিকট এক অন্যতম অধ্যয়নের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
যৌক্তিক সিদ্ধান্তের পর্যায়সমূহ (Steps of Rational Decision): কোন সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক হতে হলে তা অবশ্যই বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এসব পর্যায় যথার্থভাবে অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে কেবল যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রধান পর্যায়গুলো নিম্নরূপঃ
(ক) প্রথম পর্যায়ঃ প্রথমেই সমস্যা নির্ধারণ করতে হবে। সমস্যা কি, সমস্যার প্রকৃতি কি এবং কি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কারণ লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকলে তা অর্জন করা যায় না।
(খ) দ্বিতীয় পর্যায়ঃ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্ভাব্য সকল বিকল্প সংগ্রহ করা। যত বেশি বিকল্প সংগ্রহ করা যাবে সিদ্ধান্ত তত বেশি যৌক্তিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ প্রক্রিয়ায় যদি কোন বিকল্প বাদ পড়ে যায় এবং সেটাই যদি উত্তম বিকল্প হয় তবে সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হতে পারে না।
(গ) তৃতীয় পর্যায়ঃ এ পর্যায়ে সংগৃহীত বিকল্পসমূহকে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কোন বিকল্পকে সিদ্ধান্ত হিসেবে নির্বাচন করলে তার ফলাফল কি হবে তা মূল্যায়ন করতে হবে। এভাবে প্রতিটি বিকল্পকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তালিকা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
(ঘ) চতুর্থ পর্যায়ঃ বিভিন্ন বিকল্পকে গুরুত্বের সাথে বিচার-বিশ্লেষণ করার পর উত্তম বিকল্প বা সর্বাধিক সন্তুষ্টি প্রদানকারী বিকল্পটিকে সিদ্ধান্ত হিসেবে বাছাই করা হবে।
(ঙ) পঞ্চম পর্যায়ঃ এ পর্যায়ে বাছাইকৃত সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা করা হয়। এটি হচ্ছে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন স্তর।
সমাপনীঃ রাষ্ট্রীয় বা জাতিগতভাবে বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যারা বিশ্বের মানব সম্প্রদায় বিষয়টির উপর অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। কারণ যুদ্ধ পরবর্তী সময়কালে সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রকম জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে নির্ভুল ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আরো অনেক বেশি অনুভূত হয়ে চলেছে। তাই হার্বার্ট সাইমন (Herbert Simon) সিদ্ধান্ত গ্রহণকে ‘Heart of Administration’ বলে অভিহিত করেছেন।
Leave a comment