প্রশ্নঃ যুদ্ধ কি? কোন কোন অপরাধ যুদ্ধ অপরাধ হিসেবে গণ্য? যুদ্ধ অপরাধে অভিযুক্ত হলে কিভাবে শাস্তি পাবে?
ভূমিকাঃ যুদ্ধ এমনি এক বিষয় যা কেউ কামনা করে না। তবে যুদ্ধ বললে শুধু ধ্বংস বা ক্ষতির বিষয়টি সামনে আসে। কিন্তু যুদ্ধ কোন পক্ষের জন্য মঙ্গলও বয়ে আনে। অর্থাৎ যুদ্ধ কখনো কখনো অনিবার্য হয়ে পড়ে। যুদ্ধের বিকল্প আর কোন পথ থাকে না।
যুদ্ধ কি (War): দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সশস্ত্র সংঘর্ষ অনুষ্ঠিত হলে তাকে যুদ্ধ বলে৷ অধ্যাপক ওপেনহাম এর মতে, দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে তাদের স্ব স্ব সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সশস্ত্র সংঘাত ঘটিয়ে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে পরাজিত করার ফলে বিজয়ী রাষ্ট্রের শর্ত অনুযায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলো যুদ্ধ।
কোন কোন অপরাধ যুদ্ধ অপরাধ হিসেবে গণ্য : যুদ্ধের বিধান ভঙ্গ করে অন্যের ক্ষতি করলে তা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
অর্থাৎ যুদ্ধের সময় যুদ্ধের বিধি-বিধান অমান্য করলে, যুদ্ধবন্দীদের বাসস্থান দেওয়া না হলে, লুণ্ঠন করলে এগুলি যুদ্ধপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
অধ্যাপক ওপেনহাম এর মতে, যুদ্ধের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ যদি যুদ্ধের স্বীকৃত নিয়ম লংঘন করে এবং বেসামরিক ব্যক্তি যদি অস্ত্রের সাহায্যে অবৈধ কার্যকলাপ করে তাহলে তা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য।
নিম্নের কাজ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য-
(১) গণহত্যা সংঘটিত করা,
(২) আগ্রাসন,
(৩) মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করা,
(৪) ইচ্ছাকৃত হত্যা করা,
(৫) অমানবিক আচারণ বা নির্যাতন করা,
(৬) মুক্তিপণের জন্য আটক রাখা,
(৭) সুবিচার থেকে বঞ্চিত করা,
(৮) সম্পত্তি আত্মসাৎ করা,
(৯) সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা,
(১০) বেআইনীভাবে স্থানান্তর করা,
(১১) যুদ্ধবন্দীদের আশ্রয়াধীন পক্ষের শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা।
যুদ্ধ অপরাধে অভিযুক্ত হলে কিভাবে শাস্তি পাবেঃ একটি পরিষদ কর্তৃক যুদ্ধাপরাধ আদালত পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। ১২৩ জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত। মূলতঃ চারটি অর্গান দ্বারা এই আদালত গঠিত। যথা-
(১) সভাপতিমণ্ডলী,
(২) বিচার বিভাগ,
(৩) প্রসিকিউটর অফিস,
(৪) রেজিষ্ট্রি অফিস।
অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন প্রসিকিউটর। প্রসিকিউটর অভিযোগ দায়ের করলে বিচার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ৩ জন বিচারকের সমন্বয়ে বিচারকার্য পরিচালিত হয়। এই ৩ জনের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রায় প্রদান করা হয়। বিচার কাজে সিভিল ল’ এবং কমন ল’ উভয়টি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত প্রকাশ্যভাবে বিচারকাজ পরিচালিত হয়। তবে প্রয়োজনে গোপনেও বিচার কাজ পরিচালিত হতে পারে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হয়। তাকে আইনজীবী নিয়োগের সুবিধা প্রদান করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যারা সাক্ষ্য দেন তাদেরকে জেরা করারও সুযোগ দেওয়া হয়। পরিশেষে তাকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়। এভাবেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান করা হয়।
উপসংহারঃ যুদ্ধ কারো কাম্য নয়। তবুও কোন কারণে যুদ্ধ সংঘটিত হলে যুদ্ধের নিয়ম মেনে যুদ্ধ করতে হয়। এসময় নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ্য ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। এই সকল বিষয় না মানা হলে পরবর্তীতে তাদেরকে অপরাধী হিসেবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।
Leave a comment