দুর্যোগের বর্ণনা: মহাশ্বেতা দেবীর ভাত’ ছােটোগল্পে আমরা দেখি, দুর্যোগের দিন সন্ধ্যাবেলায় কন্নুনীর মা খেতে খেতে বলছিল যে, দেবতার গতিক ভালাে নয়। তারপরে রাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল দুর্যোগে উচ্ছবদের কাঁচা বাড়ির মাঝখানের খুঁটিটি মাতাল আনন্দে টলছিল ধনুষ্টংকার রোগীর মতাে। তাই ঘরের মাঝখানের খুঁটিটা উচ্ছব মাটির দিকে সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরেছিল এবং ভয়ে ভগবানের নাম নিচ্ছিল। অন্যদিকে, ছেলেমেয়েদের জাপটে ধরে তার বউ ঠান্ডায় আর ভয়ে কাঁপছিল। এসময় হঠাৎ বিদ্যুতের আলাের ঝলকানিতে উচ্ছব দেখে, মাতাল মাতলা নদীর সফেন জল বাতাসের তােড়ে দ্রুত ছুটে আসছে। নিমেষের মধ্যে সেই বানের জল উচ্ছবের বউ ছেলে মেয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। গাছে বেঁধে কোনােক্রমে প্রাণে বেঁচে যায় উচ্ছব।
উচ্ছবের উপরে দুর্যোগের প্রভাব : দুর্যোগের আকস্মিকতায় সাময়িকভাবে উচ্ছবের বুদ্ধি লােপ পায়। বউ-ছেলে মেয়ে-সহ সবকিছু ফিরে পাবার আশায় শুনসান বাড়ি ছেড়ে তাই সে নড়ে না। লঙ্গরখানায় দেওয়া খিচুড়ি তাই তার খাওয়া হয় না। কয়েকদিন পর সরকার শুকনাে চাল দিলে দীর্ঘদিন যাবৎ উপােসি উচ্ছব তা চিবিয়েই কয়েকদিন কাটায়। এ সময় মাঝে-মাঝেই তার মনে পড়ে সেই দুর্যোগের রাতটার কথা। তার মনে হয়, দীর্ঘদিন ধরে ভাত না খেয়ে সে ভূত হয়ে যাচ্ছে, ভাত খেলেই সে পুনরায় মানুষ হবে এবং বউ-ছেলেমেয়ের দুঃখে কাঁদতে পারবে। তাই কয়েকদিন পেট পুরে ভাত খেতে সে কলকাতা। যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
Leave a comment