সংবাদ বা তথ্য ও ভাবের আদানপ্রদানকে এককথায় যােগাযােগ বলে। যােগাযােগ ব্যবস্থা বলতে বােঝায় সেই সমস্ত ব্যবস্থাপনা (চিঠিপত্র, টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ইন্টারনেট প্রভৃতি) যার মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি বা সংস্থার মধ্যে সংবাদ, তথ্য, আদেশ, নির্দেশ, সিদ্ধান্ত প্রভৃতি পরিবেশন করা হয়। যােগাযােগ ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবল সংবাদ প্রেরণ ও গ্রহণ করা হয়।

আধুনিক যােগাযােগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমগুলি হল- [1] ডাকব্যবস্থা, [2] সংবাদপত্র ও অন্যান্য মুদ্রিত মাধ্যম, [3] টেলিগ্রাফ ও টেলিগ্রাম, [4] টেলিফোন, [5] বেতারপদ্ধতি, [6] মােবাইল ও সেলুলার ফোন, [7] ইন্টারনেট ব্যবস্থা, [8] ভিডিও কনফারেন্সিং, [9] ফ্যাক্স, [1o] টেলিপ্রিন্টার বা টেলেক্স প্রভৃতি। নীচে এই মাধ্যমগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল一

[1] ডাকব্যবস্থা : ডাকের মাধ্যমে সংবাদ আদানপ্রদান পৃথিবীর যােগাযােগ ব্যবস্থার একটি প্রাচীন মাধ্যম। খ্রিস্টপূর্ব 900 সালে এই ব্যবস্থার চিনে প্রথম সূচনা হয় ও ক্রমে সারা বিশ্বে বিস্তৃত হয়। ভারতে এই ব্যবস্থার সূচনাকাল 1766 খ্রিস্টাব্দে। অতীতে মানুষ ও বিভিন্ন পশুপাখির সাহায্যে ডাকের আদানপ্রদান করা হলেও, বর্তমানে আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থার দ্রুত মাধ্যমগুলির (রেলগাড়ি, বাস, প্রভৃতি) ব্যবহার করা হয়। আধুনিক ভারতের ডাক যােগাযােগ ব্যবস্থায় স্পিড পােস্ট, স্যাটেলাইট পােস্ট, এক্সপ্রেস পােস্ট, বিজনেস ও মিডিয়া পােস্ট প্রভৃতি নতুন নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

[2] সংবাদপত্র ও অন্যান্য মুদ্রিত মাধ্যম : বর্তমানে যােগাযােগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল সংবাদপত্র ও বিভিন্ন প্রকার সাময়িকপত্র (যেমন—অর্ধসাপ্তাহিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, ষান্মাসিক প্রভৃতি)। আধুনিক পরিভাষায় এই মুদ্রিত মাধ্যমকে বলে প্রেস ও প্রিন্ট মিডিয়া। স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্তরে সর্বক্ষণ যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলির বিবরণ, বিশ্লেষণ, পরিসংখ্যান, ছবি ইত্যাদি সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই মাধ্যমটি অসাধারণ ভূমিকা নেয়। বর্তমানে ভারতে রেজিস্ট্রিকৃত সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের সংখ্যা প্রায় 60 হাজারের মতাে।

[3] টেলিগ্রাফ ও টেলিগ্রাম : ইংরেজি Tele (টেলি) কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ দূর (দূরে অবস্থিত)। বর্তমানে পৃথিবীতে যােগাযােগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার দূর সংযােগ ব্যবস্থা (টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, টেলেক্স ইত্যাদি)-এর অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছে। 1844 খ্রিস্টাব্দে স্যামুয়েল মাের্স প্রথম টেলিগ্রাফ পদ্ধতির আবিষ্কার করেন। তারের সাহায্যে যে বার্তা পাঠানাে হয় তাকে টেলিগ্রাফ বলে। এই ব্যবস্থায় পাঠানাে সাংকেতিক সংবাদকে মাের্স কোড-এর সাহায্যে নিমেষের মধ্যে পঠনযােগ্য ভাষায় পরিবর্তিত করা হয়। টেলিগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে পাঠানাে সংবাদকে টেলিগ্রাম বলে। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে এর প্রচলন না থাকলেও বাহারিন, মেক্সিকো, সুইজারল্যান্ডের মতাে কয়েকটি দেশে এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রচলিত রয়েছে।

[4] টেলিফোন : টেলিফোন হল তারের সাহায্যে সংযুক্ত এমন একটি যােগাযােগ ব্যবস্থা যার দ্বারা দুজন মানুষ পৃথিবীর দুই প্রান্তে বা দূরদূরান্তে থাকলেও মুহূর্তের মধ্যে কথার মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যােগাযােগ। করতে পারে। আবার একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও অভ্যন্তরীণ যােগাযােগের ক্ষেত্রে টেলিফোন ব্যবহার করা যায়। একে ইন্টারকম (টেলিফোন পদ্ধতি বলে। এই টেলিফোন ব্যবস্থার আবিষ্কার করেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল 1875 খ্রিস্টাব্দে। ভারতে প্রথম টেলিফোন পরিসেবা চালু হয় 1881-82 সালে কলকাতায়।

[5] বেতারপদ্ধতি : এই ব্যবস্থায় রেডিয়াে স্টেশন বা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত সংবাদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গরূপে উর্ধ্বায়ুমণ্ডলের আয়নােস্ফিয়ারে প্রতিফলিত হয়ে রেডিয়াে বা বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে শ্রোতাদের কানে পৌঁছায়। এটি তারবিহীন বলে যে-কোনাে স্থান, এমনকি মাঝ সমুদ্র, গভীর বন বা মরুভূমি ও দুর্গম পার্বত্যাঞ্চল থেকেও এর সাহায্যে যােগাযােগ করা যায়।

[6] মােবাইল ও সেলুলার ফোন : উপগ্রহ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মাধ্যমে মােবাইল ফোনের সাহায্যে পৃথিবীর যে-কোনাে প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যােগাযােগ করা যায়। মােবাইলের সাহায্যে SMS, MMS, ইন্টারনেট সংযােগ, ছবির আদানপ্রদান করা যায় এবং রেডিয়াে ও ক্যামেরার সুবিধা গ্রহণ করা যায়। কোনে। কোনাে মােবাইলে GPS সংযুক্ত থাকায় ব্যবহারকারী পৃথিবীপৃষ্ঠের যে স্থানে অবস্থান করে সেই স্থানের অবস্থান ও উচ্চতা নির্ণয় করা যায়।

[7] ইন্টারনেট ব্যবস্থা : সারা পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটারকে মােডেমের মাধ্যমে টেলিফোন লাইনের সাহায্যে এক সূত্রে বেঁধে ফেলাকে বলা হয় ইন্টারনেট। এরই ফলে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হয় তাকে সংক্ষেপে ইন্টারনেট বলে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ই-মেল বা বৈদুতিন ডাকযােগে পৃথিবীর যে-কোনাে স্থানে বার্তা, চিঠি পত্র, সংবাদ, তথ্য ইত্যাদি খুব তাড়াতাড়ি পাঠানাে যায় বা (যে-কোনা তথ্য আনানাে যায়। ই-মেল ছাড়াও এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সংবাদ, বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। প্রয়ােজনে এই তথ্য পৃথিবীর যে-কোনাে জায়গা থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে।

[8] ভিডিও কনফারেন্সিং : ভিডিও কনফারেন্সিং: অতি উন্নত এই টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থায় একাধিক ব্যক্তি একইসময়ে পরস্পরের সাথে মুখােমুখি বসে আলােচনা করার মতাে যােগাযােগ স্থাপন করতে পারে।

[9] ফ্যাক্স : টেলিফোনের মাধ্যমে ফ্যাক্স চালিত হয় বলে এই যােগাযােগের মাধ্যমটিকে টেলিফ্যাক্স বলে। এর দ্বারা মানচিত্র, ছবি, লিখিত বার্তা, নথিপত্র, সংবাদ, পরিসংখ্যান ইত্যাদি অবিকৃত অবস্থায় এক অফিস থেকে আর এক অফিসে পাঠানাে যায়। লিখিত বার্তা বা নথিপত্র পাঠাতে এটি হল দ্রুতগামী প্রযুক্তি।

[10] টেলিপ্রিন্টার বা টেলেক্স : টেলিপ্রিন্টার হল এমন এক ধরনের যােগাযােগ ব্যবস্থা যার সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় টাইপরাইটারের মাধ্যমে দূরবর্তী কোনাে সথানে অতি সহজেই বার্তা বা সংবাদ পৌঁছে দেওয়া যায়। লিখিত বার্তা পাঠাতে পরিবহণের কোনাে প্রয়ােজন হয় না। ব্যাবসাবাণিজ্য ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিশেষ করে আবহাওয়া ও প্রতিরক্ষা দপ্তরে সামরিক প্রয়ােজনে এর ব্যবহার সর্বাধিক।