প্রশ্নঃ যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ কী?

অথবা, যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ বলতে কী বুঝ?

ভূমিকাঃ যান্ত্রিক বিবর্তনবাদের মূলকথা হল, জগৎ ও এর অন্তর্ভুক্ত যাবতীয় জীবসহ সবকিছুই ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে যে আবির্ভাব ঘটেছে, তার পেছনে কোন বুদ্ধিমান স্রষ্টার হাত নেই। জড়শক্তি যান্ত্রিকভাবে জগতের বিবর্তনপ্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে জগৎসহ বিভিন্ন পদার্থের ক্রমবিকাশ ঘটাচ্ছে। অতএব, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কেবল জড়ের মধ্যে এ জগৎসহ যাবতীয় পদার্থের সৃষ্টি। এর পেছনে কোন কর্তা নেই। সবকিছুই যান্ত্রিকভাবে বিকশিত হচ্ছে।

(১) জড়জগৎ সম্পর্কিত যান্ত্রিক বিবর্তনবাদঃ সাধারণত বিজ্ঞানী ও বস্তুবাদী দার্শনিকরাই এ মতের প্রধান সমর্থক। এম্পিডক্লিস, ডেমােক্রিটাস প্রমুখ প্রাচীন বস্তুবাদী দার্শনিককে এ মতের অগ্রদূত বলা যায়। আধুনিককালে এ মতের সমর্থক হিসেবে ল্যাপ্লাস ও হারবার্ট স্পেনসারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। নিচে আমরা জড়জগৎ সম্পকে ল্যাপ্লাস ও হারবার্ট স্পেনসারের মতামত আলােচনা করব।

(ক) ল্যাপ্লাসের মতঃ ফরাসি বৈজ্ঞানিক ল্যাপ্লাস বিবর্তনবাদের এক যান্ত্রিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তার মতে, গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টির পূর্বে বিশ্বজুড়ে নীহারিকা পরিব্যাপ্ত ছিল। এই নীহারিকামণ্ডলে ছিল কোটি কোটি নক্ষত্র। এ মতানুসারে নীহারিকামণ্ডল মহাশূন্যে অগ্নিময় দ্রুতগতিসম্পন্ন বাষ্প।

(খ) হারবার্ট স্পেনসারের মতঃ হারবার্ট স্পেনসার জড়জগতের উৎপত্তির একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, যে জড় উপাদান থেকে সৌরজগতের উৎপত্তি, নীহারিকার মত অগ্নিময় গ্যাসীয় পদার্থ বা মেঘের ধুলিকণার মত। এ নীহারিকা সদৃশ জড় উপাদান অসংখ্য পরমাণু দ্বারা গঠিত। এ পরমাণুগুলাে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছিল। তারপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে এগুলাে নীহারিকার কেন্দ্রে ঘনীভূত হয়ে আবর্তিত হতে থাকে। এবং এই পরমাণুগুলাের গতির কারণেই সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন গ্রহের।

(২) প্রাণীজগৎ সম্পর্কে যান্ত্রিক বিবর্তনবাদঃ প্রাণীজগৎ সম্পর্কে যান্ত্রিক বিবর্তনবাদের অন্যতম দুজন প্রবক্তা হলেন ফরাসি প্রকৃতিবাদী দার্শনিক ল্যামার্ক এবং চার্লস ডারউইন। আমরা প্রথমে ল্যামার্কের এবং তারপর ডারউইনের মত আলােচনা করব।

(ক) ল্যামার্কের মতঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর গােড়ার দিকে ফরাসি প্রকৃতিবাদী দার্শনিক ল্যামার্ক প্রাণীর উৎপত্তির যান্ত্রিক ব্যাখ্যা দেন। তার মতে, জীবজগতের বিভিন্ন জাতি-প্রজাতি এক অভিন্ন উৎপত্তিস্থল হতে ক্রমবিবর্তিত হচ্ছে। যেসব কারণে প্রাণীদেহ বিবর্তিত হয় সেগুলাের মধ্যে তিনি পরিবেশের প্রভাব, জৈবিক প্রয়ােজন, অর্জিত দৈহিক পরিবর্তন এবং সেই পরিবর্তনের বংশানুক্রমিক সংক্রমণের কথা বলেন। এসব বিবর্তননীতির প্রভাবেই ঘটে জৈবিক বিবর্তন।

(খ) ডারউইনের মতঃ ডারউইন তার ‘Origin of Species’ গ্রন্থে জীবজগতের উৎপত্তির ব্যাপারে এক যান্ত্রিক ব্যাখ্যা দেন। তার মতে, আদিম জীবকোষ থেকে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে। বিবর্তনের এ প্রক্রিয়াকে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে অভিহিত করেন। ডারউইনের মতে, পৃথিবীর প্রাণীকুল বর্তমানে যে অবস্থায় আছে অতীতে এ অবস্থায় ছিল না। এক আদি অপরিপক্ক অবস্থা থেকে ক্রমিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা বর্তমানের জটিল অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিভিন্ন প্রাণী সুকঠিন যুদ্ধে লিপ্ত ।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়,উদাহরণস্বরূপ হরিণের দ্রুতগামিতার ওপর তার জীবন নির্ভর করে। যে হরিণ যত দ্রুতগামী তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তত বেশি।