ভূমিকাঃ পঞ্চদশ শতাব্দীর পরিষদ আন্দোলনের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্য যুগের অবসান সূচিত হয়ে আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয় এবং সেই সময়ের যথার্থ সন্তান হচ্ছে নিকোলাে ম্যাকিয়াভেলি। বাস্তবতা হচ্ছে ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রদর্শনের মূল ভিত্তি। ম্যাকিয়াভেলির কাছে রাষ্ট্রের কল্যাণ ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বল প্রয়ােগ সম্পূর্ণ বৈধ।
ম্যাকিয়াভেলির শক্তির রাজনীতিঃ নিম্নে ম্যাকিয়াভেলির শক্তির রাজনীতি সমন্ধে আলােচনা করা হলাে-
(১) জনগণের মনে ভীতির সঞ্চয় করাঃ ম্যাকিয়াভেলি বলেন, যখন কোনাে শাসক শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন তার মানব প্রকৃতি সম্পর্কে যথার্থ ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে যথার্থ আইন প্রণয়ন করা, সফলতার সাথে শাসন করা কষ্টকর হবে। এ কারণে শাসককে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রতারণা, নিষ্ঠুরতা যেকোনােভাবেই হােক মানুষের মনে ভীতির সঞ্চায় করতে হবে। কেননা ভালােবাসার মধ্যদিয়ে নয় বরং ভীতি প্রদর্শনই মানুষ বশীভূত করার একমাত্র পথ। কেননা মানুষ সবসময় ব্যক্তিগত স্বার্থ ও লােভলালসা চরিতার্থ করতে পারে।
(২) রাষ্ট্রের অস্তিত্বঃ স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেকোনাে পন্থা অবলম্বন ও রাষ্ট্র তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য যা কিছু অনুকূল তাই করে যাবে। ম্যাকিয়াভেলির মতে, রাষ্ট্রে যদি চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতে পারে তবে মাধ্যম যতই হীন বা ঘূণ্য হােক না কেন অর্জিত সাফল্যেই মাধ্যমের যৌক্তিকতা প্রমাণ করবে। বস্তুত তিনি বিশ্বাস করেন যে, লক্ষ্য মাধ্যমের যৌক্তিকতা বিধান করে, মাধ্যম লক্ষ্যের নয়।
(৩) শাসক হবেন শক্তিশালীঃ বুদ্ধিমান ম্যাকিয়াভেলির মতে শাসককে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও প্রবল ধী শক্তির অধিকারী হতে হবে। মােটকথা, শাসকের মধ্যে শৃগাল ও সিংহের গুণাবরির সমন্বয় হওয়া উচিত। তার মতে, শাসক হবেন শৃগালের ন্যায় ধূর্ত এবং সিংহের ন্যায় বলশালী।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্রের কল্যাণার্থে ও এর স্থিতিস্থাপকতার কারণে রাষ্ট্রনায়কদের যেকোনাে কর্মসূচি গ্রহণ করার পক্ষপাতিত্ব করেছেন ও ন্যায়সঙ্গত বলেছেন ম্যাকিয়াভেলি।
Leave a comment