হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনােবিদ ম্যাকলেল্যান্ড এবং তার সহযােগী অ্যাটকিনসন প্রেষণা সংক্রান্ত তাদের সাফল্যলাভের তত্ত্বটি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। দীর্ঘ ২০ বছরের গবেষণা হল এই সাফল্যলাভের তত্ত্বটি। এর অপর নাম Manifest Need Theory। তার মতে, কিছুচাহিদা শিখনের মাধ্যমে বা সামাজিক পরিবেশ থেকে অর্জন করা হয়। তিনি এই চাহিদাগুলিকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করেন। যথা— 

  • শক্তির চাহিদা (Need for Power),
  • সাফল্যের চাহিদা (Need for Achievement)
  • স্বীকৃতির চাহিদা (Need for Affiliation)।


তাঁদের মতে, প্রত্যেক ব্যক্তিই চায় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে। শৈশব অবস্থা থেকে ব্যক্তির মধ্যে সাফল্যলাভের আকাঙ্ক্ষা বিকশিত হতে থাকে। এই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যকে বজায় রাখে। যেসকল ব্যক্তির মধ্যে সাফল্যলাভের আকাঙ্ক্ষা বেশি, তাদের কৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। অর্থাৎ জীবনে তারা বেশি সাফল্য পায়। শ্রেণি শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাফল্যলাভের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করতে হলে শিশুকেন্দ্রিক নীতি অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ পাঠক্রম রচনার সময় শিক্ষার্থীর আগ্রহ, রুচি, চাহিদা, পছন্দ, সামর্থ্য প্রভৃতির গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা পদ্ধতি হবে শিক্ষার্থীকে জেনে, শিক্ষার্থীকে বুঝে এবং শিক্ষার্থীকে বিচার করে।


ম্যাকলেল্যান্ডের প্রধান তিন প্রকার চাহিদার বর্ণনা

(১) শক্তির চাহিদা : ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তির দ্বারা তার আচরণ নির্দেশিত হয়। ম্যাকলেল্যান্ডের মতে, ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু-ধরনের শক্তি আছে। যখন একজন ব্যক্তি অন্যদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফললাভ করে সেটি ইতিবাচক শক্তি; কিন্তু ব্যক্তিগত স্বার্থে সে যখন ক্ষমতার ব্যবহার করে তখন তাকে নেতিবাচক আখ্যা দেওয়া হয়।

(২) স্বীকৃতির চাহিদা : এই ক্ষেত্রে ব্যক্তি অন্যান্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে। সেই ব্যক্তি অন্যদের দ্বারা প্রশংসিত ও পছন্দের পাত্র হতে পছন্দ করেন। এরূপে তার স্বীকৃতির চাহিদা প্রকাশ পায়।

(৩) সাফল্যের চাহিদা : এখানে একজন ব্যক্তি প্রতিযােগিতামূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চায়। তিনি মনে করেন, নিজের প্রচেষ্টা ও ক্ষমতার সহযােগিতায় ব্যক্তি তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।