মৌর্য আমলে কৃষি ব্যবস্থার সম্প্রসারণ:
মৌর্য আমলে কৃষি ব্যবস্থার উপর রাষ্ট্রের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ছিল। কৃষি উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্র সম্প্রসারণের কাজেও রাষ্ট্রের উদ্যোগ ছিল প্রধান। কোটিল্যের ‘জনপদনিবেশ” তত্ত্ব থেকে স্পষ্ট হয়েছে, নতুন জনপদ তৈরী করে রাষ্ট্র কৃষিজ আয় বৃদ্ধির প্রয়াস নিয়েছিল। মেগাস্থিনিস ও অন্য তিন গ্রীক লেখক জমিতে রাজার একচেটিয়া মালিকানার কথা লিখেছেন। কৃষিজীবী সব মানুষই ছিলেন কার্যত রাজার ভাড়াটে কৃষক। অর্থশাস্ত্রেও ‘সীতা’ জমিতে রাজার একচেটিয়া মালিকানার কথা বলা হয়েছে। তবে তর্কশাস্ত্রের অন্যত্র জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য আইনগত ব্যবস্থার কথা উল্লেখ আছে। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের গোড়ার দিকে (আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৭৫ অব্দ) মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের ফলে রাজনৈতিক কেন্দ্রীকরণ এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ধারা দুর্বল হয়ে পড়ে। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর আঞ্চলিক রাজ্যসমূহের উদ্ভব রাজনীতিতে যেমন পরিবর্তন আনে, তেমনি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা গড়ে দেয়। কৃষিতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অপসরণ ব্যক্তি মালিকানার সুযোগ তৈরী করে। গুপ্ত রাজবংশের শাসনকালে (আনুমানিক ৩১৯-২০ খ্রিঃ – ৫৭০ খ্রিঃ) ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ণ রূপান্তর ও সৃজনশীলতা লক্ষ্য করা যায়।
সমকালীন সাহিত্য লেখমালা ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান থেকে গুপ্তযুগে কৃষির সম্প্রসারণ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন উৎপাদন পদ্ধতির পাশাপাশি নতুন ব্যবস্থার আবির্ভাব কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি-সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। রাষ্ট্র জলাজমি ও বনাঞ্চলকে পরিষ্কার করে কৃষিজমি গড়ে তুলতে কৃষকদের উৎসাহ দিত। জল-জঙ্গল থেকে নতুন নতুন চাষ জমি তৈরী করা সম্ভব হয়েছিল। অরণ্য অঞ্চলকে পরিষ্কার করে চাষযোগ্য করলে কৃষককে সেই জমি বিনা রাজস্বে ভোগ দখলের অধিকার দেওয়া হত। কৃষক নিজের উদ্যোগে পতিত জমি উদ্ধার করে সেচ ব্যবস্থা দ্বারা উৎপাদনযোগ্য করলে সরকার লগ্নীকরা অর্থের দ্বিগুণ লাভ না হওয়া পর্যন্ত সেই জমি থেকে কোন কর আদায় করত না। ফলে কৃষিক্ষেত্র বাড়ানোর কাজে ব্যক্তিগত উদ্যোগ উৎসাহিত হত। সমকালীন বিবরণীতেও পতিত জমি সম্পর্কে উদার ও যুক্তিসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় পাওয়া যায়। গুপ্তযুগের কিছু কিছু লেখতে পতিত জমি ক্রয়-বিক্রয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। এ থেকে অনুমিত হয় যে, এই ক্রয় আর্থিক দিক থেকে লাভজনক হত এবং রাষ্ট্র এই কাজকে সমর্থন করত। গুপ্তযুগে পতিত জমি ছাড়াও কৃষি উৎপাদনের উপযোগী রাজকীয় জমি ও ব্যক্তিগত জমির অস্তিত্ব ছিল।
কালিদাস কৃষি ও পশুপালনকে সম্পদ সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস বলে বর্ণনা করেছেন। এ থেকে কৃষির গুরুত্ব বোঝা যায়। সমগ্র কৃষি ব্যবস্থার পেছনে রাষ্ট্রের সক্রিয় সহযোগিতা ছিল। বৃহৎ জলাধারগুলি তার প্রমাণ। জুনাগড় লেখ থেকে জানা যায় যে, স্কন্দগুপ্তের আমলে সৌরাষ্ট্রের শাসক গিরনারের বিখ্যাত সুদর্শন হ্রদটি পুনরুদ্ধার করেছিলেন। সমকালীন স্মৃতিশাস্ত্রের বর্ণনা থেকে সেচ ব্যবস্থার গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। মনুস্মৃতিতে সেচ ব্যবস্থার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেচ প্রকল্প বা সেতু ভঙ্গকারীদের শাস্তিবিধানেরও উল্লেখ আছে। মনুর বিধান অনুসারে কেউ দিঘির পাড় ভাঙলে তাকে জলে ডুবিয়ে বা শিরচ্ছেদ করে হত্যার কথা বলা হয়েছে। স্মৃতিকার বিষ্ণুর মতে, পাড় বিনষ্টকারীকে (সেতুভেদক) রাজা প্রাণদণ্ড দেবেন। কৃষি উপকরণের ক্ষেত্রেও কিছু অগ্রণী দৃষ্টিভঙ্গীর প্রমাণ পাওয়া যায়। লাঙ্গল, কাস্তে, নিড়ানি ইত্যাদি প্রচলিত কৃষি উপকরণের ব্যবহার সেকালেও ছিল, তবে বিজ্ঞানসম্মত কিছু কিছু পরিবর্তনের সূচনাও ঘটেছিল। ‘অমরকোষ গ্রন্থে অমরসিংহ কৃষি উপকরণ বিষয়ে বিষদ আলোচনা করেছেন। লৌহ নির্মিত কৃষি উপকরণের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিস্মৃতি’তে একটি নির্দিষ্ট ওজনের লৌহ লাঙ্গল তৈরীর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কৃষিতে নানারকম ফসল উৎপাদনের প্রবণতা ছিল। বৃহৎসংহিতা থেকে জানা যায় যে, গ্রীষ্ম ও শরৎকালে দু’বার ফসল ফলানো হত। ‘বৃহৎসংহিতা’ ও ‘অমরকোষ’ উভয় গ্রন্থেই বিভিন্ন ধরনের চালের উল্লেখ আছে। মাত্র ষাট দিনে উৎপাদিত হত, এমন ধরনের চালও ছিল। চাল ছাড়া যব, গম, কড়াই, তৈলবীজ, গোলমরিচ ইত্যাদি চাষ করা হত। পেঁয়াজ, রসুন, পান, শশা ইত্যাদির ফসল হত বলে অমর সিংহ উল্লেখ করেছেন। দক্ষিণ ভারত গোলমরিচ ও উন্নত মশলা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। ‘পেরিপ্লাস’ গ্রন্থের মতে, ভারতের কৃষিজ উৎপাদন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হত।
গুপ্তযুগে ভূস্বামীদের অধিকার ও তা সংরক্ষণের বিষয়ে রাষ্ট্র খুব সচেতন ছিল বলে স্মৃতিশাস্ত্রগুলিতে উল্লেখ আছে। এক বিশেষ ধরনের খতিয়ানে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের হিসেব নথিভুক্ত থাকত। এই সময়ে জমির দলিল-দস্তাবেজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি পৃথক বিভাগ গঠন করা হয়। এই বিভাগের দায়িত্বে থাকতেন ‘পুস্ত পাল’ নামক একশ্রেণির কর্মচারী। গুপ্তযুগের উৎকীর্ণ লিপি ও তাম্রশাসনগুলি থেকে জমি বিক্রয়ের বহু ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। হস্তান্তরিত জমিগুলির মাপ ও দাম সম্পর্কে এই তাম্রপট্টগুলিতে বিশদ তথ্য লিপিবদ্ধ থাকত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই তাম্রপট্টগুলির অধিকাংশই বঙ্গদেশে পাওয়া যায়।
এই তাম্রশাসন অনুযায়ী সাধারণত তিনটি একক দ্বারা বঙ্গদেশে ও উত্তর-ভারতে জমির পরিমাপ করা হত। এগুলি ছিল আঢ়বাপ, দ্রোণবাপ এবং কুল্যবাপ। আটদ্রোণরাপ ছিল এক কুল্যবাপের সমান, চার আঢ়বাপে এক দ্রোণবাপ বোঝাতো। ‘কুল্যবাপ’ বলতে বোঝায় সেই পরিমাণ জমি যেখানে এক কুলা (কুলা) বীজধান বপন করা যায়। অনেকের ব্যাখ্যা অনুসারে এক কুল্যবাপে ১২৮ থেকে ১৬০ বিঘা জমি বোঝায়। এছাড়াও জমি পরিমাপের সর্বোচ্চ একক ছিল ‘পাটিক”। পাঁচ কুল্যবাপে এক পাটিক বোঝাতো। বঙ্গদেশে প্রাপ্ত তাম্রপট্টগুলি থেকে জমি পরিমাপের অপর একটি পদ্ধতির কথা জানা যায়। এই পদ্ধতিতে ভূখণ্ড মাপার জন্য দুটি নল ব্যবহার করা হত। কোন নির্দিষ্ট একক জানা না গেলেও লেখমালাগুলি থেকে এটুকু অনুমান করা যায় যে, দুটি নলের সাহায্যে যথাক্রমে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিমাপ করা হত। সমকালীন দক্ষিণ ভারতে অবশ্য জমির মাপন প্রণালীর একটি ভিন্ন একক ব্যবহার করা হত। দক্ষিণ ভারতের বাকাটক রাজ্যে, বা তার পূর্ববর্তী সাতবাহন রাজ্যেও জমির পরিমাপের জন্য ‘নিবর্তন’ নামের একটি একক ব্যবহৃত হত। গুপ্তযুগের তাম্রশাসনগুলি থেকে জমির মূল্যমান সম্পর্কেও সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। পাহাড়পুর তাম্রশাসন (৪৭৮-৭৯ খ্রিঃ) থেকে জানা যায় পাহাড়পুরে কুল্যবাপ জমির দাম ২ দীনার ছিল। দামোদরপুর তাম্রশাসন অনুযায়ী পুণ্ড্রবর্ধন অঞ্চলে অর্থাৎ উত্তরবঙ্গে জমির দাম ছিল প্রতিকুল্যবাপ ৩ দীনার। গুপ্ত সাম্রাজ্যের অব্যবহিত পরেই দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গে ধর্মাদিত্য, সমাচারদেব ও গোপচন্দ্রের রাজত্বকালে জমির দাম ছিল প্রতিকুল্যবাপ ৪ দীনার (ফরিদপুর তাম্রশাসন)। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের জমির দামের এই পার্থক্যের কারণও সহজেই অনুমান করা যায়। দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গের জমিগুলি ছিল উর্বর ও ফসল উৎপাদনের উপযোগী, অপরপক্ষে উত্তরবঙ্গের জমিগুলি ছিল পতিত ও অনাবাদী, —ফলে স্বভাবতই উত্তরবঙ্গের তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গে জমির দাম বেশি ছিল। হস্তান্তরিত জমির দলিলগুলিতে জমির দখলী শর্তের বৈশিষ্ট্যগুলি সুনির্দিষ্ট করে দিতে ‘নীবিধর্ম’, ‘অক্ষয়নীবিধৰ্ম’, অক্ষয়নীবি, নীবিধর্মক্ষয়, অপ্রদাধর্ম প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করা হত।
জমির মালিকানা-সংক্রান্ত বিতর্কটি এ যুগেও যে বিদ্যমান ছিল তা এ বিষয়ে পণ্ডিতদের মতবিরোধ থেকে বোঝা যায়। যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতির উল্লেখ থেকে জানা যায়, ভূমিদানের অধিকারী হলেন একমাত্র রাজা। আবার রাজা ভূমি দান করলেও প্রদত্ত ভূমির উপর তাঁর কিছু অধিকার বজায় থাকত, যেমন—জরিমানা করার অধিকার, নতুন কর আরোপের অধিকার ইত্যাদি। কোন জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে গেলে রাজার অনুমতির প্রয়োজন হত। বিষ্ণু, মনু ও নারদ স্মৃতিতেও খনি ও পতিত জমির উপর রাষ্ট্রের মালিকানার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি দেশের সমস্ত জমি থেকেই উৎপন্ন ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ পাবার দাবি জমিতে রাজার এক স্বতন্ত্র অধিকারের কথাই সূচিত করে। মীমাংসাসূত্রের শবরস্বামী ঠিক এই প্রশ্নটিকে সামনে রেখে বলেছেন যে, রাজা উৎপন্ন শস্যের একাংশের অধিকারী, কারণ তিনি ভূমির ও শস্যের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করেন। প্রাচীন আকরগ্রন্থগুলিতে রাজার ভূমিক্রয়ের উদাহরণও পাওয়া যায় এবং শাস্ত্রানুসারে এইভাবে ভূমিক্রয়ের পরেই রাজা জমির প্রকৃত মালিক হন, অন্যথা তিনি ভূমির রক্ষকমাত্র। অর্থশাস্ত্রের দ্বিতীয় অধিকরণে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যিনি নিয়মিতভাবে ফসল উৎপাদন করেন ও রাজস্ব প্রদান করেন তিনিই জমির প্রকৃত মালিক। ভূমির রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত মালিকানা গুপ্তযুগে বৃদ্ধি পেলেও জমির উপর গ্রামবাসীদের যৌথ অধিকার যে একেবারে লুপ্ত হয়েছিল তাও বলা যায় না। জমি ক্রয়-বিক্রয় বা দানের ক্ষেত্রে গ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অনুমতির প্রয়োজন হত। জমির পরিমাপ ও সীমানা নির্ধারণও হত নেতৃস্থানীয়দের উপস্থিতিতে। এ তথ্য বহু গ্রন্থে পাওয়া যায়। সুতরাং একথা অনুমান করা যায় যে, বাকি পঞ্চ-ষষ্ঠাংশ গ্রামসভার তহবিলে জমা পড়ত।
মৌর্য আমলে ভূমিদান প্রথা :
গুপ্তযুগ ও তার পরবর্তী দেড়শো বছর (৩০০-৭৫০ খ্রিঃ) সময়কালে ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান আকর্ষণ হল ভূমি ব্যবস্থার হস্তান্তর, বিক্রয় ইত্যাদির ব্যাপকতা এবং আংশিক সামন্তীকরণ সহ উৎপাদনের স্থানীয় এককগুলির আবির্ভাব। মূলত পুরোহিত ব্রাহ্মণ এবং দেবস্থানগুলিকে ভূমি ও গ্রাম দানের ফলে এই পরিবর্তন সূচিত হয়। ভূমিদান প্রক্রিয়ার আভাস প্রাচীন সাহিত্যেও পাওয়া যায়। মহাকাব্যের কাল থেকে ধর্মীয় কারণে দান-ধ্যানের রীতি চালু ছিল। পুরাণেও এর উল্লেখ আছে। কলিযুগ বা সামাজিক সংকট প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র তার কর্মচারীদের মাধ্যমে কর আদায় করত এবং সরকারী কর্মচারী, সেনাবাহিনী সহ ব্রাহ্মণ পুরোহিত ও অন্যান্যদের কাজের পরিবর্তে বেতন প্রদান করত। কিন্তু কলিযুগে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের বিরোধ তীব্রতর হলে আর্থ সামাজিক সম্পর্কে ভাঙন ঘটে। বৈশ্যরা কর দিতে অস্বীকার করে। শূদ্ররা শ্রম দিতে অস্বীকার করে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকার বা রাষ্ট্র তার কর্মচারীদের সরাসরি বেতন দেওয়ার পরিবর্তে তাদেরই কর আদায় করে বেতন মিটিয়ে নেবার দায়িত্ব অর্পণ করে। তবে আদি ভূমিদান ব্যবস্থা ছিল একটি সাময়িক, বিচ্ছিন্ন, গুরুত্বহীন এবং অতি সীমিত প্রথা মাত্র।
প্রায় চারশো পঞ্চাশ বছরব্যাপী আলোচ্য আমলে ভূমিদান ব্যবস্থার ব্যাপকতা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রাথমিকভাবে মূলত ধর্মসস্থান যেমন মঠ, মন্দির, বৌদ্ধ ও জৈন সংঘ এবং ব্রাহ্মণ পুরোহিত শ্রেণীকে ধর্মীয় কারণে ভূমিদান ও গ্রামদান করা হত। সাধারণভাবে এটি ‘অগ্রহার’ বা নিষ্কর ভূমিদান ব্যবস্থা নামে পরিচিত। খ্রিষ্টীয় ৩০০ শতকের আগে ধর্মকর্ম বা পূণ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে এই দান চালু হয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দানের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন হত। ধনী ব্যক্তিরা জমি ক্রয় করে এই পুণ্য দান করতেন। ৩০০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে ভূমিদান ব্যবস্থায় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে—(১) ব্রাক্ষ্মণ ও ধর্ম প্রতিষ্ঠানকে ভূমি ও গ্রাম দানের কাজে শাসকশ্রেণির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং (২) ধর্ম নিরপেক্ষ কারণেও ভূমিদান ব্যবস্থা চালু হয়। ভূমিদান বিষয়ক তথ্যসূত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হল তাম্রশাসনগুলি। তামার ফলকে রাজকীয় নির্দেশ (শাসন) হিসেবে ভূসম্পদ হস্তান্তরের উল্লেখ এগুলিতে পাওয়া যায়। সমকালীন মুদ্রা ও খনন কাজ থেকে পাওয়া পুরা বস্তুগুলিও ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। কালিদাসের রচনা, নারদ স্মৃতি, বৃহস্পতি স্মৃতি প্রভৃতি ধর্মশাস্ত্র, হিউয়েন সাঙ ও ফা-হিয়েনের বিবরণ থেকেও ভূমিদান বিষয়ক নানা তথ্য পাওয়া যায়। তবে সমুদ্রগুপ্তের নামের সাথে যুক্ত ভূমিদানগুলির সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। ফলে গুপ্তসম্রাটদের সরাসরি জারি করা ভূমিদানের উল্লেখ যত পাওয়া যায়, তার তুলনায় বেশী পাওয়া যায় মধ্যভারতে গুপ্তদের সামন্ত রাজাদের প্রদত্ত দানের তথ্য। স্কন্দগুপ্তের বিহার স্তম্ভলিপি (৪৯৮ খ্রিঃ) থেকে অনুমান করা যায় যে, গুপ্তসম্রাটরা ধর্মীয় পুণ্য লাভের আশায় সামস্ত রাজাদের নিষ্কর ভূমিদান করতেন এবং সেগুলি হস্তান্তরিত হত নিম্নতর স্তরে।
খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকের পরবর্তীকালে ভূমিদান ব্যবস্থা ক্রমে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নির্ণায়ক ব্যবস্থা হিসেবে উঠে আসে। এই প্রক্রিয়ার সূচনা সাতবাহনদের রাজত্বকালে। ভূমিদান ব্যবস্থা আরো বৃদ্ধি পায় গুপ্তদের সমসাময়িক বাকাটকদের রাজত্বে। বাকাটক রাজা প্রবর সেনের আমলে কৃষিক্ষেত্র, চারণভূমি, লবণ ইত্যাদির পাশাপাশি খনির উপর রাজকীয় মালিকানার একচেটিয়া অধিকারও ব্রাহ্মণদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মাটির তলা থেকে উদ্ধার করা গুপ্তধনের উপরেও দান গ্রহিতার অধিকার স্বীকার করা হয়। লক্ষণীয় যে, এই সময় উত্তর ও পূর্ববঙ্গ এবং মধ্যপ্রদেশের পূর্বভাগে ব্রাহ্মণ ও ধর্মস্থানকে মূলত দানগুলি করা হত। তবে মধ্যপ্রদেশে ও বাংলার ভূমিদানের মধ্যে দুটি বিশেষ পার্থক্য ছিল। মধ্যপ্রদেশে মূলত সামন্ত রাজা বা জায়গিরদাররা ভূমিদান করতেন। কিন্তু বাংলাদেশের দানগুলি ছিল ব্যক্তিবিশেষের কাজ। এই দানগুলির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মধ্যভারতের দানগুলি সরকারী হস্তক্ষেপ মুক্ত ছিল।
বিক্রয় ও দানের মাধ্যমে জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জমির মাপের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। তাম্রশাসন থেকে জমির পরিমাপের নানা পদ্ধতি বা এককের বিষয়ে জানা যায়। জমির মাপ বিষয়ক তাম্রশাসনগুলির অধিকাংশই গুপ্তরাজাদের আমলে উৎকীর্ণ হয়েছিল। এগুলি পাওয়া গেছে পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি বা উত্তরবঙ্গে। এদের উৎকীর্ণকাল ৪৩৩ থেকে ৫৪৪ খ্রিস্টাব্দ। ষষ্ঠ শতকের শেষ দিকে উৎকীর্ণ করা বঙ্গদেশ বা অধুনা বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে জমি মাপ সংক্রান্ত কিছু তাম্রশাসন পাওয়া গেছে। সেকালে জমি পরিমাণের একক ছিল ‘আঢ়বাপ’, ‘দ্রোণবাপ’, ও ‘কুল্যবাপ’। তবে শেষ দুটি এককের ব্যবহার দেখা যায়। ‘বাপ’ কথাটি বীজ বপনের এলাকার নির্দেশক। সম্ভবত রেখা। দিয়ে জমির এলাকা মাপার বদলে বীজ বপনের এলাকা হিসেবে জমির মাপ নির্ধারণ করা হত। যেমন এক ‘দ্রোণ’ বা এক ‘কুল্য’ পরিমাণ বীজ যতটা পরিমাণ জমিতে ছড়ানো যেত তাকে বলা হত ‘এক দ্রোণবাপ’ বা এক কুলাবাপ। সাধারণভাবে আট ‘দ্রোণবাপে’ এক ‘কুল্যবাপ’ হত। পাঁচ কুল্যবাপ বা চল্লিশ (৫×৮ = ৪০) দ্রোণবাপ ছিল এক ‘পাটক’। ‘পাটক’ ছিল জমির পরিমাপের সর্বোচ্চ একক। তবে পাটকের ব্যবহার কতটা ছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কারণ একমাত্র বৈশ্যগুপ্তর গুনাইঘর তাম্রশাসনে ‘পাটক’ পরিমাপের উল্লেখ পাওয়া যায়। বর্তমানেও কুলব্যাপ ও দ্রোণবাপ শব্দদুটির ব্যবহার আছে। তবে তাদের পরিমাপ গুপ্ত আমলের থেকে স্বতন্ত্র। ড. দীনেশচন্দ্র সরকারের মতে, এক কুল্যবাপ হল ১২৮-১৬০ বিঘা ক্ষেত্র, কিন্তু গবেষক শচীন্দ্রকুমার মাইতি এক কুল্যবাপ বলতে ৩৮-৪৮ বিঘা ক্ষেত্রের উল্লেখ করেছেন। সম্ভবত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাপের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন ছিল। গুপ্তদের সমসাময়িক বাকাটক রাজ্যে ‘নিবর্তন’ নামক একটি ভিন্ন মাপের উল্লেখ পাওয়া যায়। সাতবাহন বংশের শাসনকালেও মাপ হিসেবে ‘নিবর্তন’-এর ব্যবহার ছিল। সম্ভবত সাতবাহনদের থেকেই বাকাটক রাজারা এটি নিয়েছিলেন। গুপ্ত পরবর্তীকালে বলভীর মৈত্রক বংশের লেখতে ‘পাদাবর্ত” নামে একটি জমি মাপের এককের উল্লেখ আছে। শচীন্দ্রনাথ মাইতির মতে, এক ‘পাদাবর্ত’ ছিল আধুনিক এক ফুটের কিছু বেশী। অর্থাৎ সেকালে জমি পরিমাপের কোন নির্দিষ্ট একক ছিল না।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলা, বিহার এবং মধ্যভারত ও অন্যত্র ভূমিদানের প্রকৃতি স্বতন্ত্র ছিল। উত্তর ও পূর্ব বাংলা এবং বিহারে মূলত সামন্ত রাজারা সম্রাটের কাছে ভূখণ্ড ক্রয় করে এবং সম্রাটের স্বেচ্ছা-সম্মতির ভিত্তিতে তা কোনও ব্রাহ্মণ / দেবমন্দির / বা বৌদ্ধবিহারকে দান করতে পারতেন। এই দান হত নিষ্কর (অগ্রহার), স্থায়ী (অক্ষয়নীবি) এর বসতিহীন জমি (ভূমিচ্ছিদ্র ন্যায়)। তাম্রশাসনগুলি থেকে এই জমি হস্তান্তরের নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়। যেমন তাম্রশাসনে প্রথমে দানবর্ষ (গুপ্তাব্দ), সম্রাটের ও অধস্তন সামন্তপ্রভু এবং জেলা প্রশাসকের নাম লেখা থাকত। এরপর ভূমিক্রয়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি ও নির্দিষ্ট জমির পরিমাপ ও গুণাগুণ লেখা হত। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিচার-বিবেচনার পর ক্রেতা নির্দিষ্ট মূল্য দিয়ে জমি ক্রয় করতে পারতেন। এইভাবে জমিকেনার পর তা কোন ব্রাক্ষ্মণ মন্দির বা বৌদ্ধবিহারকে দান করা হত। এই দান করা ভূমিতে রাষ্ট্র তার প্রাপ্য অংশটুকু ব্রাক্ষ্মণ বা মন্দিরের জন্য ত্যাগ করত। মনে করা হত যে, প্রদত্ত ভূমি থেকে কৃত ধর্মকর্মের ফলে প্রাপ্ত পুণ্যের এক-ষষ্ঠাংশ রাষ্ট্রের পক্ষে অর্জিত হত। রামশরণ শর্মার মতে, এই পূণ্যের কথা ভেবে রাষ্ট্র স্বেচ্ছায় তার প্রাপ্য পরিত্যাগ করত। অর্থাৎ একই জমি দু’বার হস্তান্তরিত হত। ক্রেতা জমি কিনতেন সম্রাটের কাছ থেকে এবং তা দান হিসেবে অর্পণ করতেন ব্রাহ্মণ বা ধর্মস্থানকে। এগুলির অধিকাংশই ছিল অনাবাদী পতিত ভূখণ্ড। জমি হস্তান্তরের পর জমির চারপাশের সীমানা চিহ্নিত করা হত। প্রথম দিকে ছাই দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করা হত। গুপ্ত পরবর্তীকালে জমির চারপাশে খুঁটি বসানো হত বলে তাম্রশাসন থেকে (মল্লসারুল) জানা যায়।
মধ্যভারত, পশ্চিমভারত বা দাক্ষিণাত্যে ভূমিদানের প্রকৃতি ও পদ্ধতি ছিল স্বতন্ত্র। এই সকল অঞ্চলে ধর্মকর্ম ছাড়াও অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সক্রিয় ছিল। কলিযুগের বর্ণনায় যে সামাজিক অভ্যুত্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়, তার ফলে সম্ভবত রাজস্ব আদায় করে ব্রাক্ষ্মণ ও অন্যান্যদের মধ্যে বণ্টন করা অনিশ্চিত হয়েছিল। তাই ব্রাক্ষ্মণ পুরোহিত ও দেবস্থানকে স্থায়ী ভিত্তিতে ভূমিদান করার ভাবনা শুরু হয়েছিল। বাংলার বাইরের দান করা ভূমি ছিল কৃষি উপযোগী “এবং এগুলি সবই ছিল রাজকীয় দান। তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, চাষজমি ও গ্রাম দুই-ই দান করা হত। সব দানই ছিল নিষ্কর (অগ্রহার)। তবে গ্রাম ও জমি দানের শর্ত কিছুটা আলাদা ছিল। ভূমিদানের ক্ষেত্রে দান করা ভূখণ্ডের উপর দান গ্রহিতার মালিকানা স্থাপিত হত। কিন্তু গ্রামের ক্ষেত্রে দান প্রাপক উক্ত গ্রামের রাজস্ব ভোগের অধিকারী হতেন, কিন্তু গ্রামের পূর্ণ মালিকানা পেতেন না। আবার বাকাটক আমলে একজন ব্রাহ্মণ একাধিক গ্রাম দান হিসেবে পেয়েছেন, এমন দৃষ্টান্তও আছে। এইভাবে অগ্রহার দান ব্যবস্থার ফলে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষ প্রভূত ভূ-সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন। বৈন্যগুপ্তের তাম্রশাসন এবং চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়েন (৫ম শতক) ও হিউয়েন সাঙ (ষষ্ঠ শতক) এর বিবরণ থেকে স্পষ্ট যে, ব্রাহ্মণ শ্রেণী ও বৌদ্ধ বিহারগুলিও ভূমিদানের সূত্রে বিপুল ভূসম্পত্তির অধিকারী হয়েছিল।
সরকারীভাবে ভূসম্পদের মালিকানার সূত্রে ব্রাহ্মণ, পুরোহিত শ্রেণী ও ধর্ম প্রতিষ্ঠানগুলি আর্থিক ও প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধার অধিকারী হয়েছিল। দান করা ভূ-সম্পত্তিতে রাজার সেনা বা পাইক বরকন্দাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল (চাটভাট অপ্রবেশ্য)। লেখমালার এই শব্দবন্ধ থেকে অনুমান করা হয় যে চাট ও ভাট অর্থাৎ নিয়মিত ও অনিয়মিত পাইকগণ দান করা গ্রাম বা জমিতে প্রবেশ করতে পারবেন না। ব্রাহ্মণদের নিজ উদ্যোগ ও ব্যবস্থায় কৃষকের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে হত। ড. রামশরণ শর্মার মতে, দান করা ভূমি বা গ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও দান গ্রহিতার উপর বর্তেছিল। স্বভাবতই ব্রাহ্মণ ও ধর্ম প্রতিষ্ঠানগুলি নিজস্ব কর্মীমণ্ডলী নিয়োগ করে এই কাজ পরিচালনা করত। ফলে দানগ্রহীতা স্থানীয়ভাবে অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন।
সাধারণভাবে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে সমর্থনের বিনিময়ে ব্রাহ্মণদের অগ্রহার দান করা হত। তাই কিছু শর্তসাপেক্ষে এই ভূমিদান করা হত বলে প্রবর সেনের দানপত্র থেকে স্পষ্ট হয়। যেমন, দানগ্রহীতা রাষ্ট্রদ্রোহী কাজে লিপ্ত হবেন না, ব্রহ্মহত্যা, চুরি বা অনৈতিক কর্মে লিপ্ত হবেন না, যুদ্ধ ঘোষণা করবেন না বা গ্রামের কোনও ক্ষতিসাধন করবেন না ইত্যাদি। অর্থাৎ রাষ্ট্রবিরোধী কাজ থেকে ব্রাহ্মণ শ্রেণীকে নিবৃত্ত করা ছিল ভূমিদানের অন্যতম উদ্দেশ্য। ড. রামশরণ শর্মার মতে, গুপ্ত সম্রাট, সামন্তরাজা বা কোন ব্যক্তিবিশেষ যে উদ্দেশ্যেই ভূমিদান করুন না কেন, এই দানের সূত্রে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রবল ক্ষমতাশালী একদল মধ্যস্বত্ত্বভোগী শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছিল। ভূমির অধিকার পেয়ে ব্রাহ্মণদের অনেকেই পুরোহিতসুলভ কর্তব্যাদি পরিত্যাগ করে জমির তদারিক ও ধর্মের সাথে যুক্ত নয় এমন সব কাজকর্মে মনোনিবেশ করেছিলেন। ‘অগ্রহার’ ভূমিখণ্ডের রাজস্ব ভোগ করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, কৃষক নিয়োগ, রাজস্ব আদায় ইত্যাদি ধর্মনিরপেক্ষ এবং বৈষয়িক কাজে ব্রাহ্মণ শ্রেণী লিপ্ত হলে তারা নতুনভাবে ক্ষমতার স্বাদ পান। প্রশাসনিক ও বিচার বিষয়ক কাজ পরিচালনার জন্য দানগ্রহিতাকেও কৃষক নয় এমন একদল কর্মচারী পোষণ করতে হয়। এইভাবে ধীরে ধীরে অগ্রহার দানের মাধ্যমে রাজা ও সামন্ত প্রভৃ ছাড়াও একদল গ্রামীণ ক্ষমতাশালী গোষ্ঠির উদ্ভব ঘটেছিল।
Leave a comment