সূর্য পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে এবং ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত পানি বাষ্পীভূত করে। বাষ্পীভূত পানি বায়ুমণ্ডলে উপরের দিকে উঠতে থাকে, শীতল হয় এবং ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয়।এই ছিল অল্প কথায় মেঘ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া। কিন্তু ধবধবে সাদা বা ধূসর কালো এই মেঘ গুলো আকাশে ভেসে থাকে কিভাবে? অভিকর্ষের প্রভাবে তো মাটিতে পড়ার কথা!
আবার যেমন কম ঘনত্বের পদার্থ বেশি ঘনত্বের পদার্থে ভেসে থাকার নিয়ম অনুযায়ী যদি ভেবে থাকেন মেঘের ঘনত্ব বাতাসের ঘনত্বের চেয়ে কম, তাহলে ভুল করবেন। যেহেতু মেঘ পানি কণা ও জমাট বাঁধা বরফে তৈরি, তাই এর ঘনত্ব কোনভাবেই বাতাসের তুলনায় কম হতে পারে না।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, ১ ঘন কিলোমিটার (১ বিলিয়ন ঘন মিটার) মেঘের ওজন প্রায় ৫ লক্ষ কিলোগ্রাম, যা কিনা প্রায় ১০০ হাতির ভরের সমান। হ্যাঁ, এম ভারী হওয়া সত্ত্বেও মেঘ দিব্বি আমাদের বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়াচ্ছে।
মেঘ ভেসে থাকার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যার প্রথম কারণটি হল মেঘের কণার আকৃতি। আমরা জানি মেঘ মূলত অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি কণা দ্বারা তৈরি, যাদের বলা হয় ড্রপ-লেট (Droplet)। এরা এতটাই ক্ষুদ্র যে একটি মেঘের পানির বিন্দুর গড় আকৃতি মাত্র ২০ মাইক্রোমিটার হতে পারে। তুলনা করলে এটি মানুষের চুলের অর্ধেক প্রশস্ত এবং একটি ক্ষুদ্র ধূলিকণার সমান।
মেঘ বাতাসে ভাসার দ্বিতীয় কারণ হল বায়ুমণ্ডলের নিম্নভাগ থেকে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ বায়ুর প্রবাহ। ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে থাকা বায়ুর তাপ তুলনামূলক বেশি থাকে। ফলে বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে থাকা শীতল বায়ুর চেয়ে এদের ঘনত্ব কমে যায় বা হালকা হয়ে যায়। এতে করে উষ্ণ হালকা বাতাস উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং উপরের শীতল ভারী বাতাস নিচে নামতে থাকে। ক্রমাগত এমন ঊর্ধ্বমুখী উষ্ণ বায়ুর প্রবাহ মেঘ কে উপরের দিকে একটি বল প্রয়োগ করে ভেসে থাকতে সাহায্য করে।
মেঘের অতি ক্ষুদ্র ড্রপ-লেট বা পানি-কণার পক্ষে এমন ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহে ভেসে থাকা খুব কঠিন কিছু নয়। যেহেতু পানি কণা গুলো খুবি ক্ষুদ্র, এদের উপর পৃথিবীর অভিকর্ষ বলও খুবই নগণ্য। তাই মেঘ খুব সহজেই এই আকর্ষণ বলকে নাকচ করে দিয়ে ভেসে থাকতে পারে।
তবে মেঘ কিন্তু চিরকাল ভাসে না, যা আমরা বৃষ্টিপাত থেকেই বুঝতে পারি। কখনও কখনও মেঘের অতি ক্ষুদ্র ড্রপ-লেট বা পানি কণা এত বড় এবং আর্দ্র হয়ে যায় যে এরা একে অপরের সাথে লেগে যেতে শুরু করে এবং আকারে বড় হতে থাকে। পানির ফোঁটাগুলি এত বড় হয়ে যায় যে তারা আর ধূলিকণার মতো আচরণ করে না। ফোঁটাগুলো তখন আর ভেসে থাকতে পারে না এবং অভিকর্ষের প্রভাবে পড়তে শুরু করে, যাকে আমরা বৃষ্টি বলি।
কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান |
Leave a comment