প্রশ্নঃ মৃত্যুকালীন ঘোষণা কি? এটা কিভাবে প্রমাণ করা যায়? তদন্তকালে কোন পুলিশ অফিসারের নিকট যদি এটা করা হয় তাহলে কি সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা যায়? যদি কোন মৃত্যুকালীন ঘোষণাকারী ব্যক্তি বেঁচে যায় তাহলে তার ঘোষণা কি সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা যায়? মৃত্যুকালীন ঘোষণা বিষয়ে বাংলাদেশের আইন এবং ইংলিশ আইনের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে?
[What is dying declaration? How it can be proved? State whether dying. declaration made to a police officer while investigating a case can be accepted as evidence? Can the declaration of a person who survives be accepted as evidence? Is there any difference between English law and Bangladeshi law regarding dying declaration?]
উত্তরঃ সাক্ষ্য আইনের ৩২ ধারা মতে, কোন নিহত ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে যদি তার মৃত্যুর কারণ, অবস্থা এবং পরিস্থিতি বর্ণনা করে কোন বিবৃতি বা জবানবন্দী প্রদান করে থাকেন তবে তাকে মৃত্যুকালীন ঘোষণা বলা হয়। ৩২ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন মামলায় কোন মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উঠে তখন ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অথবা যে অবস্থা এবং পরিস্থিতিতে তার মৃত্যু ঘটেছে সে সম্পর্কে যদি বিবৃতি প্রদান করে থাকে, তবে এরূপ বিবৃতি প্রদানের সময় বিবৃতি দানকারীর মৃত্যুর আশংকা উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক এবং যে মামলায় তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে তার প্রকৃতি যাই থাকুক না কেন, উক্ত বিবৃতি প্রাসঙ্গিক। এরূপ ঘোষণা লিখিত হতে পারে বা মৌখিক হতে পারে কিংবা ভাব ভঙ্গির মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে। ইহা ম্যাজিস্ট্রেট বা কোন বিশেষ ব্যক্তির নিকট ঘোষণা করতে হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা বা বিধি-বিধান নেই। ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার বা সাধারণ নাগরিকের নিকট এরূপ ঘোষণা বা বিবৃতি প্রদান করা যায়।
তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের নিকটও মৃত্যুকালীন ঘোষণা করা যায়। তবে,
(১) এরূপ ঘোষণাকারীর মনে আসন্ন মৃত্যুর আশংকা থাকতে হবে। মৃত্যু হতেই হবে এমন বিধি বিধান নেই। তবে তার মনে এরূপ আশংকা সৃষ্টি হবে যেনো তার আর বাঁচার আশা নেই।
(২) এরূপ ঘোষণা তার মৃত্যুর কারণ বা পরিস্থিতি সম্পর্কে হতে হবে।
(৩) মৃত্যু হবার পূর্বেই যে কোন লোকের সম্মুখে লিখিতভাবে বা মৌখিকভাবে বা অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।
(৪) যার সামনে এরূপ ঘোষণা করা হয়েছে সে ব্যক্তি আদালতে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবেন।
(৫) সমর্থনমূলক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এরূপ ঘোষণা প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হতে পারে। কান পারে।
মামলার নজীর হিসেবে লাহোর হাইকোটেইর অভিমত (১৯৭০ ক্রিমিন্যাল ল জার্নাল ৩৭৩ লাহোর) নিম্নরূপঃ
মৃত্যুকালীন ঘোষণা (ক) মূল ঘটনার অব্যবহিত পরে, বা (খ) মৃত ব্যক্তি যখন মৃত্যুর প্রতীক্ষায় বা (গ) এমন সময়ে যে তখন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তি কারো সাথে পরামর্শ করার সুযোগ পান নি অথবা কারো নিকট হতে কোন ইঙ্গিত পায় নি। এরূপ অবস্থায় প্রদত্ত ঘোষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুরূপভাবে, মৃত্যুকালীন ঘোষণার বিষয়বস্তু যদি এই আভাস দেয় যে, যা অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্ভবত সত্য এবং ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করার অথবা ভুল ব্যক্তিকে জড়ানোর বাহ্যত কোন প্রচেষ্টা হয় নি তবে সাধারণত ইহা একটি নির্ভরযোগ্য মৃত্যুকালীন ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা লাভ করে। মৃত্যুকালীন ঘোষণা সত্য ও খাঁটি বলে বিশ্বাস হলে সমর্থনকারী সাক্ষ্যের প্রয়োজন হয় না, ঘোষণার ভিত্তিতেই অপরাধ সাব্যস্ত হতে পারে।
ঘোষণাকারী বেঁচে গেলে, এরূপ ঘোষণার গ্রহণযোগ্যতাঃ ঘোষণাকারী যদি মারা না-যান অর্থাৎ দৈবাৎ বেঁচে উঠেন তবে তাঁর এই ঘোষণা ৩২ (১) ধারা মতে মৃত্যুকালীন ঘোষণা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না তবে সাক্ষ্য আইনের ১৫৭ ধারার বিধান মোতাবেক তা সমর্থনমূলক সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হতে পারে। ঘোষণাকারী বেঁচে গেলে ঘোষণাকারী স্বয়ং আদালতে উপস্থিত থেকে শপথ বাক্য পাঠ ও জেরার সম্মুখীন হতে পারেন। এক্ষেত্রে সমর্থনমূলক সাক্ষ্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
Leave a comment