ইংরেজি ‘Soil শব্দটি ল্যাটিন ‘Solum’ থেকে এসেছে। যার অর্থ হল ভূমিতল’ বা ‘মেঝে’। সাধারণভাবে দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদি শিলা পরিবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে বিভিন্ন খনিজ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হয়ে যে পাতলা ভঙ্গুর আবরণ বা স্তর সৃষ্টি হয়, যা উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক তাকে মৃত্তিকা বলে। বিভিন্ন মৃত্তিকা বিজ্ঞানী তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্তিকার বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

(১) ডকুচেড-কৃত সংজ্ঞা (1893 খ্রি) : ভূপৃষ্ঠে মূল শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে এমন একটি প্রাকৃতিক স্তর গঠিত হয় যা জল, বায়ু এবং জীবিত বা মৃত জীবদেহের প্রভাবে কম-বেশি পরিবর্তিত হয়, তাকেই বলে মৃত্তিকা।

(২) ছিলগার্ড-কৃত সংজ্ঞা (1906 খ্রি.) : মৃত্তিকা হল ভূপৃষ্ঠের ওপর গঠিত একপ্রকার শিথিল পদার্থ যেখানে গাছপালা কেবলমাত্র তাদের শিকড় ছড়িয়েই দেয় না সেখান থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং একই সঙ্গে বৃদ্ধি পায়।

(৩) জেনি-কৃত সংজ্ঞা (1941 খ্রি.) : মৃত্তিকা হল এমন এক প্রাকৃতিক বস্তু যা মূল শিলা, জীবমণ্ডল, জলবায়ু, ভূমিরূপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রকগুলির দীর্ঘকালীন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল।

(১) ভূত্বকের সর্বোচ্চ স্তর : মৃত্তিকা হল ভূত্বকের ওপরে অবস্থিত সর্বোচ্চ স্তর। এটি শিলাস্তরের ওপর আচ্ছাদন হিসেবে অবস্থান করে।

(২) বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট : মৃত্তিকা দীর্ঘকালীন নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি হয়।

(৩) দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট : মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। একটি পরিণত মৃত্তিকা সৃষ্টি হতে কয়েক শত বছর থেকে কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

(৪) জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ : জৈব পদার্থ মৃত্তিকার একটি অপরিহার্য উপাদান। বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের মৃত্যুর পর তাদের দেহাবশেষ মৃত্তিকার সাথে যুক্ত হয়।

(৫) স্তরবিন্যাস : মৃত্তিকার মধ্যে একাধিক স্তর লক্ষ করা যায়। উল্লেখযােগ্য স্তরগুলি হল O, A, B, C, D মৃত্তিকার স্তরগুলির উল্লম্ব প্রস্থচ্ছেদ মৃত্তিকার পরিলেখ নামে পরিচিত।

(৬) উক্তিদের পুষ্টিমৌলস্খল : মৃত্তিকার মধ্যে থেকেই উদ্ভিদ তার প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন পুষ্টিমৌলগুলি গ্রহণ করে।

(৭) জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব সর্বাধিক : মৃত্তিকার উৎপত্তিতে জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব সর্বাধিক লক্ষ করা যায়।

(৮) অঞ্চলগত পার্থক্য : সৃষ্টির বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকের পার্থক্যের দরুণ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মৃত্তিকা গড়ে উঠতে দেখা যায়। যেমন-নিরক্ষীয় বৃষ্টিঅরণ্য অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা আবার নাতিশীতােয় সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলে পডসল মৃত্তিকা গড়ে উঠতে দেখা যায়।