মৃত্তিকার ধর্ম প্রধানত দুধরনের—[1] ভৌত ধর্ম এবং [2] রাসায়নিক ধর্ম।

[1] মৃত্তিকার ভৌত ধর্ম : মৃত্তিকার যেসব ধর্মগুলিকে চোখে দেখে চিহ্নিত করা যায় বা অনুভব করে বােঝা যায়, সেগুলিকে মৃত্তিকার ভৌত ধর্ম বলে। এগুলি হল一

  • মৃত্তিকার গ্রথন বা বুনন : মৃত্তিকার গ্রথন বা বুনন হল মৃত্তিকার ভৌত ধর্মগুলির মধ্যে অন্যতম। মৃত্তিকায় অবস্থিত বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি, বালি, কাকর, পলি প্রভৃতির আনুপাতিক হারের ওপর মৃত্তিকার গ্রথন বা বুনন নির্ভর করে। যেমন- বেলেমাটিতে বালিকণার পরিমাণ বেশি থাকে, এঁটেল মাটিতে কাদার পরিমাণ বেশি থাকে।

  • মৃত্তিকার গঠন বা কাঠামাে : মৃত্তিকায় অবস্থিত বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি, বালি, পলি প্রভৃতি পরস্পর সংযযাজিত হয়ে যে বিন্যাস প্রদর্শন করে, তাকে মৃত্তিকার গঠন বা কাঠামাে বলে।

  • মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা : মৃত্তিকার জল ধারণক্ষমতা এবং বায়ু চলাচলের ক্ষমতা নির্ভর করে এর সচ্ছিদ্রতার ওপর। মৃত্তিকা সচ্ছিদ্র হলে উদ্ভিদের শিকড় মাটির গভীর অংশ থেকে তার প্রয়ােজনীয় জল সংগ্রহ করতে পারে।

  • মৃত্তিকার বর্ণ : মৃত্তিকায় লােহার পরিমাণ বেশি হলে মৃত্তিকার রং লাল হয় (লােহিত মাটি), মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি হলে মৃত্তিকার রং কালাে হয় (চারনােজেম মাটি) এবং মৃত্তিকায় কোয়ার্টজ, চুনাপাথর ও খনিজ লবণের পরিমাণ বেশি হলে মৃত্তিকা ধূসর বর্ণের হয় (পডসল মাটি)।

  • মৃত্তিকার আর্দ্রতা : মৃত্তিকা গঠনকারী কণার মধ্যস্থিত জলের অবস্থানকে মৃত্তিকার আর্দ্রতা বলে। মৃত্তিকায় জলের অবস্থানের প্রধান উৎস হল বৃষ্টিপাত।

  • মৃত্তিকার ঢাল : মৃত্তিকার ঢাল কম হলে ওই স্থানে মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। অন্যদিকে, মৃত্তিকার ঢাল বেশি হলে ওইস্থানে মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবনের ফলে সৃষ্ট পদার্থসমূহ অন্যত্র অপসারিত হয়।

  • মৃত্তিকার জল ধারণক্ষমতা : একটি নির্দিষ্ট আয়তনের মৃত্তিকা যে পরিমাণ জল তার নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারে, সেই পরিমাণকে ওই মৃত্তিকার জল ধারণক্ষমতা বলে। বালি, পলি ও কাদা মাটির জল ধারণক্ষমতা আলাদা আলাদা।

  • মৃত্তিকার সংকোচন ও প্রসারণক্ষমতা : অধিক তাপমাত্রায় মৃত্তিকা সংকুচিত হয় আবার কম তাপমাত্রায় মৃত্তিকা প্রসারিত হয়। মৃত্তিকার সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে মৃত্তিকার রন্দ্রের সংখ্যা বাড়ে ও কমে।

  • মৃত্তিকার তাপমাত্রা : মৃত্তিকার তাপমাত্রার ওপর বীজের অঙ্কুরােদ্গম ও মৃত্তিকাস্থ জীবাণুদের বেঁচে থাকা প্রভৃতি নির্ভর করে। মৃত্তিকা পরিলেখের যত নীচের দিকে যাওয়া যায় তাপমাত্রা তত কমতে থাকে।

  • মৃত্তিকার বায়ু ও বায়ু চলাচল : মৃত্তিকার মধ্যস্থিত ফাঁকা স্থানগুলি জল বাদ দিয়ে বায়ু দ্বারা পূর্ণ থাকে। মৃত্তিকা থেকে বায়ুমণ্ডলে এবং বায়ুমণ্ডল থেকে মৃত্তিকায় বায়ুর চলনকে বায়ু চলাচল বলে।

[2] মৃত্তিকার রাসায়নিক ধর্ম : মৃত্তিকার যে সমস্ত গুণাগুণ কেবলমাত্র রাসায়নিক পরীক্ষার দ্বারা নিরূপণ বা নির্ণয় করা সম্ভব সেই সমস্ত গুণাগুণকে মৃত্তিকার রাসায়নিক ধর্ম বলা হয়। মৃত্তিকার প্রধান রাসায়নিক ধর্মগুলি হল (i) মৃত্তিকার আয়ন বিনিময় ক্ষমতা, (ii) মৃত্তিকার বিক্রিয়া, (iii) উদ্ভিদের পুষ্টিমৌল, (iv) জৈব পদার্থ ইত্যাদি। রাসায়নিক ধর্ম অনুসারে মৃত্তিকা তিন ধরনের হয়ে থাকে一

  • আম্লিক মৃত্তিকা : মৃত্তিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক ধর্ম অম্লত্ব। বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে মৃত্তিকার ওপরের স্তর থেকে দ্রবীভূত ক্যালশিয়াম মৃত্তিকার নীচের স্তরে চলে যায়। ফলে এরূপ মৃত্তিকার অল্পত্ব বৃদ্ধি পায়। আম্লিক মৃত্তিকায় হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বেশি হয় এবং মৃত্তিকার pH-এর মান 7-এর কম হয়।

  • ক্ষারকীয় মৃত্তিকা : ক্ষারকীয়তাও মৃত্তিকার অন্যতম রাসায়নিক ধর্ম। মৃত্তিকায় চুনজাতীয় পদার্থের পরিমাণ বেশি হলে মৃত্তিকার ক্ষারকীয়তা বৃদ্ধি পায়। ক্ষারীয় মৃত্তিকায় হাইড্রক্সিল আয়নের পরিমাণ বেশি হয় এবং মৃত্তিকার pH-এর মান 7-এর বেশি হয়।

  • প্রশমিত মৃত্তিকা : মৃত্তিকায় অম্লত্ব ও ক্ষারকীয়তার পরিমাণ সমান হলে সেই মৃত্তিকাকে প্রশমিত মৃত্তিকা বলে। প্রশমিত মৃত্তিকার pH-এর মান 7 হয়। কৃষিকাজের পক্ষে এরূপ মৃত্তিকা সর্বাধিক উপযােগী।