মাটির উর্বরতা হল মাটির বিশেষ এক গুণ যা অনুকূল অবস্থায় মাটিতে উপযুক্ত পরিমাণে যৌগিক পদার্থের পরিমাণ ও উদ্ভিদ উৎপাদন ক্ষমতাকে নির্দেশ করে। যে মৃত্তিকা থেকে উদ্ভিদ তার উৎপত্তি ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়ােজনীয় খাদ্যমৌল সহজে গ্রহণ করতে পারে তাকে উর্বর মৃত্তিকা বলে।
[1] মৃত্তিকার গভীরতা : মৃত্তিকার অভ্যন্তরে উদ্ভিদের মূল যতদূর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে, সেই স্তরগুলি পর্যন্ত অঞ্চলই মৃত্তিকার গভীরতার অন্তর্গত। সাধারণভাবে মৃত্তিকা অভ্যন্তরস্থ A ও B স্তর পর্যন্ত গভীরতায় উদ্ভিদের মূল বা শিকড় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। তাই মাটির গভীরতা মৃত্তিকার উর্বরতার ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
[2] মৃত্তিকার গ্রথন ও গঠন : মৃত্তিকার গ্রথন ও গঠন উদ্ভিদের শিকড়ের উৎপত্তি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কারণ এই গ্রথন ও গঠনের ওপরই নির্ভর করে মৃত্তিকার জল, বাতাস, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, সচ্ছিদ্রতা ইত্যাদি।
[3] মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা : মৃত্তিকা কণার মধ্যবর্তী স্থানকে বলে মৃত্তিকার রন্ধ্র। মৃত্তিকার এই রন্ধ্রে উদ্ভিদের জল ও পুষ্টি উপাদান থাকে যা উদ্ভিদ তার প্রয়ােজন মতাে গ্রহণ করে।
[4] মৃত্তিকার তাপমাত্রা : মৃত্তিকার বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হতে তাপমাত্রার প্রয়ােজন হয়। এই তাপমাত্রার প্রধান উৎস হল সূর্য। সূর্য ব্যতীত জৈব পদার্থের জারণ, বিশ্লেষণ সম্ভব নয়।
[5] মৃত্তিকার আদ্রতা : মৃত্তিকার আদ্রতা উদ্ভিদের পুষ্টিজোগানে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। মৃত্তিকার আদ্রর্তার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে উদ্ভিদের নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়ামের পরিমাণের যেমন বৃদ্ধি ঘটে তেমনি আবার কম আর্দ্রতায় উদ্ভিদ তার প্রয়ােজন মতাে ক্যালশিয়াম গ্রহণ করতে পারে।
[6] মৃত্তিকার বায়ু : মৃত্তিকার রন্ধ্রের অভ্যন্তরস্থ Co২ উদ্ভিদের মূল ও শিকড়কে এক বিশেষ পরিমাণে খাদ্য গ্রহণে সহযােগিতা করে। সম্পৃক্ত অক্সিজেন উদ্ভিদের মূল ও শিকড়ের কোষগুলির বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে। তাই মৃত্তিকার বায়ু মৃত্তিকার উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুবই প্রয়ােজনীয়।
[7] মৃত্তিকার জল : মৃত্তিকার রন্ধ্রগুলি অর্ধেকটা বায়ু দ্বারা এবং অর্ধেক জল দ্বারা পূর্ণ থাকে। জল মৃত্তিকার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মৃত্তিকাস্থ বিভিন্ন খাদ্য মৌলকে তরল করতে সমর্থ হয় এবং উদ্ভিদ ওই সকল তরল খাদ্যমৌল শিকড় ও মূল দ্বারা সহজে গ্রহণ করতে পারে।
[8] মৃত্তিকার নিবিড়তা ও কর্ষণ ব্যবস্থা : মৃত্তিকার নিবিড়তা একদিকে যেমন জল ও বাতাসের চলাচলকে ব্যাহত করে, তেমনিভাবে উদ্ভিদের মূল ও শিকড়ের মৃত্তিকার অভ্যন্তরে প্রবেশের পথকেও সঙ্কুচিত করে। এরূপ ক্ষেত্রে উদ্ভিদের সহজ খাদ্য গ্রহণে বাধার সৃষ্টি হয় ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস ঘটে। মৃত্তিকার নিবিড়তাকে তাই কর্ষণ ব্যবস্থার সাহায্যে জল ও বাতাসের অনুপ্রবেশে সহায়তা করলে মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং উদ্ভিদের সহজভাবে বৃদ্ধি ঘটে থাকে।
[9] মৃত্তিকার হ্মারকীয়তা ও অম্লত্ত্ব : মৃত্তিকার ক্ষারকীয়তা ও অম্লত্ব pH দ্বারা প্রকাশ করা হয়। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য pH-এর মান নিরপেক্ষ হলে তা উৎকৃষ্ট হয় কারণ এরূপ ক্ষেত্রে মৃত্তিকা অধিক ক্ষারীয় বা অধিক অম্লত্ত্ব থাকে না বলে উদ্ভিদ সহজেই তার খাদ্যমৌল সংগ্রহ করতে পারে। তবে কিছু কিছু উদ্ভিদ আবার অম্ন মৃত্তিকাতে ভালাে জন্মায়। তবে সাধারণভাবে দেখা গেছে যে pH 6.5-7.5 পর্যন্ত অবস্থায় অবস্থান করলে অধিক পরিমাণে উদ্ভিদ তাদের খাদ্যমৌল অতি সহজে সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়।
[10] মৃত্তিকার জৈব পদার্থ ও পুষ্টিমৌল : মৃত্তিকার জৈব পদার্থগুলি প্রধানত পাওয়া যায় মৃত্তিকায় পড়ে থাকা উদ্ভিদ, মৃত জীব-জীবাণুর দেহ হতে। এই জৈব পদার্থ মৃত্তিকাতে কলওয়েডের সৃষ্টি করে যা মৃত্তিকার পুষ্টি গঠনের সহায়ক। উদ্ভিদ মৃত্তিকাস্থ ওই জৈব পদার্থ গ্রহণ করে পুষ্টি লাভ করে থাকে। মৃত্তিকার পুষ্টি উপাদান মৃত্তিকার উর্বরতা এবং উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যেমন-নাইট্রোজেন, ফসফরাস ইত্যাদি।
Leave a comment