প্রশ্নঃ মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের সংজ্ঞা দাও। মূল আইনের ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা আছে কিনা তা যুক্তিসহকারে ব্যাখ্যা কর।
Define and distinguish between substantive law and procedural Law. Explain with reasons whether substantive law has any retrospective effect.
মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের সংজ্ঞা ও এদের মধ্যে পার্থক্যঃ যদিও বলা হয় যে, মূল আইন মানুষের অধিকার নির্ণয় করে আর পদ্ধতিগত আইন সে অধিকার প্রয়োগ করে তবুও এ দু’আইনের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট নয়। কারণ অনেক অধিকার যেমন মূল আইনের আওতাভুক্ত। তেমনি পদ্ধতিগত আইনের আওতাভুক্ত অনেক অধিকারও রয়েছে। যেমন, আপীল করার অধিকার, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সাক্ষ্যদানের অধিকার ইত্যাদি। মূল আইনের ন্যায় পদ্ধতিগত আইনও এ সকল ক্ষেত্রে অধিকার নির্ধারণ করে থাকে। এছাড়া প্রতিকার সংক্রান্ত সকল আইনই পদ্ধতির আওতাভুক্ত নয়। প্রতিকার নির্ধারণকারী বিধি-বিধান মূল আইনের অংশ হতে পারে।
আইন বিজ্ঞানী স্যামণ্ডের মতে, আইনের যে শাখা মামলার প্রণালী নির্ধারণ করে, তা হচ্ছে পদ্ধতিগত আইন। ইহা দেওয়ানী ও ফৌজদারী সকল মামলার ক্ষেত্রে হতে পারে। পদ্ধতিগত আইন ব্যতীত অন্য সকল আইনই মূল আইন। মূল আইন ন্যায়পরিচালনার অভীষ্ট লক্ষ্যের সহিত সংশ্লিষ্ট, আর পদ্ধতিগত আইন এ লক্ষ্য অর্জুনের উপায় ও প্রতিদানগুলোর সহিত সংশ্লিষ্ট। যেমন, কোন নির্দিষ্ট সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করার অধিকার আছে কিনা তা মূল আইনগত প্রশ্ন। সে লক্ষ্যে পৌঁছতে কোন্ আদালতে এবং কোন সময়ের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে তা পদ্ধতিগত আইনের প্রশ্ন। কোন্ কাজটি অন্যায় বা অবৈধ হবে তা নির্ধারণ করে মূল আইন; কিন্তু কিভাবে সে অন্যায়টি প্রমাণিত হবে তা পদ্ধতির ব্যাপার। প্রথমটি মামলার বিষয়বস্তু এবং পরেরটি এর প্রক্রিয়া সংক্রান্ত।
কোন নির্দিষ্ট অপরাধ আর্থিক দণ্ডে দণ্ডনীয় না কারাদণ্ডনীয় না কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় তা মূল আইন সংক্রান্ত প্রশ্ন। কিন্তু তা সংক্ষিপ্ত বিচারে বা অভিযোগ এনে নিয়মিত বিচারে দণ্ড দেয়া হবে তা পদ্ধতিগত আইনের প্রশ্ন। মৃত্যুদণ্ডের বিলোপ করা হলে তা মূল আইনের পরিবর্তন, কিন্তু ঋণের জন্য করাদণ্ডের বিলোপ পদ্ধতিগত আইনের পরিবর্তন। কেননা বিচার প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য শাস্তি প্রদান, কিন্তু ঋণের জন্য কারাদণ্ড দেয়ার উদ্দেশ্য তার ঋণ পরিশোধে বাধ্য করা। তাই দেখা যায় যে, মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য হচ্ছে এই যে, প্রথমটি অধিকার নির্ধারণ ও প্রতিকার এবং অপরটি ‘মামলার প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত। তবে স্যামণ্ডের মতে এ পার্থক্য শুধু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র; বাস্তব ক্ষেত্রে এর তেমন গুরুত্ব নেই। অনেক পদ্ধতিগত বিধিবিধান তাদের বাস্তব কার্যকারিতার দিক দিয়ে সম্পূর্ণভাবে না হলেও উল্লেখযোগ্যভাবে মূল আইনের বিধি বিধানের সমতুল্য।
মূল আইনের ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতাঃ মূল আইন যেহেতু মানুষের অধিকার নির্ণয় করে এবং কোন কাজটি অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ তা নির্ধারণ করে মূল আইন। কাজেই এ ধরণের আইন তৈরি করে বিগত সময়কাল হতে কার্যকর করা যায় না। কেননা কোন কাজ যদি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হয় তাহলে অপরাধী স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন তুলতে পারে এটা আগে জানলে উক্ত কাজটি সে করতো না। এছাড়া বিগত সময়কাল হতে কার্যকর গণ্য করে কাউক শাস্তিপ্রদান স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী তবে আইনে কাউকে সুবিধা প্রদান করা হলে তাই বিগত সময় হতে কার্যকর হিসেবে গণ্য করা যায়। যেমন, মাদক দ্রব্য চোরাচালানের জন্য যদি আইন করা হয় মৃত্যুদণ্ড তবে তা এটা একটি মূল আইন। ৫ বছর পর যদি সে আইন পরিবর্তন করে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান করা হয় তবে তা হবে মূল আইনের পরিবর্তন। এ পরিবর্তন যদি বিগত ২ বছর হতে কার্যকর করা হয় তবে অনেক অপরাধী সে সুবিধা পেতে পারে বিধায় তা গ্রহণযোগ্য, কিন্তু এর বিপরীতটা স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের স্বার্থে অগ্রহণযোগ্য।
Leave a comment