প্রশ্নঃ মূল্যের সংজ্ঞা দাও, 

অর্থবা, মূল্য কাকে বলে? 

ভূমিকাঃ মূল্যের আলােচনা দর্শনের একটি প্রধান আলােচ্য বিষয়। দার্শনিকরা তাই মূল্য নিয়ে ব্যাপক আলােচনা করেছেন। অনেকের মতে, এই মূল্যের ধারণাই বিজ্ঞানের সাথে দর্শনের পার্থক্য রচনা করেছে। বিজ্ঞানের কাজ আবিষ্কার করা। বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার মানুষের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ তা বিজ্ঞান নির্ণয় করে না। এটা নির্ণয় করে দর্শনের এই শাখা। সুতরাং আমরা বলতে পারি, দর্শনের যে বিশেষ শাখাটি মূল্যের স্বরূপ ও তাৎপর্য নিয়ে আলােচনা করে তাকে বলে মূল্যবিদ্যা।

মূল্যের সংজ্ঞাঃ দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে কোনােটাকে ভালাে, কোনােটাকে মন্দ, সুন্দর, কুৎসিত, অদ্ভুত, চমৎকার ইত্যাদি কথা বলে থাকি। যেমন- ফুলটি সুন্দর, নকশাটি চমক্কার ইত্যাদি অবধারণের মাধ্যমে কোন কিছুর গুণ বিচার করা হয়েছে। আর এ গুণ বিচারকেই মূল্য বলা হয়।

আক্ষরিক অর্থে মূল্যঃ আক্ষরিক অর্থে বিচার করলে মূল্য বলতে আমরা প্রধানত যােগ্যতা বা উৎকর্ষকেই বুঝে থাকি। এ অর্থে যে বস্তুর উপযােগিতা আছে এবং যা আমাদের তৃপ্তি সঞ্চার করতে সক্ষম তাকেই আমরা মূল্যবান বলে মনে করি। এ কারণেই বিভিন্ন বিষয়ের মূল্য নির্ধারণ করতে গিয়ে আমরা যােগ্যতা, উৎকর্ষ, গুণ, ভাল ও পূর্ণাঙ্গ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে থাকি। এবং এ শব্দগুলােকে ‘মূল্য’ শব্দটির সমার্থক বলে মনে করি।

প্রকৃত অর্থে মূল্যঃ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করলে মূল্য শব্দটির প্রকৃত অর্থ দাঁড়ায় বস্তু বা ব্যক্তির মূল্যাবধারণ বা মূল্য বিচার। এ জগতের বিভিন্ন বস্তু বা ব্যক্তিকে প্রধানত আমরা দু ভাবে দেখে থাকি। এক ব্যক্তি বা বস্তুর স্বরূপের বিবরণ দিয়ে আমরা তাদেরকে দেখি, এবং দুই. ব্যক্তি বা বস্তুর গুণ বিচারের মাধ্যমে আমরা তাদেরকে দেখি। দার্শনিকদের মতে, ব্যক্তি বা বস্তুর গুণ বিচার করতে গিয়েই আমরা তাদের ওপর শুভ-অশুভ, সুন্দর-কুৎসিত, ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা প্রভৃতি ধর্ম আরােপ করি। এভাবে বস্তুর গুণ বিচারকেই আমরা বস্তুর মূল্যায়ন বলে অভিহিত করে থাকি।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ 

মূল্যের সংজ্ঞায়নে দার্শনিক মিল বলেন, “যা আমাদের আনন্দ প্রদান করতে সক্ষম তাই মূল্য।”

অধ্যাপক নূরনবী মূল্যের সংজ্ঞা দিয়ে গিয়ে বলেন, “জাগতিক বস্তু বা ঘটনার যান্ত্রিক কাঠামাের আদর্শভিত্তিক বিচারই হলাে মূল্য।”

মূল্যের বৈশিষ্ট্যঃ বস্তত মূল্য শুধু অন্তর্নিহিত গুণ বা আদর্শের প্রকৃতি ও প্রকারভেদ সম্বন্ধেই আলােচনা করে না সেই সাথে জগৎ ও জীবনের মূল্যায়ন করে থাকে। এর কতকগুলাে বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন-

(ক) বস্তুর আদর্শগত বৈশিষ্ট্য মূল্য।

(খ) মূল্য বস্তুর গুণ নির্ধারণের বিষয়।

(গ) মূল্য বিষয় নির্ভর হলাে আংশিকভাবে ব্যক্তি নির্ভর

(ঘ) মূল্যের আমরা শুধু বর্ণনাই দেই না আমরা বস্তুর মূল্য বা মান নির্ণয় করি।

(ঙ) মূল্যের সর্বজনীন ও শাশ্বত একটি ভিত্তি রয়েছে।

পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মূল্যসম্পর্কিত দুটি মতবাদই চরম ও পরস্পরবিরােধী। প্রকতপক্ষে, মূল্যের দুটি দিক রয়েছে; একটি হল মূল্য অবধারণের কর্তা এবং অপরটি হল মূল্য অবধারণের বিষয়। এ দুয়ের সমাধানের মধ্যেই মলের অবস্থান। এর কোএকটিকে বাদ দিলে মূল্যের অস্তিত্ব থাকে না। দার্শনিক আলেকজান্ডারের মতে, মূল্য আগত এবং দলগত।