প্রশ্নঃ  মূল্যবোধের সাথে সুশাসনের সম্পর্ক আলোচনা কর।

অথবা,  মূল্যবোধ ও সুশাসনের সম্পর্ক বর্ণনা কর। 

ভূমিকাঃ পৌরনীতি ও সুশাসন সমাজ ও রাষ্ট্রের বিমূর্ত কিছু মৌল বিষয় বা ধারণা (concept) বা প্রত্যয় নিয়ে আলোচনা করে। এ বিমূর্ত বিষয় বা প্রত্যয় বা ধারণা হলো মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য। এগুলো একটির সাথে অন্যটি খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। সমাজজীবনে মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ড যে সকল নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের সমষ্টিকে সামাজিক মূল্যবোধ বলে। যে সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারণা যত বেশি উন্নত, সে সমাজ ও রাষ্ট্র তত বেশি উন্নত ও প্রগতিশীল। সুশাসনের সাথে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মূল্যবোধ ও সুশাসনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।

মূল্যবোধ ও সুশাসনের সম্পর্কঃ সমাজজীবনে মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচার ব্যবহার ও কর্মকাণ্ড যে সব নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের সমষ্টিকে মূল্যবোধ বলে। মূল্যবোধ হচ্ছে শিষ্টাচার, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, সৌজন্যবোধ প্রভৃতি সুকুমার বৃত্তি বা মানবীয় গুণাবলির সমষ্টি। মূল্যবোধের সাথে সুশাসনের যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে তা নিম্নরূপ আলোচনা করা হলোঃ 

১. সামাজিক ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলাবোধের উন্মেষঃ মূল্যবোধ সামাজিক ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলাবোধ-এর উন্মেষ ঘটায়। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও মূল্যবোধ রক্ষা পায়। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যক্তিস্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ। সমাজজীবনে অগ্রগতির প্রধান সোপান হলো শৃঙ্খলাবোধ। শৃঙ্খলাবোধ মানবিক মূল্যবোধগুলোকে সুদৃঢ় করে সমাজ জীবনকে উন্নতি ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। সামাজিক ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলাবোধ সুশাসনেরও বৈশিষ্ট্য এবং প্রয়োজনীয় উপাদান। যে সমাজ বা রাষ্ট্রে মূল্যবোধের এ দুটো উপাদান অনুপস্থিত সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।

২. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাঃ আইনের শাসন মূল্যবোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যক্তি তার সামাজিক মর্যাদা খুঁজে পাবে এবং অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে নিশ্চিত হবে। আইনের শাসন সুশাসনেরও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও আবশ্যকীয় উপাদান। আইনের শাসন না থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না।

৩. সামাজিক ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাঃ মূল্যবোধ সমাজজীবনকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে এবং সমাজজীবনে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে।

৪. নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করেঃ মূল্যবোধ মানুষের নৈতিক গুণাবলি জাগ্রত ও বিকশিত করে।

৫. কর্তব্যবোধ জাগ্রত করেঃ কর্তব্যবোধ মূল্যবোধের অন্যতম উপাদান। কর্তব্যবোধ না থাকলে সুশাসনও প্রতিষ্ঠিত হয় না। এজন্যই নাগরিক সচেতনতা ও কর্তব্যবোধকে নাগরিকের অন্যতম গুণ বলা হয়।

৬. সরকার ও রাষ্ট্রের জনকল্যাণমুখিতাঃ সরকার ও রাষ্ট্রের জনকল্যাণমুখিতাকে মূল্যবোধের যেমন উপাদন মনে করা হয় তেমনি তা সুশাসনেরও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান বা বৈশিষ্ট্য মনে করা হয়।

৭. জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করেঃ জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতাকে যেমন সুশাসনের বৈশিষ্ট্য বলে চিহ্নিত করা হয় তেমনি তা মূল্যবোধেরও আবশ্যকীয় উপাদান মনে করা হয়।

উপসংহারঃ উপরের আলোচনা থেকে এ কথা পরিস্কার যে, সুশাসন পেতে হলে মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এজন্যই বলা হয় ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মূল্যবোধ ও সুশাসনের সম্পর্ক খুবই নিবিড়।