ভূমিকাঃ সমাজজীবনে মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ড যে সকল নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের সমষ্টিকে সামাজিক মূল্যবোধ বলে। যে সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারণা যত বেশি উন্নত, সে সমাজ ও রাষ্ট্র তত বেশি উন্নত ও প্রগতিশীল। সুশাসনের সাথে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পর্ক খুবই নিবিড়।
মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Values): সামাজিক মূল্যবোধের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপঃ
১. সামাজিক মাপকাঠিঃ মানুষের কর্মকাণ্ডের ভালো-মন্দ বিচার করার ভিত্তিই হচ্ছে মূল্যবোধ। মূল্যবোধ মানুষের আচার-ব্যবহার, ধ্যান-ধারণা, চাল-চলন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করার মাপকাঠি স্বরূপ।
২. যোগসূত্র ও সেতুৰন্ধনঃ মূল্যবোধ সমাজের মানুষকে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করে। একই রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান ও আদর্শের ভিত্তিতে সমাজের সকলে পরস্পর মিলিত ও সংঘবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করে।
৩. নৈতিক প্রাধান্যঃ মূল্যবোধ আইন নয়। এর বিরোধিতা বেআইনি নয়। এটা মূলত একপ্রকার সামাজিক নৈতিকতা। মূল্যবোধের প্রতি সমাজে বসবাসকারী মানুষের শ্রদ্ধাবোধ আছে বলে মানুষ এটা মেনে চলে।
৪. বিভিন্নতাঃ মূল্যবোধ বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। দেশ, জাতি, সমাজ ও প্রকৃতিভেদে মূল্যবোধের পরিবর্তন হয় এবং স্থান, কাল, পাত্রভেদে মূল্যবোধের পার্থক্য সৃষ্টি হয়। যেমন-পাশ্চাত্য দেশে মেয়েরা যে পোশাক পরে আমাদের দেশে মেয়েদের জন্য সে পোশাক সমাজ কর্তৃক গ্রহণযোগ্য নয়।
৫. বৈচিত্র্যময়তা ও আপেক্ষিকতাঃ মূল্যবোধ বৈচিত্র্যময় ও আপেক্ষিক। আজ যা মূল্যবোধ বলে পরিগণিত, কাল তা সেভাবে বিবেচ্য নাও হতে পারে।
৬. পরিবর্তনশীলতা ও নৈর্ব্যক্তিকতাঃ মূল্যবোধের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর পরিবর্তনশীলতা। সমাজ নিয়ত পরিবর্তনশীল। আর এ পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজ অনুসৃত মূল্যবোধগুলোরও পরিবর্তন সাধিত হয়। অতীতের অনেক মূল্যবোধ বর্তমানে আমাদের কাছে অর্থহীন। যেমন- বাল্যবিবাহ ও সতীদাহ প্রথা। আবার বর্তমানের অনেক মূল্যবোধ ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে। মূল্যবোধ নৈর্ব্যক্তিক।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, মূল্যবোধ থেকে আসে আইন। আইন হচ্ছে নাগরিকদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কিছু বিধানের সমষ্টি যা রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক গৃহীত ও সমর্থিত এবং জনকল্যাণের জন্য অপরিহার্য। আইন স্বাধীনতার শর্ত ও প্রধান রক্ষাকবচ। আইন স্বাধীনতার রক্ষক।
Leave a comment