মুসলমান সম্পাদকদের সম্পাদিত ও পরিচালিত পত্রিকাগুলো নানা কারণে বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ইংরেজি শিক্ষার অনগ্রসরতা ও রাজনৈতিক কারণে বাংলা সাহিত্যে মুসলমান কবি সাহিত্যিকদের আগমন বিলম্বিত হয়েছিল। পরে মুসলমান লেখকরা জাতীয়, ঐতিহাসিক, ধর্মীয়, সামাজিক, শিক্ষাদীক্ষা সম্পর্কে তাদের লেখনীতে সচেতনতার পরিচয় দেন। মুসলমান লেখকদের এ প্রচেষ্টা বিভিন্ন পত্রপত্রিকাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছিল।

মুসলমান সম্পাদিত প্রথম সাময়িক পত্র শেখ আলীমুল্লাহ সম্পাদিত ‘সমাচার সভারাজেন্দ্র’ ১৮৩১ সালে প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি বাংলা-ফারসি দ্বিভাষিক। ১৮৭৪ সালে মীর মশাররফ হোসেনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘আজিজুন নেহার’। সম্পাদক পত্রিকাটি তাঁর প্রথমা স্ত্রীর নামে নামকরণ করেন। ‘আজিজুন নেহার’ পত্রিকার ভাষা ছিল অত্যন্ত মনোরম। ১৮৮৯ সালে শেখ আব্দুর রহিমের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় ‘সুধাকর’। স্বধর্ম ও স্বজাতির কল্যাণের জন্য পত্রিকাটিকে ঘিরে একদল মুসলমান লেখক লেখতে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ১৮৯১ সালে মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘ইসলাম প্রচারক’। এর উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দিক সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা। ইসলামের অতীত ইতিহাস এতে প্রতিফলিত হয়েছিল। ১৮৯২ সালে শেখ আব্দুর রহিমের সম্পাদনায় মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয় ‘মিহির’। সাহিত্য, বিজ্ঞান, পুরাবৃত্ত প্রভৃতি চর্চার দিকে পত্রিকাটির লক্ষ্য ছিল। ‘হাফেজ’ নামে আরেকটি মাসিক পত্রিকা শেখ আব্দুর রহিমের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। ইসলাম ধর্মের অতীত ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনাই ছিল পত্রিকাটির প্রধান উদ্দেশ্য। এস. কে. এম. রওশন আলীর সম্পাদনায় ১৮৯৮ সালে কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত হয় ‘কোহিনুর’ পত্রিকা। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি, জাতীয় উন্নতি প্রভৃতি প্রচারে পত্রিকাটি ব্রতী হয়েছিল। মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয় ‘লহরী’। এতে কেবল কবিতাই প্রকাশিত হতো। সৈয়দ এমদাদ আলীর সম্পাদনায় ১৯০৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘নবনূর’। এটি ছিল মুসলমান রচিত সবচেয়ে উন্নত পত্রিকা। পত্রিকাটির উদ্দেশ্য ছিল পতিত মুসলমানদের উন্নত ও উদ্ধার করা। শেখ ফজলুল করিমের সম্পাদনায় ১৯০৮ সালে রংপুর থেকে ‘বাসনা’ নামে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি হিন্দু-মুসলমান উভয় শ্রেণির লেখকই তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও সমাজ সম্পর্কে নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করতেন। মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ’র সম্পাদনায় ১৯১৫ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় ‘আল এসলাম’। পত্রিকাটিতে মুসলমানদের ধর্ম, ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃতি প্রভৃতি আলোচিত হতো। মুসলিম প্রগতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সম্পাদিত সওগাত পত্রিকা। ১৯২০ সালে মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকা। কাজী নজরুল ইসলামের কবিখ্যাতি এ পত্রিকার মাধ্যমেই। কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘ধূমকেতু’ ও ‘লাঙল’ পত্রিকা। যুগের উত্তাপ ও উত্তেজনা এ দুটি পত্রিকাকে ঘিরেই প্রকাশিত হতো। ঢাকার ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজে’র মুখপত্র হিসেবে ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘শিখা’। এ পত্রিকার মাধ্যমেই মুসলিম সাহিত্যিক গোষ্ঠী ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের সূত্রপাত করেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।