বাংলাদেশে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারের হাত থেকে ইসলাম ধর্মকে রক্ষা করা এবং মুসলমানদের তাদের ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাশীল করে তোলার জন্য উনিশ শতকে যে কজন ইসলাম দরদি ব্যক্তি কাজ করেছেন তাদের মধ্যে মুন্সী মেহেরুল্লাহ প্রধান। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে যশোর জেলার ছাতিয়ানতলা নামক গ্রামে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে মেহেরুল্লাহর জন্ম। বাল্যকালে পিতৃহীন হওয়ায় বোধোদয় পর্যন্ত পাঠ করেই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বাল্যকালে এক পর্যায়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তখন তার বয়স তেরো চৌদ্দ। সে সময় কয়ালখালি ও করচিয়া গ্রামের দু’জন উদার ব্যক্তির আশ্রয়ে তিনি আরবি’ ফারসি ভাষা শেখেন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে খোজারহাট নামক গ্রামে আসেন এবং উত্তমরূপে বাংলা শেখেন। অতঃপর জীবিকার জন্য দর্জিগিরিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। একদা তার দোকানের অনতিদূরে খ্রিষ্টান মিশনারির লোকেরা ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করছিল। ঘটনাটি তার মনে গভীরভাবে দাগ কাটে। তিনি খ্রিষ্টান মিশনারিদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কাজ করার সংকল্প গ্রহণ করেন এবং ইসলাম প্রচারে ব্রতী হন। এ সময়ে ‘সুধাকর’ পত্রিকাকে ঘিরে মুসলিম তরুণদের যে গোষ্ঠী গঠিত হয়েছিল, তিনি তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হন। ‘সুধাকর’ পত্রিকায় তিনি ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে লিখতে থাকেন। তার লেখা পড়ে পাদরি জন জমিরুদ্দীন পুনরায় ইসলাম ধর্মে ফিরে আসেন। তিনি ইসলাম ধর্মোত্তেজিকা নামে একটি সমিতি স্থাপন করেন। এতে কলকাতা থেকে আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন যশোরে আমন্ত্রণ করে আনেন। মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ মুসলমানদের খ্রিষ্টান হওয়া থেকে রক্ষা করা এবং ইসলাম ধর্ম প্রচার করাকে জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। এ কাজ করতে গিয়ে তিনি বেশকিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলো হলো:

১. খ্রিষ্টীয় ধর্মের অসারতা (১৮৮৭), ২. মেহেরুল ইসলাম (১৮৯৭), ৩. বিধবা গঞ্জনা (১৮৯৮), ৪. বিষাদ ভাণ্ডার (১৮৯৮), ৫. হিন্দুধর্ম রহস্য ও দেবলীলা (১৮৯৮), ৬. পন্দেনামা (১৯০৮), ৭. খ্রিষ্টান মুসলমান তর্কযুদ্ধ (১৯০৯)।