চণ্ডীমঙ্গল কাব্য গ্রন্থ উৎপত্তির কারণ অংশটি আশ্রয় করে মুকুন্দরামের সমাজ-সচেতনতার পরিচয় দাও।
অনেক মনীষীই আক্ষেপ করে বলেছেন বাংলা দেশ বা বাঙালীর কোনো ইতিহাস নেই। এটা অবশ্য বাস্তব সত্য যে, সেকালে বাঙালী বা ভারতবাসীর এ কালের অর্থে বিশেষ কোনো ইতিহাস-চেতনা ছিল না। একালে সাধারণত রাজা-রাজড়াদের ধারাবাহিক কাহিনীকে ইতিহাস বলা হয়। এই অর্থে প্রাচীন এবং মধ্যযুগের বাঙালীর যে কোনো ইতিহাস নেই—এই অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু ইতিহাস বলতে শুধু কি রাজা-রাজড়াদের কাহিনীই বোঝায়? যাদের নিয়ে দেশ গড়ে উঠেছে, সেই শতকরা নিরানব্বই জনকে বাদ দিয়ে শুধু ক’জন রাজা, নবাব বাদশা এবং তাদের আশপাশের লোকজনদের নিয়েই বা কেন হ’বে ইতিহাস? বস্তুত ইতিহাস বিষয়ে এই প্রচলিত ধারণার মধ্যে যে একটি মস্ত বড় ফাক রয়েছে, তা’ সাম্প্রতিক কালের সমাজবিজ্ঞানীদের চোখে ধরা পড়ে গেছে। তাই তারা আর রাজদরবারের কাহিনীকে ইতিহাস বলে মানেন না। দীর্ঘকাল ধরে যাদের বুকের ওপর দিয়ে সমাজরথের চাকা গড়গড়িয়ে চলে গেছে, দেশের সেই অধিকাংশ অবহেলিত উৎপীড়িত জনগণকেও এখন ইতিহাসের উপাদান বলে স্বীকার করা হয়; অতি সাধারণ লোকের সমষ্টিগত জীবনযাপন কাহিনীও আজ ইতিহাসের মর্যাদা লাভ করেছে। এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি বিচার করা যায়, তাহ’লে বাঙালীর ইতিহাস নেই, এই অভিযোগ আর যথার্থ বলে মনে হয় না। কারণ প্রাচীন এবং মধ্যযুগের সাহিত্যগুলি যদি খুঁটিয়ে পড়া যায় তবে তার মধ্যে তৎকালীন সমাজজীবনের একটি সুস্পষ্ট চিত্রকে ফুটিয়ে তোলা আর অসম্ভব বলে মনে হয় না। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে, বিশেষভাবে বিভিন্ন মঙ্গলকাব্যে আমরা সমসাময়িক বাঙালী জীবনের বিভিন্ন ধারারই পরিচয় পেতে পারি। এ বিষয়ে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত ‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্য’।
সাহিত্যকে বলা হয় জীবনের দর্পণ। এই জীবনী যেমন ব্যক্তিমানুষের হতে পারে, তেমনি সমাজেরও হতে পারে। কিন্তু যেহেতু ব্যক্তি মানুষও সমাজেরই সৃষ্টি তাই তার জীবন কাহিনীতেও সমাজজীবনের ছায়াপাত ঘটে। একালের সাহিত্যে ব্যক্তিজীবনই প্রাধান্য লাভ করে, কিন্তু প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্যে কবির ব্যক্তিজীবন একেবারেই উপেক্ষিত হ’তো—সেখানে প্রধান ভূমিকা ছিল সমাজের। তাই বাড়শ শতকের শেষভাগে অথবা সপ্তদশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে রচিত কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে’ আমরা তৎকালীন সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিকের সুন্দর পরিচয় লাভ করতে পারি।
মঙ্গলকাব্যগুলি কীভাবে সামাজিক জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত হ’য়ে পড়েছিল, তার একটি সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন ডঃ অরবিন্দু পোদ্দার। তিনি লিখেছেন : “মঙ্গলকাব্যের শক্তিমাহাত্ম্য প্রচারের সঙ্গে লৌকিক জীবনের কাহিনী অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশ্রিত রয়েছে, তাই বলা যায়, এদের ভাবাঝাশ অত্যক্ত বাস্তব। সেইকালে এবং স্থানে যে জীবন নিজেকে সৃষ্টি করেছিল এবং-যেভাবে সৃষ্টি করেছিল, কবির সরস জীবন দৃষ্টি তা-ই তার বর্ণনার রেখায় রেখায় তুলে ধরেছে। কবি চোখ দিয়ে যা দেখেছেন, হৃদয় দিয়ে যা অনুভব করেছেন, ব্যাপক জীবনবোধ দিয়ে যা বুঝেছেন, তা ই কাব্যে ভাষা পেয়েছে। প্রাত্যহিক জীবনের সুখদুঃখ আশা-নিরাশা ব্যথা এবং প্রচলিত জীবনের সামগ্রিক প্যাটার্ন ডাই অবশ্যভাবীরূপে কাহিনীর সঙ্গে রূপ পেয়েছে। এই সব বর্ণনা থেকে এবং সমস্ত খণ্ড খণ্ড চিত্রকে অবলম্বন করে মধ্যযুগের বাংলার সামাজিক জীবনের একটি অখণ্ড চিত্র সৃষ্টি করা চলে।…এই সব খণ্ড চিত্র এবং কাহিনীর ভিতর দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি সত্য, সামাজিক জীবনের সত্য।”
চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের সামাজিক পটভূমি অর্থাৎ সমকালীন গৌড়বঙ্গের মধ্যযুগ নানা অসঙ্গতি বিশৃঙ্খলার ছিল চিহ্নিত। একদিকে যেমন ছিল বৃহত্তর রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। নানাবিধ আভ্যস্তর গলদ, অন্যদিকে ছিল শ্রেণীগত বৈষম্য এবং তৎফলস্বরূপ অত্যাচার উৎপীড়নও। মুকুন্দ চক্রবর্তী গ্রন্থারম্ভেই একটি বৃহত্তর পটভূমিকায় অনুরূপ এমন একটি বিশ্বাস্য চিত্র কয়েকটি মাত্র রেখার মাধ্যমে এমন উজ্জ্বলরূপে ফুটিয়ে তুলেছেন, যার চেয়ে উৎকৃষ্টতর চিত্র কোনো ঐতিহাসিকের পক্ষেও অঙ্কন করা সম্ভবপর ছিল না।
রাজা মানসিংহ তখন গৌড়-বঙ্গ উৎকলাধিপতি। তার অধীনে ডিহিদার নিযুক্ত হলেন মামুদ শরীফ। রায়জাদা তাঁর উজীর, উভয়ে মিলে ব্যাপারীদের তাড়া লাগালেন, ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবের শত্রুতাচরণ শুরু করলেন জমির মাপ শুরু হ’ল কোণাকুণি, পনের কাঠায় কুড়ার হিশেব শুরু হ’ল, প্রজার নালিশ কেউ কানেও তোলে না। সরকারের শত্রুতায় অনুর্বর খিলভূমিকে লাল বা উর্বর বলে দেখানো হতে লাগলো। কর্মচারীরা ঘুষ খায়, কিন্তু কোনো উপকার সাধন করে না। এই সুযোগে পোদ্দাররাও যম হয়ে দাঁড়ালো টাকার বাট্টা নেয় আড়াই আনা আর টাকা প্রতি সুদ একপাই প্রতিদিন। ডিহিদার নিজে অবোধ, কিছুতেই খুশি হয় না— তার ফলে বাজারে কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেলো। এই আতঙ্কে প্রজারা যদি পালিয়ে যায়, এই আশঙ্কায় দরজায় দরজায় জানদার বসানো হ’ল। প্রজারা তখন বাধ্য হয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে যার যা’ সম্বল ছিল সব সস্তা দামে বিক্রি করে দিতে লাগলো। কবি মুকুন্দের তালুকদার গোপীনাথকে বন্দী করা হয়েছিল, ফলে শ্রীমস্ত খাঁ এবং গভীর খাঁর সঙ্গে শলাপরামর্শ ক’রে কবি মুকুন্দ এক রাত্রে স্ত্রী পুত্রের হাত ধরে রাস্তায় বের হ’লেন। পথে যেমন কেউ সমস্ত কিছু কেড়ে নিল, তেমনি আবার কেউ আশ্রয়ও দিল। এইভাবে দীর্ঘদিন পথ চলে তিনি অবশেষে ব্রাহ্মণভূমি আরডার অধিপতি বাঁকুড়া রায়ের নিকট স্থায়ী আশ্রয় লাভ করেন। সামস্ত রাজার নিকট কৃষক-প্রজার অথবা অত্যাচারী শাসকের নিকট শাসিতের এই ছিল ব্যবহার। এই ছবিরই আর একটি হুবহু অনুরূপ লক্ষ্য করা যায় বনের পশুদের কাতর ক্রন্দনে। ওখানে অত্যাচারী হ’ল শিকারী ব্যাধ কালকেতু আর অত্যাচারিত হ’ল বনের পশুকূল। অত্যাচারের স্বরূপ উভয়স্থলে এক। অত্যাচারিত পশুদের মুখে যে আর্তনাদ বেরিয়ে এসেছে, তা ডিহিদারের অত্যাচারে জর্জরিত মৃক প্রজাদেরই অব্যক্ত আকৃতির প্রতিধ্বনি মাত্র। তৎকালীন সমাজজীবনের এটি একটি মাত্র পার্শ্বচিত্র—সমগ্র সমাজব্যবস্থাই অনুরূপ ছিল মনে করলে ভুল করা হবে। দারিদ্র্য-কবলিত ক্ষুৎপীড়িত কালকেতু জীবিকার তাড়নায় বনের পশুদের ওপর ‘এমন অত্যাচার করলেও সে নিজে যখন প্রচুর ধনের অধিকারী হ’য়ে গুজরাটের রাজা হয়ে বসলো, তখন তাঁর প্রজাদের প্রতি তার ছিল আদর্শ ব্যবহার। অনুমান করা চলে, অনুরূপ কোনো একটি আদর্শ শাসনব্যবস্থা নিজের চোখে দেখেই কবিকঙ্কণ এই চিত্র অঙ্কন করেছিলেন।
কালকেতু নগর পত্তন করলেও প্রথমে সেখানে কোনো প্রজা আসেনি; পরে কলিঙ্গে প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা দেখা দিলে সেখানকার প্রজাদের বড় দুর্দশার সৃষ্টি হ’ল। অনেকেই সর্বস্ব হারালো, কিন্তু তাও হয়তো তারা সয়ে নিতো, কিন্তু তাদের ভয়–রাজা পাওনা ছাড়বেন না। বুলা মণ্ডল বলে–
‘মসীল করিবে রাজা দিয়া হাতে দড়ি।
প্রথম মাসেড়ে চাহি এক তেহাই কড়ি।।
এদেশে বসতি নাহি ঘর নদীকূলে।
হাজিবে সকল শসা বরিষণ কালে।।’
অতএব বুলান মণ্ডল কলিঙ্গের সব প্রজাদের নিয়ে এলো কালকেতুর গুজরাট নগরে সেখানে তাদের সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে কালকেতু বলে ‘তোমরা এখানে যার যতখানি ইচ্ছা, চায় কর, তিন বছর তোমাদের কোনো কর দিতে হ’বে না, প্রতি হালে এক টাকা করে দেবে— কাউকে ভয় করবার কারণ নেই, জমিদারের পাট্টা নিয়ে যার যার জমি চিহ্নিত করো। কাউকে কোনো বাড়তি সুদ দিতে হবে না এবং তোমাদের এখানে কোনো ডিহিদার দেওয়া হবে না। সেলামি, বাঁশগাড়ি প্রভৃতি কোনো উপলক্ষ্যেই গুজরাটে টাকাকড়ি নেওয়া হবে না। কোনো উপলক্ষ্যেই, কোনো কিছু উৎপাদনের জন্য কোনো কর লাগবে না। এ ধরনের আরো নানাপ্রকার সুযোগ-সুবিধার কথা কালকেতু ঘোষণা করলো। এখানে আমরা তৎকালীন সমাজব্যবস্থার একটি আদর্শ দিক দেখতে পেলাম) সামস্ততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাটিকে আমরা ‘হিতকারী স্বৈরতন্ত্র” (benevolent dictatatorship) বলতে পারি।
কালকেতুর গুজরাট নগর পত্তনে আমরা সমসাময়িক সমাজব্যবস্থার আরও একটি দিক লক্ষ্য করতে পারি। সেকালে এক একটি বৃহৎ নগর বা অঞ্চল ছিল স্বয়ম্ভর কোনো প্রয়োজনেই কাউকে অঞ্চলের বাইরে যেতে হতো না। এই কারণেই কালকেতু বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, বৃত্তি ও জীবিকার লোককেই গুজরাট নগরে বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছিল। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা চলে যে, অত্যাচারী ডিহিদার ধর্মে মুসলমান হলেও কবিকঙ্কণ কিন্তু মুসলমান সম্প্রদায় সম্বন্ধে বিদ্বেষপরায়ণ ছিলেন না। তাই গুজরাট নগরে নানা জাতির মুসলমানকেই সাদরে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং সাধারণভাবে মুসলমান সম্বন্ধে প্রশংসাসূচক উক্তি থেকে মনে হয়, সাম্প্রদায়িক সমস্যা হয়তো তখনো দেখা দেয়নি।
হরগৌরীর জীবনযাত্রা ভক্তের দৃষ্টিতে অলৌকিক কাহিনী হলেও চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে অঙ্কিত এই চিত্রটি সমাজবিজ্ঞানীর নিকট সমসাময়িক সামাজিক ইতিহাসের এক নিদর্শনরূপে গৃহীত হয়ে থাকে। কুলীনের ঘরে আট বৎসর বয়সের কন্যার বিবাহের জন্য দুশ্চিন্তা, বয়স্ক কুলীন বরেরও সমাদর, ঘরজামাই-রূপে কুলীন বরের প্রাথমিক আদর এবং ফলে মায়েঝিয়ে ঝগড়া প্রভৃতি ঘটনার মধ্য দিয়ে তৎকালীন মধ্যবিত্ত মানসিকতার অধিকারী অথচ দুঃস্থ এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের চিত্রটি বাঙালী সংসারের একটি বিশ্বস্ত আলেখ্য বলেই বিবেচিত হয়।
কালকেতুর কাহিনীতে আমরা তৎকালীন নিম্নবিত্ত এবং জাতিগতভাবেই নিম্নশ্রেণীর সমাজব্যবস্থার সুন্দর পরিচয় পেয়ে থাকি ব্যাধ জাতি বনেজলে শিকার ক’রে যে পশুপাখি পেতো, তার মাংস হাটে বাজারে বা গৃহস্থ ঘরে বিক্রি করে পরিবর্তে কচিৎ টাকাকড়ি এবং সাধারণত চাল-ডাল-নুন প্রভৃতির সংস্থান করতো। তৎকালে দ্রব্য বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল, ব্যাধ রমণীরাই অধিকাংশ সময় পশরা নিয়ে বের হতো। ব্যাধসন্তান কালকেতুর জন্ম থেকে বিবাহ পর্যন্ত যাবতীয় অনুষ্ঠানে উচ্চবর্ণোচিত আচারাদি, বিবাহে ঘটকালি প্রথা কিংবা শেষজীবনে কালকেতুর পিতামাতার কাশীবাস-মাদি ঘটনাগুলি তৎকালীন উচ্চবর্ণ হিন্দুসমাজে অবশ্যই প্রচলিত ছিল, তবে ব্যাধসমাজে এ ধরনের আচার-আচরণে আস্থা স্থাপন করা কষ্টকর।
ফুল্লরার বারমাস্যাতেও আমরা সমাজ জীবনের বেশ কিছু পরিচয় পাই। বৈশাথ ও কার্তিক মাস ছিল নিয়ম সেবার মাস-গৃহস্থগণ ঐ সময় নিরামিষ আহার গ্রহণ করতেন, আশ্বিন মাসে ঘরে ঘরে অম্বিকা পূজা হ’তো মেষ ও মহিষ বলি দিয়ে প্রসাদী মাংস সবাই পেতো। বর্ষায় গৃহস্থ ঘরেও খাদ্যের অকুলান হতো। শীতে দরিদ্রের সম্বল ছিল জানু-ভানু-কৃষানু” এবং সম্পন্ন গৃহস্থের তৈল তুলা তনুনপাৎ তাম্বুল-তপন।
কবি মুকুন্দ ছিলেন সাধারণ কৃষকপ্রজা এবং গ্রামীণ মানুষ, তাই অঙ্কিত সমাজচিত্রে গ্রাম্য সমাজব্যবস্থারই সার্থকতর প্রতিফলন ঘটেছে। সমাজ এবং জীবন সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল সুপ্রচুর মুকুন্দ কবিস্বভাব অনুযায়ী উদার মানবিকতাবোধ নিয়ে ঐ সমাজ ও জীবনের চিত্রই অঙ্কন করেছেন। এ বিষয়ে ডঃ ক্ষুদিরাম দাস মন্তব্য করেছেন “কবিকঙ্কণের সাহিত্যখ্যাতির সঙ্গে তাঁর সূক্ষ্ম সমাজবোধ যুক্ত। মধ্যযুগের সামস্ততান্ত্রিক সমাজের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় গ্রন্থনে কবিকঙ্কণের জুড়ি নেই। এদিক থেকে তিনি আধুনিক ঐতিহাসিক ও সমাজতত্ত্ব জিজ্ঞাসু পাঠককে আশাতীতভাবে পরিতৃপ্ত করেছেন। সমাজ-পরিচয় যেন আমরা কেবল বিবাহ, রন্ধন ও অলঙ্কার পরিধানের বিষয়ে আগ্রহ না বুঝি রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থা, উৎপাদন ও বণ্টন, কৃষি ও কৃষক, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কুটির শিল্প, কর নির্ধারণ ব্যবস্থা, জাতি-বর্ণ-বিভাগ প্রভৃতিই বিশেষভাবে গণনা করি। কবিকঙ্কণ বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনার উপলক্ষে এসবই আভাসিত অথবা পরিস্ফুট করেছেন। তিনি হয়তো কৃতসঙ্কল্প হ’য়ে রাষ্ট্রসমাজের পরিচয় নিতে লাগেন নি. সমাজ-অনুগামী কবিস্বভাব-বলেই সমাজ চিত্রাঙ্কন সিদ্ধ করেছেন। এজন্য তার বর্ণনা যেমন প্রাসঙ্গিক তেমনি অনায়াস হয়েছে।
Leave a comment