মীর মশাররফ হোসেন [১৮৪৭-১৯১২] বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের প্রথম উল্লেখযোগ্য মুসলিম লেখক। তিনি একাধারে কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, কবি ও নাট্যকার। উনিশ শতকের শেষ পর্যায়ে যেখানে মুসলমান সাহিত্যিকগণ ধর্মীয় বিষয়বস্তু অবলম্বনে সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন, সেখানে মীর মশাররফ হোসেন ধর্মীয় বিষয়ের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত না রেখে সাহিত্যশিল্প সৃষ্টির প্রতি মনোযোগী হন।

তিনি প্রায় ছাব্বিশটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস রত্নাবতী প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে। ‘বিষাদসিন্ধু’ তাঁর অন্যতম উপন্যাস এবং সাহিত্যকর্ম। নাটকের মধ্যে বিশিষ্ট নাটক ‘জমিদার দর্পণ’। প্রহসন রচনাতেও তাঁর মৌলিকতার স্বাক্ষর রয়েছে। ‘এর উপায় কি’; ‘ভাই ভাই এইতো চাই’; ‘ফাঁস কাগজ’ প্রভৃতি প্রহসনে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, অসাম্য, অন্ধবিশ্বাসকে বাস্তবতার সাথে তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রবন্ধ ‘গো-জীবন’; ‘মুসলমানের বাংলা শিক্ষা’; ‘আমার জীবনী’; ‘হযরত ইউসোফ’ প্রভৃতি যৌক্তিক বক্তব্য ও মন্তব্যপ্রধান রচনা। তাঁর গদ্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিভিন্নজন বিভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেছেন। ১২৯৩ সনের ‘ভারতী’ পত্রিকার ফাল্গুন সংখ্যায় তাঁর ‘বিষাদসিন্ধু’ উপন্যাসের গদ্য সম্পর্কে যে মন্তব্য ছিল, তা এ রকম, “ইহার বাঙ্গালা যেমন পরিষ্কার, ঘটনাগুলো যেমন পরিস্ফুট, নায়ক নায়িকার চিত্রও ইহাতে তেমনি সুন্দরভাবে চিত্রিত হইয়াছে।… ইতিপূর্বে একজন মুসলমানের এত পরিপাটী বাঙ্গালা রচনা আর দেখিয়াছি বলিয়া মনে হয় না।” তাঁর গদ্য সম্পর্কে স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র মন্তব্য করেছেন, “তাঁহার রচনার ন্যায় বিশুদ্ধ বাঙ্গালা অনেক হিন্দুতে লিখিতে পারে না।” আধুনিক বাঙালিমুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ মীর মশাররফ হোসেন। তিনি উনিশ শতকের একজন শক্তিমান বাংলা গদ্যশিল্পী। তাঁর গদ্য বলিষ্ঠ এবং সুখপাঠ্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।