সূচনা: আকবরের সুল ই-কুল আদর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে নানা প্রভাব কাজ করেছিল। এক্ষেত্রে পারিবারিক প্রভাব ছাড়াও আকবরের ওপর নানা প্রভাব পড়ে।

[1] উদার ধর্মসহিষ্ণু পরিবেশের প্রভাব: আকবর যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই সময়ে ভারতে উদার ও ধর্মসহিষ্ণু পরিবেশ বিরাজমান ছিল।ইতিপূর্বে সুফি ও ভক্তিবাদী সাধকদের উদার ধর্মপ্রচার এই পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করেছিল। এই পরিবেশ আকবরের অন্তরে উদারতার বীজ বপন করে।

[2] উদার ধর্মীয় পরিবারের প্রভাব: আকবর ধর্মীয় দিক থেকে উদার এক পরিবারে জন্ম নেন। আকবরের পিতা হুমায়ুন এবং পিতামহ বাবর ছিলেন সুন্নী সম্প্রদায়ভুক্ত, আর মাতা হামিদা বানু বেগম ছিলেন পারস্যের উদারমনা সিয়া মৌলবি মির বাবাদোস্ত এর কন্যা। আকবরের পিতা ও মাতা উভয়েই ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত ছিলেন, যার প্রভাব পড়েছিল আকবরের ওপর।

[3] গৃহশিক্ষকের প্রভাব: আকবরের গৃহশিক্ষক ছিলেন মির আবদুল লতিফ, যিনি শৈশবেই আকবরের মনে ধর্মীয় উদারতার বীজ বুনে দেন। শিক্ষাদানের সুযােগে তিনি আকবরকে সর্বজনীন শান্তি ও সহিষ্ণুতার আদর্শে দীক্ষিত করেন।

[4] পণ্ডিত ও ধর্মজ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে: আকবর শৈশব থেকেই বিভিন্ন যােগী, সাধুসন্ত ও ফকিরদের সান্নিধ্য লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি শেখ মুবারকের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পান। এ ছাড়াও মুবারকের দুই পুত্র আবুল ফজল ও ফৈজির সঙ্গেও আকবরের গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সকলের সম্মিলিত প্রভাবে তিনি উদার ও সহিষ্ণু হয়ে ওঠেন।

[5] রাজপুত মহিষীদের প্রভাব: আকবরের সুল-ই-কুল আদর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজপুত মহিষীদের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। এঁদের ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার-আচরণ প্রভৃতি আকবরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ক্রমশ আকবর হিন্দুদের ধর্মীয় আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

[6] রাজনৈতিক উদ্দেশ্য: ভিনসেন্ট স্মিথ, পার্সিভ্যাল স্পিয়ার, জন রিচার্ডস প্রমুখ মনে করেন যে, আকবর রাজনৈতিক কারণে সুলইকুল আদর্শ গ্রহণ করেছিলেন। এঁদের ধারণায় আকবর সঠিকভাবেই অনুধাবন করেছিলেন যে, মােগল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সমর্থন প্রয়ােজন।