একটি কালো কিশোরী মেয়ে তার নিজের মুখে তার ব্যর্থ প্রেমজীবনের কাহিনি শুনিয়েছে। তার প্রথম প্রেমের বেণী অর্থাৎ বাঁশি যে বাজিয়েছে, সেই বেণীমাধবকে উদ্দেশ্য করেই কালো সেই তরুণী তার জীবনের দুঃখের কথা বলে গেছে। একদিন সে বেণীমাধবকে বলেছিল, যে সে তার বাড়ি যাবে। তারপর অনেক দিন কেটে গেছে। মেয়েটি জানতে চেয়েছে, বেণীমাধব আর তার কথা ভাবে কিনা। তমাল তরুর মূলে একদিন বেণীমাধব অর্থাৎ কৃষ্ণ প্রেমের বাঁশি বাজিয়েছিলেন। আর মেয়েটির সেদিনের কৃষ্ণ বেণীমাধব যে প্রেমের বাঁশি বাজিয়েছিল, মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়ের ছোট্ট ক্লাসঘরের ডেস্কে বসে অঙ্ক করতে করতে মেয়েটি তা শুনেছিল, শ্রেণিকক্ষের বাইরে দিদিমণি তার বরের পাশে বসেছিল। মেয়েটি তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। ফ্রক ছেড়ে শাড়ি ধরেছে তখন সবে সে। বান্ধবী সুলেখাদের বাড়িতেই তার সঙ্গে আলাপ হল বেণীমাধরের। আর সেখান থেকেই তার মনে পূর্বরাগের সঞ্চার হয়।
পূর্বরাগের পর অনুরাগ। বেণীমাধব ছিল লেখাপড়ায় ভালো। শহর থেকে সে বেড়াতে এসেছিল গ্রামে। মেয়েটি ছিল কালো। বেণীমাধবকে দেখে লজ্জায় এক দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিল ঘরে। তার বাবা সামান্য এক দোকানে কাজ করতো। তাদের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। তাই তার শঙ্কা ও লজ্জা। কিন্তু প্রেম যে লজ্জা ও শঙ্কা, কোনো কিছুকেই বেঁধে রাখতে পারে না। প্রেমের বনে মুকুল যখন ফোটে, ভ্রমর যে তখন গুনগুনিয়ে ওঠে। তখন প্রিয়তম ছাড়া কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না। সন্ধেবেলা পড়তে বসে একের পর এক অঙ্ক ভুল করে চলে। নবম শ্রেণির ষোলো বছরের সেই তরুণীর পক্ষে প্রেমের রোমাঞ্চকর পরিস্থিতিকে অবহেলা করা সম্ভব হয় না। তখন প্রিয়তমাকে দেখার মধ্যে যে কি সুখ ! ব্রীজের ধারে লুকিয়ে দেখে বেণীমাধবকে।
অনুরাগের পর আক্ষেপানুরাগ। অনেকদিন কেটে গেছে। শহরের ছেলে বেণীমাধব শহরে ফিরে গেছে। মেয়েটি কিন্তু তার প্রথম প্রেমের ফুলকে যত্ন করে বুকে ধরে রেখেছে। বেণীমাধবের কাছে মেয়েটি জানতে চেয়েছে, সত্যি করে বেণীমাধব যেন তাকে বলে, পুরানো সেইসব স্মৃতি তার কি এখনও মনে পড়ে না? বেণীমাধব কি তার প্রেমিকাকে সেইসব কথা বলেছে? মেয়েটি কেবল একটি দিন আলোর নীচে বেণীমাধবের পাশে তার প্রেমিকাকে দেখেছিল, সঙ্গে সঙ্গে তার হৃদয়ে তালগোল পাকিয়ে গেল সব। মেয়েটির স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, ওদের দু’জনকে ভালো মানিয়েছিল। ওদের দেখে একদিকে তার চোখ যেমন জুড়িয়েছিল, তেমনই আবার মনের জ্বালায় চোখের পাতা ভিজেও গিয়েছিল। বুক ভরা আক্ষেপ আর ব্যর্থ প্রেমের স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে বলেছিল, ওরা ভালো থাকুক, সুখে থাকুক।
আক্ষেপানুরাগের পর বিরহ। বৈশ্বব কবিদের মতো প্রেমের সবকটি অবস্থাই এ কবিতায় ধরা পড়েছে। মেয়েটি এখন রাতে একা একতলার ঘরে ঘুমোতে যায়। মেঝের উপর বিছানা পাতা থাকে। বিছানার উপর জ্যোৎস্নার আলো এসে পড়ে। তার যে ছোটোবোন ছিল সে যৌবনের উন্মাদনায় তাদের ছেড়ে কোথায় কার সঙ্গে চলে গেছে। তার বোনের ঠিকানা এখন সে জানে না। বোনটি তার এখন হয়তো সুখে আছে। কিন্তু ভবিষ্যতে সুখে থাকবে কিনা জানে না। তার কালের ঘরে অমঙ্গলের দেবতা শনি বিরাজ করছে। সে এখন এই পাড়ার সেলাই দিদিমণি হয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছে। প্রথম প্রণয়ের স্মৃতিকে ভুলতে পারছে না কিছুতে। বেণীমাধবকে উদ্দেশ্য করে বলছে, প্রতিশোধের আগুনে সেও যদি এমনইভাবে ধ্বংস হয়ে যায় ? বোনের মতো সেও যদি নষ্ট মেয়ে হয়ে যায়। তবে বেণীমাধব কি দুঃখ পাবে না ?
Leave a comment