মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬) রবীন্দ্র সমকালীন তথা রবীন্দ্রোত্তর পর্বের যে কজন লেখকের কথা স্মরণ করা সম্ভব হয়েছে, তাদের চেয়ে বহু বহুগুণ বেশি রয়েছেন অনুল্লিখিত। জীবনে বিস্তার, বৈচিত্র্য ও জটিলতার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে যে অমেয় রচনা পরিমাণ সঞ্চিত হয়েছে, তার আনুপূর্বিক তালিকা রচনা করে উঠাও অসাধ্য না হোক, দুঃসাধ্য সাধন। আর বর্তমান প্রচেষ্টা তো সংক্ষেপে বাংলা সাহিত্যের পূর্বাপর গতিরেখাটিকে বিশেষ দৃষ্টিকোণের প্রেক্ষিতে ধরে দেখার চেষ্টা। সে দিশারি আলোটির সীমানার যতটুকু ধরা পড়েছে, তার ও মধ্যে কেবল মোটা দিক চিহ্নগুলো অবলম্বন করে চলাতেই বর্তমান আলোচনা সীমাবদ্ধ। সে হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বাংলা কথাসাহিত্যের এক সাম্প্রতিক দিগন্ত চোখে পড়ে। কল্লোলের শিল্পীরা কালবাহিত যে অবক্ষয়ী পীড়নের অভিঘাতে অবদমিত, বিশশতকীয় বিনষ্টি চেতনার শিকার সে হতাশা, ইন্দ্রিয়মন্থন এবং আত্মকর্ষণের আমূল উচ্ছ্বাস হতে জীবনের গভীরে উত্তরণের সাধনা তার। কল্লোলের শিল্পীরা অনেকেই মধ্যবিত্ত বিচ্ছিন্নতাবোধে পীড়াক্রান্ত, তাদের মুখ্য যন্ত্রণা বহমান জীবনধারার সংসর্গচ্যুতি। তাই তাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি পুথিপড়া মনের তাত্ত্বিক সংস্কার কিংবা বিদেশি সাহিত্যাদর্শের হাতে সংগৃহীত দান।

‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর শিল্পীরা বৈজ্ঞানিক, মেজাজের ধূয়ো তুলে আধুনিকতার দাবিতে মুখর হয়েছিলেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল নালিশ ছিল-বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে সাহিন একেবারেই রচিত হচ্ছে না। তারই প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্সি কলেজের স্নাতক শ্রেণির অঙ্কের ছাত্র প্রবোধকুমার হঠাৎ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছদ্মনামে গল্পের লেখনী ধরলেন, প্রথম গল্প অতসীমানী, বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। নতুন নামটি আসলে ছিল শিল্পীর পরিবার মহলে ব্যবহৃত।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।