(খ) নিম্নলিখিত বক্তব্যগুলো মানহানিমূলক কিনা তা যুক্তি সহকারে ব্যক্ত করঃ
(i) মোকদ্দমাটিতে ‘ক’ যা দাবি করল, তা আমি বিশ্বাস করি না কারণ আমি জানি সে সত্যবাদী লোক নয়।”
(ii) ‘খ’ কর্তৃক প্রকাশিত একটি বই সম্পর্কে ‘ক’ বলল : ‘খ’-এর বইটি অশ্লীল, ‘খ’ নিশ্চয়ই একজন নোংরা মনের ব্যক্তি”।
উত্তরঃ (ক) মানহানির উপাদানঃ বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি মৌখিক কথা দ্বারা বা লিখিত কথা কিংবা চিহ্ন কিংবা দৃশ্যমান কোন বক্তব্য দ্বারা কারো সম্পর্কে নিন্দার সৃষ্টি করে বা প্রকাশ করে এই অভিপ্রায়ে যে, এদ্বারা ঐ ব্যক্তির সুনাম ক্ষুণ্ন হবে অথবা জানে কিংবা বিশ্বাস করার কারণ আছে যে, ঐ বক্তব্য দ্বারা ঐ ব্যক্তির সুনাম ক্ষুন্ন হবে, তাহলে বর্ণিত ব্যতিক্রম সাপেক্ষে বলা যায় যে, ঐ ব্যক্তির মানহানি করেছে।
এই ধারায় ৪টি ব্যাখ্যা সংযোজিত হয়েছে। এগুলি নিম্নরূপ-
প্রথম ব্যাখ্যা, কোন মৃত ব্যক্তিকে নিন্দা করা হলেও তা মানহানির পর্যায়ে পড়বে, যদি এরূপ নিন্দাবাদ এরূপ হয় যে, এটা তার জীবদ্দশায় তার মানহানি ঘটতো এবং সেই মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজন বা আত্মীয় স্বজনের মনে পীড়া দেয়ার উদ্দেশ্যে এরূপ ঘটনা আরোপ করা হয়ে থাকে।
দ্বিতীয় ব্যাখ্যা, কোন কোম্পানী, সমিতি বা ব্যক্তি বর্গের সমাবেশ সম্পর্কে ও নিন্দাসূচক উক্তি প্রকাশের মাধ্যমে মানহানি করা যায়।
তৃতীয় ব্যাখ্যা, তৃতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, বিকল্পরূপে বা ব্যাঙ্গাত্মকভাবে মানহানি করা যায়।
চতুর্থ ব্যাখ্যা, কোন নিন্দাসূচক উক্তি এমন কোন ব্যক্তির সুনাম নষ্ট করে বলে গণ্য হবে না, যদি না তা অন্য ব্যক্তির দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উক্ত ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র, বুদ্ধিমত্তা বা উক্ত ব্যক্তির বর্ণ বা পেশা সম্পর্কিত গুণাবলী সম্পর্কে হেয় ভাব সৃষ্টি না করে।
উপাদানঃ মানহানির উক্ত সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে এই অপরাধের নিম্নোক্ত উপাদানগুলি পরিলক্ষিত হয়ঃ-
(১) অভিযুক্ত ব্যক্তি মৌখিক কথা দ্বারা বা পাঠের জন্য অভিপ্রেত লেখার দ্বারা কিংবা চিহ্নের দ্বারা অথবা দৃশ্যমান বস্তু বা প্রতীক দ্বারা নিন্দার মাধ্যমে বাদী বা অভিযোগকারীর সুনাম ক্ষুন্ন হওয়া;
(২) অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক এরূপ নিন্দাবাদের কারণে অভিযোগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া;
(৩) অভিযোগকারী সম্পর্কে এরূপ নিন্দা বা কুৎসা প্রণয়ন বা প্রকাশ করা; এবং
(৪) প্রকাশ্যভাবে বা পরোক্ষভাবে এরূপ কুৎসা এই ধারায় বর্ণিত সংজ্ঞানুসারে মানহানির পর্যায়ে পড়ে।
(খ) (i)উত্তরঃ মোকদ্দমাটি ‘ক’ যা দাবি করল, তা আমি বিশ্বাস করি না কারণ আমি সে সত্যবাদী লোক নই। এ বক্তব্য যদি বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে করা হয় তাহলে তা মানহানিমূলক বলে গণ্য হবে না, কেননা, বিচারিক কার্যে প্রদত্ত বক্তব্য মানহানির ব্যতিক্রম।
(ii) উত্তরঃ ‘খ’ কর্তৃক প্রকাশিত একটি বই সম্পর্কে ‘ক’ বলল ‘খ’ এর বইটি অশ্লীল, ‘খ’ নিশ্চয়ই একজন নোংরা মনের ব্যক্তি। এ উক্তি দ্বারা সমাজে তাকে হেয় করা হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে মানহানির মামলা করা যায়।
Leave a comment