শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে বার্ধক্য পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের আবির্ভাবকে বলা হয় তার জীবন বিকাশের পর্যায়।
রুশাে, জোনস, পিকুনাস প্রমুখ বহু বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মনােবিজ্ঞানী আপন আপন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিশুর জীবন বিকাশের ধারাকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করেছেন। রুশাে তাঁর এমিল গ্রন্থে জীবন বিকাশের ধারাকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। যথা一
(১) শৈশব: জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কাল।
(২) বাল্য: পাঁচ থেকে বারাে বছর বয়সকাল।
(৩) কৈশোর: বারাে থেকে পনেরাে বছর বয়সকাল।
(৪) যৌবন: পনেরাে থেকে কুড়ি বছর বয়সকাল।
আবার, আর্নেস্ট জোন্স শিশুর জীবনবিকাশের ধারাকে একটু অন্যভাবে চারটি পর্যায়ে ভাগ করেন। যথা一
(১) শৈশবকাল: শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে পাঁচ বছর বয়সকাল।
(২) বাল্যকাল: পাঁচ বছর বয়স থেকে বারো বছর বয়সকাল।
(৩) কৈশোর বা বয়সন্ধির কাল: বারো বছর বয়স থেকে আঠারাে বছর বয়সকাল।
(৪) পূর্ণবয়স্ককাল: আঠারাে বছর বয়স থেকে মৃত্যু পর্যন্ত।
শিশুর জীবনের সমস্ত দিকই জীবন বিকাশের পর্যায়গুলিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। এই পর্যায়গুলির গুরুত্ব সম্পর্কে নীচে আলােচনা করা হল-
(১) জীবনের চাহিদা সঠিকভাবে অনুধাবন: শিশুর জীবনবিকাশের পর্যায়কে ভিত্তি করে কেবলমাত্র শিক্ষাই নয়, জীবনের সমস্ত দিকই আবর্তিত হয়। এর কারণ, বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে শিশুর চাহিদার পরিবর্তন হয়। আর সেই পরিবর্তিত চাহিদা অনুযায়ী শিশুর উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তােলা প্রয়ােজন৷ শিশু মিথস্ক্রিয়ার দ্বারা একটি পর্যায়ে অভিযােজিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হয়। বিকাশের প্রতিটি পর্যায়কে সার্থক করে তুলতে এবং পরবর্তী স্তরের বিকাশকে সফল করে তুলতে প্রতিটি পর্যায়কেই যথাযথ গুরুত্ব দিতে হয়।
(২) শিক্ষায় উপযুক্ত প্রয়োগ: শিক্ষার ক্ষেত্রে বিকাশের পর্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক শিক্ষা হল শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ। শিক্ষার এই লক্ষ্যকে সার্থক করে তুলতে বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ের বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন প্রয়ােজন। বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়ােজন অনুসারে পর্যায়ভিত্তিক শিক্ষা পরিকল্পনা করা দরকার। একেই আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা পরিকল্পনা বলি।
(৩) বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার প্রয়োগ: শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পাঠক্রম প্রণয়ন, শিক্ষাপদ্ধতি নির্দিষ্ট করা, মূল্যায়নের কৌশল ব্যবহার প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই দেখা যায়, শৈশবকালে অর্থাৎ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অনেক পার্থক্য আছে। একইভাবে পাঠক্রমের বিষয় ও শিখন অভিজ্ঞতা চয়নের অন্যতম ভিত্তি হল শিক্ষার্থীর চাহিদা যা বিকাশের স্তরের ওপর নির্ভরশীল। মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও বিকাশের পর্যায়ের সঙ্গে সংগতি রেখে মূল্যায়নের কৌশল ব্যবহারের কথা বলা হয়। শৈশব ও প্রাক্বাল্যকালে পর্যবেক্ষণ, মৌখিক পরীক্ষা, কেস্টাডি ইত্যাদি ব্যবহারের কথা বলা হয়। অন্যদিকে প্রান্তীয় বাল্যকাল থেকে অভীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা ইত্যাদির ব্যবহার সমর্থনযােগ্য।
ওপরের আলােচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানসম্মত এবং বাস্তবধর্মী করে তুলতে গেলে জীবনবিকাশের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকা বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়।
Leave a comment