আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে বরণ বা বিদায় জানানাের জন্যে যে সম্মাননাপত্র রচনা করা হয়, তাকে মানপত্র বলে। মানপত্র সাধারণত সামাজিক, আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রচুর দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে পাঠ করে সংবধেয় ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়। মানপত্রের ভাষা পরিশীলিত ও সমৃদ্ধ হতে হয়। এতে সংবর্ধেয় ব্যক্তির কর্মকৃতি, ব্যক্তিত্ব, ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্য, পাণ্ডিত্য, শিক্ষা ও দক্ষতা ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। তাই বিভিন্ন উপশিরোনাম দিয়ে তাঁর বৈশিষ্ট্য, অবদান প্রভৃতিকে নানা বিশেষণে অভিষিক্ত করতে হয়। মানপত্র সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখে বা ছাপিয়ে, অলংকৃত এবং বাঁধাই করে দেওয়াই নিয়ম।

‘সংবর্ধনা’ শব্দের প্রকৃত অর্থ সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা, সসম্মানে অভ্যর্থনা। তাই সংবর্ধেয় ব্যক্তির সম্মান যাতে বৃদ্ধি পায় , তার জন্য সুশোভন শব্দ ব্যবহার করা উচিত। গুণী ব্যক্তির আগমন বা তাঁর মহৎ ভূমিকা, অবদানের স্বীকৃতিকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোই মূলত এ ধরনের মানপত্র রচনার লক্ষ্য।

নিচে দুটি মানপত্রের নমুনা দেখানো হলো:

১. এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে মানপত্র

বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের

২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে

মানপত্র

হে বিদায়ী অগ্রজবৃন্দ

যেপথ একদিন তোমাদের নিয়ে এসেছিল এই বিদ্যালয়ের সবুজ আঙিনায়, আজ সেই পথই আবার তোমাদের ডাক দিয়েছে: কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত!’ হৃদয়-বীণায় তাই আজ বাজছে বিদায়ের করুণ সুর। শুভ হোক তোমাদের ভবিষ্যতের পথচলা। তোমরা আমাদের প্রীতি ও শ্রদ্ধা গ্রহণ করো।

হে অগ্রজ সতীর্থবৃন্দ

এই বিদ্যালয়ে তোমাদের কেটেছে স্মৃতিময়, প্রীতিময় অনেক দিন। তোমাদের প্রাণোচ্ছল পদভারে এই বিদ্যালয়ের আঙিনা ছিল মুখরিত। তোমাদের সাহচর্যে আমরাও নানাভাবে উপকৃত হয়েছি, সমৃদ্ধ হয়েছি। তোমাদের সঙ্গে আমাদের স্নেহসিক্ত প্রীতিময় বন্ধন যেন অটুট থাকে আজীবন। এই বিদায় আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। একবার এই বিদ্যাময়ীর স্নেহতলে আশ্রয় নিলে তিনি কখনও কাউকে মন থেকে বিদায় দেন না। তোমরা শিক্ষাজীবনের এক স্তর থেকে আরেক স্তরে উন্নীত হতে যাচ্ছ, যে জন্য তোমাদের অভিনন্দন। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় তোমাদের সাফল্য কামনা করি।

হে অগ্রপথিকবৃন্দ

নবজীবনের আহ্বানে, আলোকিত জীবনের সন্ধানে তোমরা এগিয়ে যাচ্ছ নবদিগন্তের দিকে। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশের দুঃখ, দারিদ্র ও অন্ধকার ঘুচিয়ে তোমরা গড়ে তুলবে সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ-এ আমাদের প্রত্যাশা। তোমরাই আনবে সোনালি উষার আলোকিত দিন।

তোমাদের নতুন অভিযাত্রা সফল হোক।

তারিখ: ২৩ জানুয়ারি ২০২১

তোমাদের প্রীতিধন্য অনুজবৃন্দ

বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

২. খ্যাতিমান কবি বা সাহিত্যিকের আগমন উপলক্ষে অভিনন্দনপত্র

রাজশাহী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে

নন্দিত কথাসাহিত্যিক জনাব আহমদের আগমনে

শ্রদ্ধার্ঘ্য

হে বরেণ্য অতিথি

বরেন্দ্রভূমি নামে খ্যাত রাজশাহী আজ আপনার পদধূলিতে ধন্য। রবীন্দ্র-স্মৃতিধন্য এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনার শুভাগমনে আমরা আনন্দিত ও গৌরবান্বিত। আপনার সাহচর্য পেয়ে আমরা উৎসাহিত ও উজ্জীবিত। আপনি আমাদের প্রাণঢালা শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রহণ করুন।

হে নন্দিত কথাশিল্পী

বাংলাদেশের সমকালীন কথাসাহিত্যে আপনার অবদান অনন্য। নিম্নবিত্ত মানুষ ও মধ্যবিত্ত জীবন রূপায়ণে আপনার শৈল্পিক দক্ষতা বিস্ময়কর ও চূড়াস্পর্শী। কথাশিল্পী হিসেবে আপনার উন্নত জীবনবোধ, শৈল্পিক চৈতন্য পাঠকদের মুগ্ধ করে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে আপনার রয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা। আজ আপনাকে আমাদের মাঝে পেয়ে আমরা মুগ্ধ ও অভিভূত।

হে ভবিষ্যতের দিশারি

আপনার লেখা আমাদেরকে পথ দেখাবে নতুন পথের। নতুন প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ করে তুলতে আপনার লেখনী কাজ করে চলেছে নীরবে, নিভৃতে। আমাদের বিদ্যালয়ে আপনার আগমন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকুক। আপনি দীর্ঘজীবী হোন। বাংলাদেশের সাহিত্যের আকাশে আপনার সাহিত্যকর্ম চির-উজ্জ্বল সূর্যের মতো আলো ছড়াক। এই আমাদের একান্ত কামনা।

তারিখ: ১২ ডিসেম্বর ২০২১

 শ্ৰদ্ধাসহ,

আপনার গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থীবৃন্দ

রাজশাহী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী