দেশের শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ এবং রাজ্য সরকারের সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে ভারত সরকার ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে। এই শিক্ষানীতি ১৩ মে উভয় সভায় অনুমোদন লাভ করে, একেই বলা হয় জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রি.) বা National Policy of Education (1986)।

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতিতে সমগ্র দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষার মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র স্থাপন করে। জাতীয় বিকাশে এই স্তরের প্রয়োজনীয়তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এইসব কারণে জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

(১) বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানো: মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে পরিচয় করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষেত্রগুলি হল— মানবিক বিষয়, বিজ্ঞান বিষয় ও সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক।

(২) শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টি : শিক্ষার্থীদের মনে জাতীয় মূল্যবোধ তৈরি করার শিক্ষা দিতে হবে। যেমন- জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গঠন, ঐতিহাসিক চেতনাবোধ, নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সম্পর্কে একে অপরকে জানার ও বোঝার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

(৩) বিজ্ঞানসম্মত পাঠক্রম : মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম অত্যন্ত বিবেচনা করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে রচনা করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের মনে বিভিন্ন মূল্যবোধগুলো, যেমন স্বাস্থ্যকর সচেতনতা, সংস্কৃতি বিষয়ক ধারণা ইত্যাদি জাগ্রত হয়।

(৪) উন্নতমানের শিক্ষার সুযােগ : বিশেষ প্রতিভা বা প্রবণতা সম্পন্ন শিশুদের আর্থিক সংগতি বিবেচনা না করে যাতে তারা দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য উন্নতমানের শিক্ষার সুযােগ প্রদান করতে হবে।

(৫) বৃত্তিমূলক শিক্ষা : শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া অর্থাৎ বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা ছিল মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। এই শিক্ষার মাধ্যমে একদিকে যেমন শিক্ষার্থী স্বনির্ভর হবে অন্যদিকে সে প্রয়োজনীয় মানবসম্পদে পরিণত হবে। তাকে দেশের সামগ্রিক উন্নতি কাজে লাগানো যাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে লক্ষ রেখে বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষা সূচির সাহায্যে মূল্যবান মানব শক্তি তৈরি করবে।

(৬) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন : বিদ্যালয়বিহীন অঞ্চলে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা লাভের সুযোগকে সম্প্রসারিত করা হবে।

(৭) নবোদয় বিদ্যালয় স্থাপন : মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রিঃ.) গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল নবোদয় বিদ্যালয় স্থাপন করা। এই বিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে —

(a) অত্যন্ত প্রতিভাবান শিক্ষার্থী যাতে কোনোভাবেই শিক্ষা থেকে বতি না হয়, তাই সমস্ত ব্যয় সরকার বহন করে তাদের উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলেছে।

(b) জাতীয় সংহতির আদর্শকে সামনে রেখে নবোদয় বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে, যেখানে মেধা অগ্রাধিকার পাবে। প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে| এই বিদ্যালয়ে ভরতি হতে পারবে শিক্ষার্থীরা এবং ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে।

(c) বিদ্যালয়গুলিতে সহশিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। 

(d) এই বিদ্যালয় হবে আবাসিক ও অবৈতনিক। শিক্ষার্থীদের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়া দাওয়া, বইপত্র প্রভৃতির খরচ সরকার বহন করবে।

(e) শিক্ষার্থীদের তিনটি ভাষা অবশ্যই শিখতে হবে। যথা— মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, হিন্দি ও ইংরেজি। 

(f) বিদ্যালয়গুলিতে মানবিক বিষয়, বিজ্ঞান ও বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। আধুনিক উপকরণ সহযোগে পড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে।

(৮) নীচু সম্প্রদায় ও প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা : বৃত্তিমুখী শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকবে। সমাজে অবহেলিত, নীচু সম্প্রদায়ের জন্য বৃত্তিশিক্ষার দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য বৃত্তিশিক্ষার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। 

মাধ্যমিক শিক্ষার সংখ্যাগত মান বৃদ্ধি অপেক্ষা গুণগত মান বৃদ্ধি করা এবং দেশের অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন শিশুদের উন্নতমানের মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ সুবিধা দান, সকলের জন্য শিক্ষার সমসুযোগ সৃষ্টির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে NEP-1986 মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে।